বাসস
  ১৯ আগস্ট ২০২২, ১২:৩৫

গোপালগঞ্জে ১১০ কিলোমিটার খাল খনন : বৃদ্ধি পাবে ফসল ও মাছের উৎপাদন

॥ মনোজ কুমার সাহা ॥
টুঙ্গিপাড়া ( গোপালগঞ্জ), ১৯ আগস্ট, ২০২২ (বাসস) :  গোপালগঞ্জে ১১০ কিলোমিটার খাল খননে ফসল ও দেশীয় মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে।
এতে জেলার অন্তত ৫ হাজার হেক্টর জমি জলাবদ্ধতার হাত থেকে রক্ষা পবে। জমিগুলো সেচ সুবিধা ও চাষাবাদের আওতায় আসবে। ফলে এ জেলায় ২৫ হাজার টন ধান বেশি উৎপাদিত হবে বলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা ধারনা করছেন। খালের পানি ব্যবহার করে  বিশাল জনগোষ্ঠি উপকৃত হচ্ছেন। এসব খালে প্রাকৃতিকভাবে দেশী মাছের উৎপাদন ১০০ টন বাড়বে বলে মৎস্য বিভাগ জানিয়েছে।
প্রান্তিক জনগোষ্ঠি এখান থেকে মাছ ধরে তাদের আমিষের চাহিদা পূরণ করবে। বাড়তি মাছ তারা বাজরে বিক্রি করে আর্থিকভাবে লাভবান হবেন।
গোপালগঞ্জ স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. এনহানুল হক জানান, এলজিইডির ক্ষুদ্রাকার পানি সম্পদ উন্নয়ন ২য় পর্যায় প্রকল্পের আওতায় গত অর্থবছরে জেলার ৫ উপজেলায় ১৩টি পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতির মাধ্যমে ২১টি খালের ১১০ দশমিক ৩ কিলোমিটার খনন করা হয়েছে। এতে ব্যয় হয়েছে ২৪ কোটি ৯৭ লাখ ৮০ হাজার ৯০৯ টাকা। এরমধ্যে ১৩ দশমিক ১০৮ কিলোমিটার বেড়ি বাঁধও নির্মাণ করা হয়েছে। এখান থেকে বিশাল জনগোষ্ঠি সুফল পেতে শুরু করেছেন। খালগুলো যাতায়াত, পণ্য পরিবহন কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। খাল পাড়ের মানুষ খালে পানি বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করতে পারছেন। এসব খালে প্রাকৃতিকভাবে দেশীয় জাতের মাছ জন্মেছে। প্রান্তিক জনগোষ্ঠি এখান থেকে মাছ শিকার করে তাদের আমিষের চাহিদা পুরণ করছেন। ১১০ খাল খননের ফলে ৫ উপজেলার অন্তত ৫ হাজার হেক্টর জমির জলাবদ্ধতা দূর হবে। আগামী বোরো মৌসুমে এই জমিগুলো সেচ ও চাষের  আওতায় আসবে। জেলায় ফসলের উৎপাদন বাড়বে। এছাড়া পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতির সদস্যদের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটবে।
সদর উপজেলার বৌলতলী ইউপি চেয়ারম্যান ও তেলিভিটা-ছুছোরডাঙ্গা পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতির প্রধান সুকান্ত বিশ্বাস বলেন, আমার ইউনিয়নের ৯ দশমিক ৭৫ কিলোমিটার দীর্ঘ তেলিভিটা-ছুছোর খাল প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। এতে পণ্যপরিবহন, সেচ সুবিধা ব্যাহত হচ্ছিল। বেশ কিছু জমিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছিল। এখানে মাছের উৎপাদন কমে গিয়েছিল। এলাকার মানুষ পানির কষ্টে ভুগছিলেন। গত এপ্রিল থেকে ৩০ জুনের মধ্যে এলজিইডির অর্থায়নে স্থানীয়দের সম্পৃক্ত করে সমবায় সমিতির মাধ্যমে খালগুলো খনন করা হয়েছে। সমিতির সদস্যরা পানি ব্যবস্থাপনা, সেচ, মৎস্য শিকার সহ সব কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকছেন। সমিতিতে তারা সঞ্চয় জমা রাখছেন। আবার এখান থেকে ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ে তার আয় বর্ধক কাজ করছেন। এ খাল থেকে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার বৌলতলী, সাতপাড় ও কাশিয়ানী উপজেলার সিঙ্গা ইউনিয়নের সিঙ্গা গ্রামের বিশাল জনগোষ্ঠি  উপকৃত হচ্ছে।
