বাসস
  ২২ মে ২০২২, ১০:০৬

ক্ষেতের কাছেই আড়ৎ হওয়ায় মরিচের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছন ঠাকুরগাঁওয়ের চাষিরা

॥ মো. আসাদুজ্জামান আসাদ ॥
ঠাকুরগাঁও, ২২ মে, ২০২২ (বাসস):  জেলার মধুপুর গ্রামের মরিচ চাষিদের ন্যায্যমূল্য পাওয়া নিয়ে যে সংকট ছিল; তা কেটে গেছে। এখন গ্রামেই ঘরের কাছে আড়ৎ হওয়ায় ন্যায্যমূল্য পেয়ে খুশি মরিচ চাষিরা। ক্ষেত থেকে সরাসরি আড়তে নিয়ে মরিচ বিক্রি করতে পারছেন তারা। এ ছাড়া আড়তের টোল-মাকামের দর কষাকষি নিয়েও ঝামেলা কমেছে। 
সরেজমিনে আড়তে গিয়ে এসব তথ্য পাওয়া যায় কৃষকদের কাছ থেকেই। তারা জানান, মহাজনহাটে দুটি, লালাপুর জঙ্গলবাড়ী গ্রামের তিন রাস্তার মোড়ে একটি, কাঁচনা মধুপুর গ্রামের পুকুরপাড়ে দুটি এবং মধুপুর গ্রামের ভেতরে দুটি স্থানে প্রতিদিন আড়ৎ বসছে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা এখান থেকে মরিচ কিনে ঢাকাসহ বাইরের ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করছেন। আড়ৎগুলোতে প্রতিদিন ৫০ থেকে ৬০ লাখ টাকার মরিচ কেনাবেচা হচ্ছে।
মধুপুর গ্রাম ঠাকুরগাঁও বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার চাড়োল ইউনিয়নে। অতীতে গ্রামের স্থানীয় কৃষকদের মরিচ বিক্রি করতে চার থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে বালিয়াডাঙ্গী আড়তে যেতে হতো। শহরে মরিচ বিক্রি করতে পাড়ি দিতে হতো অন্তত ২৫ কিলোমিটার রাস্তা। আর এখন উপজেলার মহাজনহাট থেকে মধুপুর গ্রাম পর্যন্ত তিন কিলোমিটারের রাস্তায় সাত স্থানে প্রতিদিন আড়ৎ বসিয়ে কাঁচা মরিচ কেনাবেচা হচ্ছে। 
কৃষকরা জানান, ক্ষেত থেকে তুলেই তারা ন্যায্যমূল্যে মরিচ বিক্রি করতে পারছেন। দিনের টাকা দিনেই উঠিয়ে ফেলছেন তারা। আড়তের টোল, মাকামের দর কষাকষি না থাকায় মহাজনহাট থেকে মধুপুর গ্রাম হাটগুলোয়ে মরিচ বিক্রি বাড়ছে।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানালেন, চাষি থেকে সরাসরি মরিচ কেনায় তাদেরও দামের হিসেব বেশ ভালো হচ্ছে। আগে বিভিন্ন অসুবিধা দেখা দিলেও এখন তা নেই। সতেজ ও টাটকা অবস্থায় মরিচ কিনেই তারা ঢাকার ব্যবসায়ীদের কাছে পাঠিয়ে দিতে পারছেন। পরিবহনেরও কোনো সমস্যা নেই। কৃষক ও ব্যবাসায়ীদের মতে, প্রযুক্তি হাতের মুঠোয় চলে আসায় নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। যার ফলে চাষিরা তাদের ফসলের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে পারছেন।
মধুপুর গ্রামের অভ্যন্তরে সবচেয়ে বড় আড়ৎটি স্থানীয় ব্যবসায়ী জয়নুল হক, আজিজুল হক, দুলালসহ পাঁচজনের। তারা জানান, সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত তাদের আড়তে প্রায় ৬ হাজার কেজি মরিচ কেনা হয়। এসব মরিচ বিকেল ৪টার মধ্যে ট্রাকে তুলে পাঠিয়ে দেয়া হয় ঢাকায়। ঢাকার ব্যবসায়ীরা প্রতি কেজিতে যা কমিশন দেন, তা নিয়েই আড়তের সবাই খুশি। 
রফিকুল ইসলাম নামে এক কৃষক মধুপুর গ্রামের আড়তে মরিচ বিক্রি করতে এসেছেন। ২০ কেজি মরিচ বিক্রি করছেন তিনি। জানান, ক্ষেতের মরিচ সরাসরি বালিয়াডাঙ্গী কাঁচামালের আড়ৎ বা ঠাকুরগাঁও রোড আড়তে নিতে গেলে তার ১০০ টাকা গাড়ি ভাড়া ও আড়তে মাকাম নিতে ৯০ টাকা টোল দিতে হতো। সময় ব্যয় হতো ৩ ঘণ্টার মতো। এখন সময় ও অর্থ দুটোই কম লাগছে। তার মরিচ বিক্রি করে ভালো লাভ পাচ্ছেন তিনি।
ভিডিও কলের মাধ্যমে ঢাকার ব্যবসায়ীরা মরিচ দেখে কিনে নিয়ে যান বলে জানান ব্যবসায়ী শহিল্লাহ। তিনি জানান, সকাল ৮টার দিকে তাদের এলাকায় আড়ৎ বসে। এ সময় তারা ঢাকার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে মরিচের দাম নেন। সেই দামে স্থানীয় চাষিদের কাছে থেকে মরিচ কিনে গাড়ি করে রাজধানীতে পাঠিয়ে দেন।
এ বিষয়ে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুবোধ চন্দ্র রায় বলেন, সীমান্ত এলাকার কৃষকরা এখন প্রযুক্তিনির্ভর কৃষিতে অভ্যস্ত হয়ে উঠছে। প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বাজারদর জানতে পারছে। বাড়ির পাশে ফসল বিক্রি করে ন্যায্যমূল্য পাওয়ার পাশাপাশি বাড়তি খরচ থেকে রেহাই পাচ্ছেন। এতে তাদের আয় ভালো হচ্ছে। 
এ ব্যাপারে ঠাকুরগাঁও জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবু হোসেন জানান, জেলার বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার মধুপুর ইউনিয়নে পর্যাপ্ত মরিচের চাষ হয়। শুধু মরিচের চাষই নয়, স্থানীয় বাজারে মরিচের আড়ৎ গড়ে ওঠায় এখানে আড়তের সুবিধাদি কৃষকরা ভোগ করছেন। ন্যায্যমুল্য মরিচ বিক্রি করে খুশি তারা। এবার আবহাওয়া ও পরিবেশ ভালো থাকায় মরিচের ভালো ফলন হয়েছে। আর জেলা ও উপজেলা কৃষি অফিস মধুপুরসহ জেলার সর্বত্র কৃষকদের কৃষি সহায়তা ও পরামর্শ দিয়ে আসছে। ভবিষ্যতে মধুপুরের এই আড়ৎ আরো বড় পরিসরে মরিচের ব্যবসায় কন্দ্রে হিসেবে পরিচিতি ও প্রতিষ্ঠা লাভ করবে বলেও আশা প্রকাশ করেন এ সিনিয়র  কৃষিবিদ।
 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়