বাসস
  ৩১ মার্চ ২০২২, ১৩:২৭

নীলফামারীর তিস্তা সেচ প্রকল্প এলাকায় বোরোর আবাদ

নীলফামারী, ৩১ মার্চ, ২০২২ (বাসস) : জেলার তিস্তা সেচ প্রকল্প এলাকায় দিগন্তজোড়া বোরো আবাদ। এবারে প্রকল্পটির পানি পর্যাপ্ততা সুযোগ ঘটিয়েছে ও দিগন্তজোরা আবাদের।
পানির এমন পর্যাপ্ততায় চলতি বোরো মৌসুমে ৫৩ হাজার জমিতে সেচ সুবিধা দিতে পারছে প্রকল্পটি। এতে করে নীলফামারীসহ পার্শ্ববর্তী রংপুর ও দিনাজপুর জেলার ১২ উপজেলায় বাড়তি উৎপাদন হবে তিন লাখ ৮ হাজার মেট্রিক টন ধান। যার বাজার মূল্য প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকা।
ওই ১২ উপজেলার মধ্যে রয়েছে নীলফামারীর সদর, ডিমলা, জলঢাকা, কিশোরগঞ্জ ও সৈয়দপুর উপজেলা, দিনাজপুর জেলার চিরিরবন্দর, পার্বতীপুর, খানসামা উপজেলা, রংপুর জেলার সদর, তারাগঞ্জ, বদরগঞ্জ ও গঙ্গাচড়া উপজেলা। প্রকল্পের টারশিয়ারী ও সেকেন্ডারী মিলে ৭৬০ কিলোমিটার সেচ খালের মাধ্যমে এসব উপজেলায় সেচ প্রদান করা হচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, এবার সর্বোচ্চ পরিমান জমিতে সেচ সুবিধা প্রদান করা হচ্ছে। পরীক্ষামূলক সেচের মাধ্যমে প্রকল্পটি শুরু হয় ১৯৯৫-৯৬ অর্থ বছরে। এর পর ২০০৩ সাল থেকে সীমিত আকারে কার্যক্রম শুরু করে ২০১৬ সালে বোরো মৌসুমে ১০ হাজার হেক্টর, ২০১৭ সালে ৮ হাজার হেক্টর, ২০১৮ সালে ৩৫ হাজার হেক্টর, ২০১৯ সালে ৪০ হাজার হেক্টর, ২০২০ সালে ৪১ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ প্রদান করা হয়।
২০২১ সালে ৪০ হাজার হেক্টর জমিতে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে পানির পর্যাপ্ততায় ৫৩ হাজার হেক্টরে সেচ প্রদান করা হয়। ২০২২ সালে ৫৩ হাজার হেক্টর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে  সেচ অব্যাহত রাখা হয়েছে। প্রতি বিঘা জমির সেচ সুবিধার জন্য কৃষদেরকে পরিশোধ করতে হয় ১৬০ টাকা। এতে করে প্রতি একর জমির সেচের মূল্য পরিশোধ করতে হয় ৪৮০ টাকা। আর ওই সেচ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ১২ উপজেলায় কাজ করছে ২৪২টি পানি ব্যবস্থাপনা সমিতি।
প্রকল্পের পর্যাপ্ত পানি পেয়ে খুশি এলাকার কৃষক। তারা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন বোরো আবাদে।
জেলা সদরের রামনগর ইউনিয়নের বাহালীপাড়া গ্রামের কৃষক মোখলেছার রহমান (৫২) বলেন,‘এবার সময়মতন পানি পাইছি তিস্তার ক্যানেলোত। সুবিধা পায়া তিন বিঘা জমিত ধান আবাদ করিনু। ক্যানেলের পানির আবাদোত খরচ কম হওয়ায় লাভ বেশী হয়।’
একই গ্রামের কৃষক জগদীশ চন্দ্র রায় (৬৫) প্রকল্প এলাকায় বোরো আবাদ করেছেন আড়াই বিঘা জমিতে। তিনি বলেন, ‘প্রত্যেক বছর পানি নিয়া সমস্যা হয়, এইবার আর পানির সমস্যা নাই। সময়মতন পানি পায়া ভালো ফলনের আশা করেছ।’
নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার পানি ব্যবস্থাপনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম বলেন,‘জানুয়ারি মাসের প্রথম থেকে সেচ কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। সেচের পানিতে কৃষরা নির্বিঘেœ আবাদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। মাঠে চারা রোপণের পর এখন পরির্চার কাজে ব্যস্ত কৃষক।’
তিনি বলেন,‘সেচ যন্ত্র চালিয়ে বোরো আবাদে প্রতি একরে খরচ হয় পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকা। সেখানে সেচ প্রকল্পের পানিতে আবাদে খরচ হচ্ছে মাত্র ৪৮০ টাকা। খরচ কম হওয়ায় লাভবান হচ্ছেন কৃষক।’
পানি উন্নয়ন বোর্ড ডালিয়া ডিভিশনের কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা রাফিউল বারী জানান, তিস্তা ব্যারাজ সেচ প্রকল্পের রিজার্ভারে ৩ হাজার কিউসেকের মতো পানি পাওয়া যাচ্ছে। যা দিয়ে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার জমিতে সেচ সুবিধা প্রদান করা হচ্ছে। পানির যথাযত ব্যবহার নিশ্চিৎ করতে ২৪২টি পানি ব্যবস্থাপনা সমিতির সদস্যদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। ভালো ফলনের জন্য পানির ব্যবহার নিশ্চিত করা হচ্ছে।
তিনি বলেন,‘এবছর এক হাজার ৪২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে তিস্তা সেচ প্রকল্পের পুনর্বাসন ও সম্প্রসারণ কাজ শুরু করা হয়েছে। সময়মত কাজ শেষ হলে আগামীতে এ প্রকল্পের আওতায় এক লাখ ৩ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ প্রদান সম্ভব হবে।

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়