বাসস
  ১৫ মার্চ ২০২২, ১২:১১

বঙ্গবন্ধু আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরে বলেন, রাজনীতিতে ভাইয়ের অভাব হয় না : বীর মুক্তিযোদ্ধা আলী আহমেদ খান

॥ মো. জাহাঙ্গীর কবির ॥
মাদারীপুর, ১৫ মার্চ, ২০২২ (বাসস) : জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শৈশব, কৈশোর ও রাজনৈতিক জীবনের অসংখ্য স্মৃতি বিজড়িত এই জনপদ। ঘটনাবহুল অনেক সোনালি দিন কেটেছে এখানে। শুধু শৈশব স্মৃতিই নয়, ছেলেবেলা লেখাপড়া করেছেন মাদারীপুর ইসলামিয়া হাই স্কুলে। তাই, ছাত্র জীবনের কিছু সময়, ছাত্র রাজনীতির স্মৃতিময় বেশ কিছু দিন, রাজনীতির মাঠে, বন্ধুত্ব এবং আত্মীয়তার সুবাদে এই জনপদে তাঁর স্মৃতি রয়েছে নানা অবস্থায় বিভিন্ন স্থানে। 
বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা আলী আহমেদ খান বলেন, ‘আমার প্রিয় নেতা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতি বিজরিত মাদারীপুরে তো কতো স্মৃতিই আছে, সবটা আমার মনেও নেই, অনেক দিনের কথা; আর তা ছাড়া অসুখে-বিসুখে কেমন যেনো সবকিছু ঝাপসা মনে হয়। 
 পঞ্চাশ ও ষাটের দশকের ঘটনাবহুল দিনগুলোয় মাদারীপুর মহকুমার রাজনীতির মাঠ ছিল উত্তপ্ত। এ সময়ের মধ্যে বেশ কয়েকবার বঙ্গবন্ধু এখানে এসেছেন। তাঁর বিশকিছু স্মৃতিও আছে। এ সব এখন মনে করতে পারছি না। 
স্মৃতি হাতরে খান বলেন, সত্তরের দশক এবং এর পরের ৩/৪ টি ঘটনার কথা স্মৃতিতে ভেসে উঠলেও তা অষ্পষ্ট। ১৯৬৯ সালে আগরতলা মামলা প্রত্যাহারের পর কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে তিনি সারা বাংলায় সাংগঠনিক সফর শুরু করেন। এই সফরের অংশ হিসেবে মনে হয় (তারিখ বলতে পারেননি) শীত শেষে মার্চ-এপ্রিলে মাদারীপুরে আসেন। বিকেলে নাজিমউদ্দিন কলেজ মাঠে জনসভায় ভাষন দেন। সভা পরিচালনা করেছিলেন সাংবাদিক আমির হোসেন। তাঁর জনসভায় এত লোক জমায়েত হয়েছিল; তা ভাবা যায় না। 
  তিনি বলেন, সেদিন বঙ্গবন্ধুর খাবারের আয়োজন করা হয় আমিন উদ্দিন জমাদারের চরমদনরায় এলাকার শহরের বাড়িতে। ফেরদৌস জমাদার তখন ছাত্রনেতা। এক বাপের এক ছেলে হওয়ার কারণে তিনি খুব একটা মাঠে থাকতেন না। তবে, দলীয় কর্মকান্ডে টাকা-পয়সা দিতেন। সেদিন খাবার পরিবেশন করেছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা আবদুর রাজ্জাক বেপারী। খাওয়া-দাওয়া শেষে রাজনৈতিক নানা বিষয়ে আলোচনা করেন। রাতে শিবচর থানার নেতারা আসেন। শিবচর থানার নেতা-কর্মীরা দু‘গ্রুপে বিভক্ত ছিল। বঙ্গবন্ধু আলোচনার মাধ্যমে শিবচরের মোসলেম খান ও মান্নান খানের দু‘গ্রুপকে এক করে দেন। পরদিন সকালে টুনু মান্নানের বাড়িতে নাস্তা করে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর সফর সঙ্গীরা চলে যান।
  আমার যদ্দূর মনে পড়ে বঙ্গবন্ধু ১৯৭০ সালের নির্বাচনের আগে, নভেম্বর মাসে নির্বাচনী প্রচারের জন্য তাঁর সফর সঙ্গীদের নিয়ে মাদারীপুরে আসেন। সে সময় বঙ্গবন্ধুর সফর সঙ্গী জাতীয় চার নেতা তাজউদ্দিন আহমেদ, মুনসুর আলী, কামরুজ্জামান সৈয়দ নজরুল ইসলাম ছিলেন। সেদিন আচমত আলী খান, ফণিভূষণ মজুমদার, টুনু মান্নান, স্টুয়ার্ড মুজিব, আবদুল লতিফ হাওলাদার, মোখলেছুর রহমান বাদশা খানসহ আরো অনেকে উপস্থিত ছিলেন। 
 তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর জন্য পরদিন সকালের নাস্তার আয়োজন করা হয় বাদশা খানের চরমুগরিয়ার ডালপট্টি বাড়ির মিলের গদিঘরে। সেদিন অনেক কর্মী সে বাড়িতে নাস্তা করেছিলেন। বাদশা খানের গদিঘরে আমরা কয়েকজন কর্মী বঙ্গবন্ধু ও তাঁর সফর সঙ্গীদের নাস্তা পরিবেশন করছিলাম। কি বলবো সেদিনের কথা; আমি প্লেটে করে একটা ডিমপোচ্ তাঁর সামনে রাখতেই তিনি বুকে হাত রেখে বলে উঠলেন, ‘তোরা কি খাওয়াবি আমাকে, ওরা আমাকে শেষ করে দিয়েছে। আমার কিছু রাখে নাই। সেদিন তাঁর এ কথার মর্ম বুঝেছিলাম যে, কারাগারে ওনার ওপর কতো ভয়াবহ নির্যাতন করা হয়েছিল। এ ছাড়া আর কি বুঝবো বলেন? একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে স্বাভাবিক হয়ে আলী আহমেদ খান আবার বললেন, নাস্তা খাওয়ার এক পর্যায়ে হাস্যরসের ছলে বঙ্গবন্ধু মোস্তাক আহম্মদকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘খান্ খান্ মোস্তাক ভাই পেট ভরে নাস্তা খান্; এটা আমার বাড়ি। লজ্জা করে খাবেন না।’ 
নাস্তা খাওয়া শেষ হলে ফণিদা আমার হাত ধরে বঙ্গবন্ধুর সামনে নিয়ে বলেন, ‘ওর নাম আলী আহমেদ খান, ও আপনার একজন অন্ধভক্ত এবং আমাদের দলীয় ভাই ও কর্মী। 
তখন বঙ্গবন্ধু আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরে বলেন, ‘রাজনীতিতে ভাইয়ের অভাব হয় না। এখানে লক্ষ-লক্ষ, কোটি-কোটি ভাই পাওয়া যায়।’ সেই থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িয়ে আজ পর্যন্ত আছি, বলেন আলী আহমেদ খান।

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়