বাসস
  ২১ ডিসেম্বর ২০২২, ১২:৫৬

নাটোর মুক্ত দিবস উদযাপন 

নাটোর, ২১ ডিসেম্বর, ২০২২ (বাসস) : নাটোর মুক্ত দিবস আজ  ২১ ডিসেম্বর। বিজয় শোভাযাত্রা, স্বাধীনতা স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ এবং সমাবেশ আয়োজনের মধ্য দিয়ে দিবসটি উদযাপন করা হয়েছে। 
্এ উপলক্ষে সকাল দশটায় শহরে  বিজয় শোভাযাত্রার আয়োজন করে বীর মুক্তিযোদ্ধরা. এবং ও মুক্তিযোদ্ধা  সংসদ সন্তান কমান্ড। নাটোর সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন থেকে শোভাযাত্রা  শহর প্রদক্ষিন শেষে স্বাধীনতা স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে। 
স্বাধীনতা স্মৃতিসৌধে আয়োজিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন নাটোর সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার মোকছেদ আলী মোল্লা, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের আহ্বায়ক ও নাটোর পৌরসভার মেয়র উমা চৌধুরী জলি, সদস্য সচিব সৈয়দ মোস্তাক আলী মুকুল এবং সমাজকর্মী সৈয়দ মর্ত্তোজা আলী বাবলু। সার্বিক কার্যক্রম পরিচালনা করেন সংগঠনের যুগ্ম আহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম নান্টু।
স্বাধীনতা যুদ্ধ শেষে বিজয়ের পাঁচ দিন পর অবরুদ্ধ নাটোরে আত্মসমর্পণ করে পাকিস্তানি হানাদারবাহিনী। তাই স্বাধীনতাকে পাওয়ার জন্যে, বিজয়ের আনন্দ অনুভব চারিদিকে ছড়িয়ে দিতে নাটোরবাসীকে রুদ্ধশ্বাসে অপেক্ষা করতে হয় ২১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। ২১ ডিসেম্বর ১৯৭১ উত্তরা গণভবনে আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করে হানাদার বাহিনী। বিজয়ের উল্লাস ছড়িয়ে পড়ে চারিদিকে। 
২৬ মার্চের কালো রাতে ঢাকায় অপারেশন সার্চ লাইটে অসংখ্য বাঙ্গালি হত্যার পর পাকিস্তান সেনাবাহিনী সারাদেশে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। যোগাযোগ সুবিধার কারণে পাকিস্তান সেনাবাহিনী নাটোরে তাদের ২য় হেড কোয়াটার প্রতিষ্ঠা করে। সমগ্র উত্তর ও দক্ষিণ বঙ্গের যুদ্ধ নাটোর থেকে পরিচালনা করা হতো। শহরের ফুলবাগানে সিও অফিসে স্থাপিত হয় প্রধান কার্যালয়। এছাড়া তৎকালীন গভর্ণর হাউস তথা বর্তমান উত্তরা গণভবন, রাণী ভবানী রাজবাড়ী, আনসার ক্যাম্প, পি.টি.আই এবং নবাব সিরাজ-উদ্-দৌলা কলেজে পাকিস্তান সেনাবাহিনী অবস্থান নেয়। মুক্তিযোদ্ধা নবীউর রহমান পিপলু বলেন, শহরের বিভিন্ন প্রান্তে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী অবস্থান নেওয়ায় নাটোর শহর ১৩ এপ্রিলের পর থেকে কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। ইতোপূর্বে নাটোর টাউন পার্কে খন্দকার আবু আলীর নেতৃত্বে গঠিত সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ এবং নাটোর রিক্রিয়েশন ক্লাব থেকে পরিচালিত মুক্তিযুদ্ধ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের কার্যক্রম মন্থর হয়ে পড়ে। নাটোর শহরে সেনাবাহিনীর শক্ত অবস্থানের কারণে মুক্তিযোদ্ধারা নাটোর ছাড়তে শুরু করেন বলে জানান, মুক্তিযুদ্ধের এ অঞ্চলের অন্যতম সংগঠক এডভোকেট মাজেদুর রহমান চাঁদ। তিনি বলেন, নাটোরের মুক্তিযোদ্ধারা প্রশিক্ষণ নিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। 
মুক্তিযোদ্ধা শেখ আলাউদ্দিন বলেন, ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের পর মুক্তিযোদ্ধারা রণাঙ্গন থেকে নাটোরে ফিরে আসতে শুরু করেন। ১৩ এপ্রিল থেকে ১৫ ডিসেম্বর নাটোর শহর পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে থাকলেও ১৬ ডিসেম্বর থেকে তারা নিজেদের গুটিয়ে নেয়। ১৬ থেকে ২০ ডিসেম্বর উত্তর ও দক্ষিণ বঙ্গের বিভিন্ন স্থান থেকে সেনাবাহিনী নাটোরে আসতে থাকে। নাটোরে আসে মিত্রবাহিনী। 
এরপর আসে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। ২১ ডিসেম্বর তৎকালীন গভর্ণর হাউস তথা বর্তমান উত্তরা গণভবনে ১৪১ জন অফিসার, ১১৮জন জি.ও.সি, পাঁচ হাজার ৪৫০জন সিপাহী এবং এক হাজার ৮৫৬ জন প্যারামিলিশিয়া বাহিনী নিয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নওয়াব আহমেদ আশরাফ আত্মসমর্পণ করেন। আত্মসমর্পণ দলিলে বাংলাদেশের পক্ষে স্বাক্ষর করেন মিত্র বাহিনীর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল রঘুবীর সিং পান্নু। এ সময় অন্যান্যে মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মিত্র বাহিনীর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট জেনারেল লসমন সিং এবং পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অধিনায়ক মেজর জেনারেল নজর শাহ্। ১০ হাজার ৭৭৩টি অস্ত্রসহ জমা হয় ট্যাংক, মর্টার এবং অসংখ্য সাঁজোয়া যান। সকালের আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে কোন সিভিলিয়নের প্রবেশাধিকার ছিলনা বলে জানান, এলাকার ঐ সময়ের যুবক বর্তমানে ব্যবসায়ী সাদেক খামারু। একই মত পোষণ করেছেন বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ নাটোর জেলা শাখার  প্রাক্তন কমান্ডার আব্দুর রউফ। আত্মসমর্পণের খবর ছড়িয়ে পড়ে চারিদিকে। সারাদিন ধরে শহরে চলে বিজয় মিছিল আর মুক্ত আকাশে গান ফায়ার। জয়বাংলা স্লেøাগানে মুখরিত হয় সারা শহর। বিজয়ের আনন্দ ছড়িয়ে পরে চারিদিকে।
বৃহত্তর রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি, বর্তমানে নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস এমপি বলেন, বিজয়ের পাঁচদিন ধরে রুদ্ধশ্বাসে প্রতীক্ষার পরে এ আনন্দ আরো বেশী গৌরবের। 
 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়