জয়পুরহাট, ৬ জুলাই, ২০২২(বাসস): মুসলিম সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদ-উল-আজহা উদযাপন হবে আগামী ১০ জুলাই। কোরবানীর পশু কেনার পাশাপাশি নতুন ছুরি, চাকু দা, বটি , হাসুয়া কেনার পালা শুরু হওয়ায় ব্যস্ততা বেড়ে গেছে জেলার কামার পাড়ায় গুলোতে।
ঈদুল আযহা উদযাপনে কোরবানীর অংশ হিসেবে পুরাতন দা, বটি, ছুরি, চাকু ধার ( স্থানীয় নাম ’শান’) দেওয়ার পাশাপাশি নতুন দা, বটি, ছুরি, চাকু কেনার ধুম পড়েছে জেলার কামার শালা গুলোতে। কোরবানীর পশু জবাই ও মাংস টুকরা করার জন্য এসব অস্ত্র প্রতিটি পরিবারেই প্রয়োজন হয়ে পড়ে। বছরের অন্যান্য সময় এ অস্ত্র গুলোর তেমন ব্যবহার না থাকায় অধিকাংশ পরিবারে মরিচা ধরে পড়ে থাকে। কোরবানীর সময় এলেই নতুন অস্ত্র তৈরির পাশাপাশি অনেকেই পুরানো গুলো শান দিয়ে প্রস্তুত করেন। ফলে কাজের ধুম পড়েছে কামারদের দোকানে। কামারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সারা বছর তেমন কাজ না থাকেনা। কোরবানীর ঈদের সময় দা, বটি , চাকু, ছুরি, হাসুয়া তৈরি ও বেচা কেনা ভ ালো হবে এমন আশায় বুক বাঁধেন কামাররা। চাহিদা থাকায় ব্যস্ততাও বেড়ে যায়, দিন রাত কাজ করতে হয় । এ শিল্পের প্রধান উপকরণ লোহা, ইস্পাত ও কয়লার দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় অর্থ সংকটে পড়ে এ পেশা ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে কামারদের। আগে ৬০/৭০ টাকায় এক বস্তা কয়লা পাওয়া গেলেও বর্তমানে তা সাড়ে ৫শ থেকে ৬ শ টাকায় কিনতে হচ্ছে। কাজ না থাকায় এ পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় গেছেন অনেকেই।
জেলা শহরের নতুনহাট সড়কের কামার প্রদীপ কর্মকার জানান, কোরবানীর ঈদের সময় আমাদের কাজ বেড়ে যায়। বছরের অন্য সময় গুলোতে কাজ খুবই কম থাকে। শান দেয়ার জন্য প্রকার ভেদে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা লাগছে। উন্নত মানের দা, বটি, ছুরি , চাকু ও হাসুয়া প্রকার ভেদে ৩৫০ থেকে ৬৫০ পর্যন্ত বিক্রি করতে হচ্ছে। লোহার দাম বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি কয়লার দাম বেড়ে যাওয়ায় খুব সীমিত লাভে এ গুলো বিক্রি করতে হচ্ছে। ফলে শুধু কোরবানীর ঈদের বেচা-কেনা করে এ ব্যবসা টিকে রাখা কঠিন বলে জানান কামার সন্তোষ মহন্ত। অন্যান্য বারের তুলনায় এবার বেচা-কেনা কিছুটা ভালো বলে জানালেন কামার সুদেব কর্মকার। মাংস কাটার জন্য ছুরি কিনতে আসা কাশিয়াবাড়ি মহল্লার আব্দুস সালাম জানান, ৮২ হাজার টাকায় গরু কিনে জবাই করার জন্য ছুরি কিনতে এসেছি। বাজারে মাংস কাটার কাঠের গুড়িও বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ৭০০ টাকায়। কালাই উপজেলার পুনট এলাকার কামারপট্টির নির্মল কর্মকার বলেন, গত বছর থেকে এ বছর কয়লা, লোহা, শান দেওয়ার পাথরসহ সব কাঁচামালের দাম বেড়েছে। সেই তুলনায় পারিশ্রমিক বা মজুরির কোনো পরিবর্তন হয়নি। কাঁচামালের দাম বাড়লেও তৈরি পণ্য সেই অনুপাতে দাম বাড়িয়ে বিক্রি করা যাচ্ছে না। সারা বছর কম-বেশি আমাদের কাজ ছিল, এখনো তার চেয়ে একটু বেশি কাজ করতে হচ্ছে। এক কথায় কোরবানীর এ সময়টায় কামারপল্লীর পুরোনো সেই জৌলুস কিছুটা হলেও ফিরে এসেছে বলে মন্তব্য করেন কামারী লিটন কর্মকার।