বাসস
  ১০ জুন ২০২২, ০৯:৩৭

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় কাঁঠালের বাম্পার ফলন : খুশি বাগান মালিকরা

// মো. শফিকুল ইসলাম //
 ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ১০ জুন, ২০২২ (বাসস) : জেলায় এই বছর কাঁঠালের বাম্পার ফলন হয়েছে। চলতি বছর প্রায় ২২ কোটি টাকার কাঁঠাল বিক্রি করা সম্ভব হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন কৃষি বিভাগ।
জেলা কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ও কৃষকেরা সঠিক ভাবে বাগানের পরিচর্যা করায় কাঁঠালের বাম্পার ফলন হয়। মৌসুমের শুরুতে ভাল দাম পেয়ে খুশি বাগান মালিকরা। অন্য দিকে দাম হাতের নাগালে থাকায় স্বস্তি প্রকাশ করছেন ক্রেতারা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় ৮৫০ হেক্টর জমিতে কাঁঠালের আবাদ করা হয়েছে। জেলার বিজয়নগর, কসবা এবং আখাউড়া উপজেলার পাহাড়ি টিলাভূমি এলাকার মাটি লাল হওয়ায় সেখানে কাঁঠালের ভালো ফলন হয়েছে।
জেলার বিজয়নগর উপজেলার বিষ্ণুপুর, কালাছড়া, ছতুরপুর, পাহাড়পুর, মেরাসানী, আউলিয়া বাজার, চম্পকনগর, সিঙ্গারবিল, কসবা উপজেলার গোপীনাথপুর, বায়েক, মন্দভাগ, কায়েমপুর এবং আখাউড়া উপজেলার আজমপুর, আমোদাবাদ, রাজাপুর এলাকায় রয়েছে কাঁঠাল বাগান। এসব বাগানে গাছে গাছে ঝুলে আছে ছোট-বড় রসালো কাঁঠাল।
কৃষকরা জানান, পাহাড়ী টিলা ভূমির কাঁঠাল রসালো ও মিষ্টি হওয়ায় বাজারে এসব কাঁঠালের রয়েছে বেশ চাহিদা রয়েছে। প্রতি ১০০ কাঁঠাল ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা দরে বাগান থেকে বিক্রি হচ্ছে। এতে লাভবান হচ্ছেন বাগান মালিকেরা।    
বিজয়নগরের বাগান মালিক আবুল হাসান বলেন, চলতি বছর আমাদের এলাকায় কাঁঠালের ভালো হয়েছে। প্রতিদিনই বাগান থেকে ১০০ থেকে ২০০ কাঁঠাল কাটা হয়। বিভিন্ন এলাকা থেকে পাইকাররা কাঁঠাল নিতে  আমাদের এলাকায় আসেন। তিনি বলেন ফলন ভালো হওয়ার আমরা লাভবান হবো বলে আশা করছি।
একই এলাকার বাগান মালিক আল-আমিন বলেন, অন্য বছরের চেয়ে এ বছর আমাদের এলাকায় কাঁঠালের ফলন ভালো হয়েছে। সাইজেও সুন্দর। তিনি বলেন, প্রায় দেড় মাস আগে বাগানের কাঁঠাল বিক্রি শুরু হয়। আগামী তিন মাস পর্যন্ত বেচা-কেনা চলবে। তিনি বলেন, কাঁঠাল বিক্রি করে ইনশাল্লাহ লাভবান হবো।
গিয়াস উদ্দিন নামে এক কাঁঠাল বিক্রেতা বলেন, আমরা প্রতি ১০০ কাঁঠাল ৬ হাজার টাকা দরে আগেই বাগান কিনে রেখেছিলাম। বর্তমানে প্রতি ১০০ কাঁঠাল ৮ থেকে ৯ হাজার টাকা দরে পাইকারদের কাছে বিক্রি করছি। তিনি বলেন, ব্যবসা ভালো হবে ইনশাল্লাহ।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আনন্দ বাজারের কাঁঠাল বিক্রেতা লোকমান মিয়া বলেন, আমি বিজয়নগর উপজেলার বিষ্ণুপুর, কালাছড়া, ছতুরপুর, পাহাড়পুর, মেরাসানী, আউলিয়া বাজার এলাকা থেকে কাঁঠাল কিনে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এনে বিক্রি করি। প্রতিদিন প্রায় ৩০০ কাঁঠাল বিক্রি করতে পারি। বিজয়নগরের কাঁঠাল অন্য এলাকার কাঁঠালের চেয়ে দেখতে সুন্দর, সাইজে ভালো ও সুস্বাদু। তিনি বলেন, কাঁঠাল বিক্রি করে আমার ভালো লাভ হয়।
আনন্দ বাজারে কাঁঠাল কিনতে আসা যুবক হিমেল বলেন, অন্যান্য এলাকার চেয়ে বিজয়নগরের কাঁঠাল আমাদের কাছে প্রিয়। দামও হাতের নাগালের মধ্যে।
হোসেন মিয়া নামে আরেকজন ক্রেতা বলেন, আমাদের বিজয়নগরের মাটির গুণাগুন ভালো হওয়ার এই অঞ্চলের কাঁঠাল খুব মিষ্টি হয়। সেজন্য আমরা এই এলাকার কাঁঠাল বেশি পছন্দ করি। বাজারে কাঁঠালের দামও সহনীয়, সেজন্য কিনতে আসলাম।
এই ব্যাপারে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক সুশান্ত সাহা বলেন, চলতি বছর জেলায় ৮৫০ হেক্টর জমিতে কাঁঠালের আবাদ করা হয়েছে। জেলার বিজয়নগর, কসবা এবং আখাউড়া উপজেলায় কাঁঠালের আবাদ ভালো হয়। তিনি বলেন, চলতি বছর কাঁঠালের উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ১০,২৬০ টন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ও ফলন ভাল হওয়ায় লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। তিনি বলেন, জেলায় প্রায় ২২ কোটি টাকার কাঁঠাল বিক্রি করা সম্ভব হবে বলে আশা করছি।

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়