বাসস
  ২১ জুন ২০২২, ১৬:০৭
আপডেট  : ২১ জুন ২০২২, ২০:৩৮

সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি, ত্রাণ তৎপরতা জোরদার

সিলেট, ২১  জুন, ২০২২ (বাসস) : সিলেট ও সুনামগঞ্জে সুরমা নদীর পানি ধীরে ধীরে নামছে। কুশিয়ারা নদীর পানি এখনও স্থিতিশীল। এর ফলে, সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলার অধিকাংশ এলাকায় সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও ঘরবাড়ি পানিতে নিমজ্জিত থাকায় আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বাড়ি ফিরতে পারছে না মানুষ।
এদিকে, বরাক অববাহিকায় নামা উজানের ঢলের কারণে কুশিয়ারা নদীর পানি গত তিনদিন ধরে বাড়তে থাকায় মৌলভীবাজারের কিছু অঞ্চল ও সিলেটের জকিগঞ্জ, বিয়ানীবাজার, বিশ্বনাথসহ বেশ কয়েকটি উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। আজ কুশিয়ারা নদীর পানি তেমনটা বাড়েনি বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।
এদিকে, সিলেট নগর ও দুই জেলার উঁচু রাস্তাঘাট থেকে পানি নামতে শুরু করেছে। তবে, ঘরবাড়ি এখনও পানির নিচে রয়েছে। ফলে বন্যা কবলিত এলাকায় মানুষের দুর্ভোগ দীর্ঘায়িত হয়েছে। সুনামগঞ্জে পানি কমায় পৌরশহর ও জেলার বিভিন্ন উপজেলার বাজারগুলোতে দোকানপাঠ খোলার খবর পাওয়া গেছে। সিলেট-সুনামগঞ্জ মহাসড়কের বেশিরভাগ এলাকায় পানি নেমেছে। কিছু কিছু স্থানে এখনও পানি রয়েছে। 
পাউবো’র তথ্য অনুযায়ী, আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ১২ ঘণ্টায় সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্টে ৮ সেন্টিমিটার ও সিলেট পয়েন্টে ৭ সেন্টিমিটার কমেছে। একই সময়ে কুশিয়ারা নদীর পানি শেরপুর পয়েন্টে ২ সেন্টিমিটার কমেছে। ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে ১ সেন্টিমিটার এবং অমলশিদ পয়েন্টে ৪ সেন্টিমিটার বেড়েছে।
এখনও সবগুলো পয়েন্টে পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সুরমা নদীর সিলেট পয়েন্টে বিপদসীমার ৩৬ সেন্টিমিটার, কানাইঘাট পয়েন্টে ১০১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। 
এদিকে কুশিয়ারা নদীর অমলসিদ পয়েন্টে ১৮৯ সেন্টিমিটার, শেওলা পয়েন্টে ৬৩ সেন্টিমিটার ও ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে বিপদসীমার ৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
এদিকে জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, সিলেট জেলার ১৩টি উপজেলা, ৫টি পৌরসভা পুরোপুরি এবং সিটি করপোরেশনের ৮০ ভাগ এলাকা বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। এতে পানিবন্দি প্রায় ৩০ লাখ মানুষ। আড়াই লাখ মানুষকে উদ্ধার করে জেলার পাঁচ শতাধিক আশ্রয়কেন্দ্রে তোলা হয়েছে। 
জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত ৬১২ মেট্রিক টন চাল, ৭ হাজার ৯শ’ প্যাকেট শুকনো খাবার ও ৩৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। আরও ৮ হাজার ১১৮ প্যাকেট শুকনো খাবার এবং নগদ এক কোটি টাকা মজুত রয়েছে। 
স্বাস্থ্যসেবা দিতে ১৪০টি মেডিকেল টিম কাজ করছে। চারটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ওয়াটার প্ল্যান্টের মাধ্যমে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত আড়াই লাখ পিস পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট সরবরাহ করা হয়েছে।
সুনামগঞ্জ ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, সুনামগঞ্জ জেলায় এখন পর্যন্ত ৬৭৬ মেট্রিক টন চাল, ১২ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার ও ৮০ লাখ টাকা নগদ বিতরণ করা হয়েছে। 
এছাড়াও সুনামগঞ্জ সদর ও আশপাশের বন্যার্ত ২০ হাজার মানুষের জন্য রান্না করা খিচুড়ি দেওয়া হচ্ছে। আরও ৭০টন চাল ও নগদ ৫০ লাখ টাকা মজুত রয়েছে। 
প্রশাসনের পক্ষ থেকে চাহিদা দেওয়া হচ্ছে, আরও বরাদ্দ পাওয়া যাবে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। 
দুই জেলায় জেলায় পানিবন্দি মানুষের সহায়তায় সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, বিজিবি নিরলসভাবে কাজ করছে।
সেনাবাহিনীর ১৭ পদাতিক ডিভিশনের গণমাধ্যম শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মেজর হাসিব জানান, সিলেটের বন্যাদুর্গত মানুষদের উদ্ধারে সেনাবাহিনীর প্যারাকমান্ড ইউনিটসহ ১৩টি ব্যাটালিয়নের ২৩ প্লাটুন সদস্য সিলেট ও সুনামগঞ্জে উদ্ধার কাজে নিয়োজিত রয়েছেন। ৬০টি নৌকার সাহায্যে উদ্ধার কাজ চলছে। 
জেলা প্রশাসক জানিয়েছেন, নৌবাহিনীর একশ’ সদস্য ১২টি নৌকা নিয়ে সুনামগঞ্জে উদ্ধার তৎপরতা চালাচ্ছেন।
এছাড়াও, দুই জেলায় বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবি ও সামাজিক সংগঠনের পাশাপাশি রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা বিপুল পরিমাণ ত্রাণ সহায়তা অব্যাহত রেখেছেন।
গত ১৫ জুন থেকে ভারতের মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জি ও সিলেটে অব্যাহত বৃষ্টিতে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় সিলেট ও সুনামগঞ্জের সবকটি উপজেলা প্লাবিত হয়। এতে ৫০ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েন বলে ধারণা করা হচ্ছে। ভেঙ্গেপড়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা, মোবাইল নেটওয়ার্ক, বিদ্যুৎ ব্যবস্থা।
 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়