বাসস
  ১৩ আগস্ট ২০২২, ১৮:২৩

দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় জনপদে স্বাস্থ্য সেবার চিত্র পাল্টে দিচ্ছে সামেক হাসপাতাল

॥ মো. দিদারুল ইসলাম ॥
সাতক্ষীরা, ১৩ আগস্ট, ২০২২ (বাসস): সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ (সামেক) হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার পর পাল্টে গেছে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় জনপদের মানুষের স্বাস্থ্য সেবার চিত্র।
সামেক হাসপাতাল সূত্র জানায়, ৫০০ বেডের এই হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে দেড় হাজার রোগী চিকিৎসা সেবা নিতে আসেন। এরমধ্যে ভর্তি হন চার শতাধিক রোগী। লেজার থেরাপির মাধ্যমে কিডনির পাথর অপারেশন, কিডনি ডায়ালাসিস, এন্ডোসকপিসহ বিভিন্ন জটিল রোগের চিকিৎসা হচ্ছে এই হাসপাতালে। দ্রুত সময়ের মধ্যে এখানে এনজিওগ্রাম চালুর প্রক্রিয়া চলছে। এর ফলে ২৭২ কি.মি. নৌ ও স্থল সীমান্তের এই জেলার মানুষের এখন আর দু’একটি জটিল রোগ ছাড়া দেশ-বিদেশে চিকিৎসা নিতে যেতে হচ্ছে না।
২০০৯ সালের ২৩ জুলাই সাতক্ষীরায় ঘূর্ণিঝড় আয়লার দুর্গত এলাকা পরিদর্শনে এসে একটি মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই ঘোষণার মাত্র দুই বছরের মধ্যে সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. আফম রুহুল হক এমপির প্রচেষ্টায় ২০১১ সালে একটি ভাড়া বাড়িতে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজের একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয়। ২০১৭ সালে নিজস্ব নতুন ভবনে শুরু হয় হাসপাতালের আংশিক চিকিৎসা কার্যক্রম। এরপর পর্যায়ক্রমে জরুরি বিভাগসহ অন্যান্য বিভাগগুলোর পাশাপাশি চলতি বছর জুলাই মাসে ৫০০ বেড হাসপাতালের পূর্ণাঙ্গ কার্যক্রম শুরু হয়।
সূত্র আরো জানান, করোনা পরিস্থিতি শুরুর পর সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এখানে ২০২১ সালের ১৬ জুন থেকে ২০০৫ জন করোনা রোগী চিকিৎসা সেবা নিতে ভর্তি হন। এর মধ্যে সুচিকিৎসা পেয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১ হাজার ৮৩৯ জন রোগী। সীমান্তবর্তী জেলা হওয়া সত্বেও সামেক হাসপাতালের চিকিৎসা সেবার কারনে এখানে মৃত্যুর সংখ্যা তুলনামূলক অনেক কম ছিল।
বাবা আব্দুর রাজ্জাককে নিয়মিত চেকআপে নিয়ে আসা সাতক্ষীরার তালা উপজেলার কামাল হোসেন বলেন, “স্ট্রোক জনিত কারণে আমি আমার বাবাকে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করি। যখন নিয়ে এসেছিলাম তখন তার অবস্থা খুবই খারাপ ছিলো। আইসিইউতে ভর্তি করতে হয়েছিলো। আমার মতো গরীব মানুষের পক্ষে বেসরকারি হাসপাতালে আইসিইউতে ভর্তি করা স্বপ্নের ব্যাপার। সরকারি মেডিকেল বলেই আইসিইউতে রেখে চিকিৎসা করা সম্ভব হয়েছে।’ আমার বাবা এখন আগের চেয়ে অনেক সুস্থ।”
সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ থেকে সেবা নিতে আসা গোলম রসুল বলেন, আমার কিডনি সমস্যার কারণে ডায়ালাসিস করতে হয়। সেজন্য আগে ঢাকায় যেতে হতো। এখন সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজে নিয়মিত ডায়ালাসিস করি।
শ্যামনগরের দ্বীপ ইউনিয়ন গাবুরার মিজানুর রহমান বলেন, আগে জটিল রোগের কারণে খুলনা, যশোর, ঢাকা অথবা বিদেশ যেতে হতো। সাতক্ষীরা মেডিকেল হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার পর আমাদের চিকিৎসা নিয়ে আর কোন চিন্তা করতে হয় না। সকল উন্নত চিকিৎসা এখানে পেয়ে থাকি।
সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটির আহবায়ক মো. আনিসুর রহিম বলেন, পদ্মা সেতু চালুর পর সাতক্ষীরা থেকে ঢাকার দুরত্ব প্রায় ২৭০কি.মি. হলেও কোলকাতার দূরত্ব মাত্র ৮০কি.মি.। ফলে জটিল রোগ ছাড়াও অনেকে সাধারণ চেকআপের জন্য আগে ঢাকার পরিবর্তে কোলকাতায় যেতেন। কিন্তু সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার পর সেই প্রবনতা কমে গেছে।
সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অর্থপেডিক চিকিৎসক ডা. মাহমুদুল হাসান পলাশ বলেন, আমরা সবাই সেবার মন-মানসিকতা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। এখানে জনবল সংকটসহ অনেক সমস্যা আছে। সব সমস্যা কাটিয়ে আমরা মানব সেবায় কাজ করে যাচ্ছি। এ হাসপাতালে শুধু সাতক্ষীরা জেলার মানুষ নয় খুলনার পাইকগাছা, কয়রা, যশোরসহ আশে-পাশের এলাকার ৩০ থেকে ৩৫ লাখ মানুষের আস্থা ও বিশ্বাসের জায়গা তৈরী হয়েছে।
সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তত্তাবধায়ক ডা. কুদরত-ই-খোদা জানান, স্বাস্থ্য খাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অঙ্গীকার পুরোটাই এই মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করতে এখানকার চিকিৎসক, সেবিকাসহ সকল কর্মী দিন রাত কাজ করে যাচ্ছেন। কয়েকদিন আগেই হাসপাতালটি পূর্ণাঙ্গভাবে চালু করা হয়েছে। এখন অধিকাংশ ভর্তি রোগীর শতভাগ ওষুধ প্রদান করা হচ্ছে। এখানে ৮ বেডের আইসিইউ, ৮ বেডের সিসিইউ, ১৬ বেডের ডায়ালাসিস ছাড়াও এন্ডোসকপি, লেজার রশ্মির মাধ্যমে কিডনির পাথর অপারেশন করা হচ্ছে। এছাড়া বর্হিবিভাগে দেড় হাজার রোগী চিকিৎসা সেবা নিচ্ছেন। খুব দ্রুত এনজিওগ্রাম চালু হবে।
তিনি বলেন, এখানে চিকিৎসকের ৯৮টি পদ থকেলও আছেন ৪৫ জন, পরিচ্ছন্নকর্মী ১০০জনের বিপরীতে ২০জন। আয়ার ৫০টি পদের বিপরীতে আছেন ১০জন এবং ওয়ার্ডবয়ের ৫০টি পদ থাকলেও সবগুলোই শুন্য। তারপরও সীমিত জনবল নিয়ে প্রতিদিন আউটডোরে গড়ে দেড়হাজার এবং ভর্তিকৃত গড় ৪০০ রোগীর চিকিৎসা সেবা দেয়া হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, জনবল সংকট কাটিয়ে উঠতে পারলে চিকিৎসা ক্ষেত্রে এখানে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত হবে।
 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়