ওই সমিতির সদস্য সদর উপজেলার তেলিভিটা গ্রামের  প্রান্তিক জনগোষ্ঠির তপন রায় (৪৫) বলেন, খাল খনন হয়েছে। এখান থেকে গৃহস্থালী কাজে পানি ব্যবহার কতরতে পারছি। খাল থেকে মাছ ধরে খাচ্ছি। অতিরিক্তি মাছ বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতে পারছি। আমার মত আরো অনেকে এখান থেকে মাছ ধরে বাজারে বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছেন। এছাড়া সমিতিতে সঞ্চয় জমা দিচ্ছি। এখান থেকে ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ে আয় বৃদ্ধি করতে পারছি। আমাদের জীবনমান উন্নয়নে এটি ভূমিকা রাখছে।
একই গ্রামের কৃষক অর্জুন বিশ্বাস (৫৫) বলেন, জলাবদ্ধতায় জমি চাষাবাদ করতে সমস্যা হত। পানির অভাবে সেচ সুবিধা ছিল না। অসময়ে বৃষ্টি হলে ধান তলিয়ে নষ্ট হয়ে যেত। এখন সমবায়ের ভিত্তিতে খাল খনন হয়েছে। আমরা এর সুফল পেতে শুরু করেছি। এখন আর এ সমস্যা থাকবে না। আশা করছি আগামী বোরো মৌসুমে ভালভাবে বোরো ধানের আবাদ করতে পারব। অতিরিক্ত ফসল ঘরে তুলতে পারব। আমাদের আর অভাব অনটন থাকবে না।
গোপালগঞ্জ এলজিইডির সমাজ বিজ্ঞানী মো. এমরানুল হক বলেন, পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতির মাধ্যমে অংশিদারিত্বমূলক কর্মকান্ডের অংশ হিসেবে এসব খাল খনন করা হয়েছে। এখান থেকে সমবায় সমিতির সদস্যরা প্রত্যক্ষভাবে সুফল পাচ্ছেন। এছাড়া গ্রামের মানুষ পরোক্ষভাবে উপকার ভোগ করছেন। খাল রক্ষণা-বেক্ষণ করবেন সমবায় সমিতির সদস্যরা। ৩ থেকে ৫ বছর পরপর খালগুলো থেকে পলি অপসারণ ও সংস্কার করা হবে। এ কারণে সমিতির সদস্যরা দীর্ঘকাল এই কার্যক্রমের সাথে সম্পৃক্ত থাকবেন।
গোপালগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. অরবিন্দু কুমার রায় বলেন, খাল খননের সুফল কৃষকরা আগামী বোরো মৌসুমে পাবেন। ৫ হাজার হেক্টর বিলের জমি চাষবাদের আওতায় আসলে প্রতি হেক্টরে কমপক্ষে ৫ টন বোরো ধান ফলবে। সে হিসাবে জেলায় ২৫ হাজার টন ধানের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে বলে আমরা আশা করছি। এতে কৃষক লাভবান হবেন। কৃষির উন্নতি হবে।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ বৈরাগী বলেন, জেলায় এলজিইডি ১১০ কিলোমিটার খাল খনন করেছে। এসব খালে পানি প্রবাহ বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে দেশীয় মাছের প্রজনন বৃদ্ধি পাচ্ছে। জীববৈচিত্র প্রাণ ফিরে পেয়েছে।  এখান থেকে প্রতি বছর কমপক্ষে ১০০ টন দেশীয় প্রজাতির মাছ বেশি উৎপাদিত হবে বলে আমরা ধারণা করছি। এখনই এই মাছ প্রান্তিক জনগোষ্ঠির পাশাপাশি বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের আমিষের চাহিদা পুরণ করছে।

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়