বাসস
  ০৩ জুলাই ২০২২, ০৯:৫৮

ফেনীতে কোরবানীর পশুর শতভাগ চাহিদা মেটাতে সক্ষম স্থানীয় খামারিরা

ফেনী, ৩ জুলাই, ২০২২ (বাসস) : আসন্ন ঈদুল আযহা উপলক্ষে ফেনীতে স্থানীয় পর্যায়ে লালন পালন করা পশু দিয়ে জেলায় কোরবানীর শতভাগ চাহিদা মেটানো যাবে। জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আনিসুর রহমান জানান, এ বছর জেলায় কোরবানীর পশুর চাহিদা রয়েছে ৭৫ হাজার। আর এজন্য লালন-পালন করা হচ্ছে ৮১ হাজার ৯৮০টি পশু। চাহিদার চেয়ে প্রায় ৬ হাজার ৯৩৮টি পশু অতিরিক্ত রয়েছে।
প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা বলেন, এছাড়া অনেকে ব্যক্তিগতভাবে এক বা একাধিক পশু লালন-পালন করছে। বাজারের সার্বিক পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে তালিকাভুক্ত ৪ হাজার ৯২৬জন খামারি আশেপাশের জেলাগুলোতেও পশু পাঠাতে পারবে।
প্রাণি সম্পদ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, জেলায় কোরবানীর জন্য ২৬ হাজার ১৭৪টি ষাঁড়, ৩২ হাজার ৭৬৩টি বলদ, ৮ হাজার ৩১০টি গাভী, ৩ হাজার ২৩০টি মহিষ, ১০ হাজার ৮৮৩টি ছাগল ও  ৫৭৮টি ভেড়া লালন পালন করা হয়েছে।
আজিজুল হক নামে এক গরু খামারি বলেন, গত ২ মাস ধরে আগের দামের চেয়ে বাড়তি দামে খাদ্য কিনতে হচ্ছে। সে তুলনায় গরুর দাম না পেলে বড় লোকসান গুণতে হবে।
জামাল উদ্দিন নামে এক উদ্যোক্তা বলেন, এবার প্রথমবারের মতো অল্পকিছু গরু নিয়ে খামার দিয়েছি। ঈদকে কেন্দ্র করে খাদ্য, ওষুধ ও শ্রমিকসহ অনেক টাকা পুঁজি বিনিয়োগ করেছি। বাজারে ভারত থেকে যদি গরু না আসে তাহলে ক্ষতির আশংকা নেই।
পরশুরাম উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. ঈসমাইল হোসেন বলেন, উপজেলায় ৫ হাজার গরুর চাহিদা থাকলেও অতিরিক্ত যোগান আছে। তবে একহাজারের মতো ছাগলের চাহিদার বিপরীতে প্রায় ৫ শতাধিক সংকট রয়েছে।
প্রাণি সম্পদ বিভাগ নিরাপদ গো-মাংস উৎপাদনে গবাদি পশু হৃষ্টপুষ্টকরণ করতে খামারিদের নিয়মিত সহায়তা করছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা। তিনি জানান, মাঠপর্যায়ে বিভিন্ন রোগের টিকা, খামারি প্রশিক্ষণ, কারিগরি সহযোগিতা, কেমিক্যাল, হরমোন ও স্টোরয়েড সংক্রান্ত জনসচেতনতা তৈরি করতে নানা কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। এছাড়া দপ্তরের কর্মকর্তারা নিয়মিত মাঠপর্যায়ে খোঁজখবর রাখছেন।
পরশুরাম উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা বলেন, পশুর খাবার পরিবেশন পদ্ধতি, টিকাদান ও বিভিন্ন রোগবালাই সম্পর্কিত বিষয়ে প্রায় আড়াইশ লোককে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। প্রতিমাসে মাঠপর্যায়ে ৭ থেকে ৮টি উঠান বৈঠক হচ্ছে।
অন্যদিকে সীমান্তে অবৈধভাবে ভারতীয় গরু প্রবেশ বন্ধে তৎপর রয়েছে বিজিবি। এ প্রসঙ্গে বিজিবি’র ফেনী ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক লে. কর্ণেল এ কে এম আরিফুল ইসলাম বলেন, সীমান্তে নিয়মিত টহলের সাথে বাড়তি নজরদারি করা হচ্ছে। অবৈধভাবে গরু প্রবেশ বন্ধে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বিএসএফের সাথে কথা হয়েছে। তাদেরকে এ বিষয়ে কঠোর হতে বলা হয়েছে।
গো-খাদ্যসহ প্রয়োজনীয় সামগ্রীর দাম বেড়ে যাওয়ার লাভ নিয়ে শঙ্কা রয়েছে খামারিদের মধ্যে। এ প্রসঙ্গে আমান এগ্রো কমপ্লেক্সের সত্ত্বাধিকারী নাছির উদ্দিন আহমেদ বলেন, খামারের যাবতীয় খরচের যে উর্ধ্বগতি তাতে পুঁজি উঠবে কিনা তা নিয়ে শংকায় আছি। প্রতিকেজি খাদ্যে প্রায় ৩০ টাকার মতো বাড়তি দিতে হচ্ছে। ঈদুল আযহায় এবার বিক্রয়ের জন্য ৮৫টি গরু প্রস্তুত করেছেন বলে জানান তিনি।
ফুলগাজীর সূচনা এগ্রো ফার্মের সত্ত্বাধিকারী জাহিদুল ইসলাম ফয়সাল বলেন, গরুর খাদ্যদ্রব্যসহ অন্যান্য সামগ্রীর দাম তুলনামূলক অনেক বেশি। তারপরও স্বাভাবিক পরিস্থিতি থাকলে অন্তত লোকসান গুণতে হবে না। তিনি বলেন, ক্রেতা চাইলে খামারে এসে গরু কিনতে পারবে। প্রয়োজনে এখন পছন্দ করে ঈদের আগে দাম পরিশোধ করেও নিতে পারবে।
ফেনী জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, এবার ঈদুল আযহায় ফেনীর ৬ উপজেলা ও পৌরসভায় স্থায়ী-অস্থায়ী মিলে ১২৯টি পশুর হাট ইজারা দেয়া হয়েছে। যার মধ্যে ছয় উপজেলায় স্থায়ী ১২টি, অস্থায়ী ১০৯টি এবং পাঁচ পৌরসভায় স্থায়ী ৩টি এবং অস্থায়ী ৫টি হাট বসবে।
গত মঙ্গলবার কোরবানীর পশুর হাটের সুশৃঙ্খল ব্যবস্থাপনা, নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রস্তুতিমূলক সভা করেছে জেলা প্রশাসন ফেনী। সভায় জেলা প্রশাসক আবু সেলিম মাহমুদ-উল হাসান জানিয়েছেন, হাটগুলোতে ইজারাদারসহ ক্রেতা-বিক্রেতাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। শহরে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও উপজেলায় ও ইউনিয়ন পর্যায়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা হাটগুলো তদারকি করবেন।

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়