॥ দিলরুবা খাতুন ॥
মেহেরপুর, ৩ মার্চ ,২০২২ (বাসস) : গত বছরের তুলনায় মেহেরপুরে ভুট্টা আবাদ বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্য ফসলের চেয়ে অধিক লাভজনক হওয়ায় মেহেরপুরের চাষিরা ঝুঁকে পড়েছেন ভুট্টা চাষে। মেহেরপুর জেলার বিভিন্ন গ্রামের মাঠ ঘুরে দেখা গেছে মাঠে মাঠে ভুট্টা চাষের সমারোহ। এক সময় যেখানে ধান, গম, তামাক চাষ হতো এখন সেখানে চাষিরা ভুট্টার চাষ করছেন। ভালো ফলন, ফসলের চাহিদা এবং ভুট্টা গাছ থেকে জ্বালানির চাহিদা পূরণ হওয়ায় মেহেরপুরের চাষিরা ভুট্টা চাষ করছেন। জেলার তামাক চাষিরা তামাকের আবাদ কমিয়ে ভুট্টা আবাদের দিকে ঝুঁকছে। গত কয়েক বছর হুইট ব্লাস্ট রোগে গমের আবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে এবং তামাক চাষের দিকে ঝুঁকে পড়লেও মাটির উর্বরা শক্তি হ্রাস পাওয়া এবং পরিবেশের ওপর বিরুপ প্রতিক্রিয়া বুঝতে পেরে ভুট্টা আবাদের দিকে ঝুঁকছেন চাষিরা। কৃষি অফিসের সহযোািগতা ও পরামর্শ নিয়ে ভুট্টার ভ ালো ফলনের আশা করছেন জেলার চাষিরা। প্রতিটি গাছে ৩-৪ টি করে ভুট্টার মোচা হয়েছে। ফসল উত্তোলনের আগে দাম নির্ধারণের দাবি জানিয়েছেন ভুট্টা চাষিরা। ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা বিঘা প্রতি খরচ করে ফলন পাওয়া যায় ৩০-৪০ মণ। কার্তিক-চৈত্র মাস পর্যন্ত মূলত এটি ছয় মাসের ফসল। একই সময় ধান আবাদ করে ভুট্টার সমপরিমাণ লাভ মেলেনা বিধায় অনেক চাষিই এখন ভুট্টা আবাদ করছেন।
সদর উপজেলার বন্দর গ্রামের ভুট্টাচাষি রমজান আলী জানান, আমাদের এলাকায় ভুট্টা আবাদের তেমন একটি প্রচলন চাহিদা ছিলনা। বর্তমানে গো-খাদ্য, মাছের খাবার ও পোল্টি খাবার হিসেবে ভুট্টার ব্যাপক চাহিদা। আমি এবছর প্রথম দুইবিঘা জমিতে ভুট্টা আবাদ করেছি। প্রতিটি গাছে ভুট্টার মোচা হয়েছে ৩/৪ টি করে। ভুট্টা আবাদ করে গত বছর লাভবান হওয়ায় এবছরও ভুট্টা আবাদ করেছেন একই গ্রামের সুরুজ আলী।
গাংনী উপজেলার ভোমরদহ গ্রামের কৃষক দেলওয়ার হোসেন জানান- কয়েক বছর গম আবাদে ফলন বিপর্যয় ঘটেছে। এবার আর ঝুুঁকি না নিয়ে ভুট্টা আবাদ করেছি।
মুজিবনগর উপজেলার রশিকপুর গ্রামের ভুট্টা চাষি মাসুম রেজা জানান- বিঘাপ্রতি ভুট্টা চাষে তার খরচ হয় ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা। ৩৫ থেকে ৪০ মণ ফলন পাবেন বলে ধারণা করছেন তিনি। ফলে তার ১৮ থেকে ২০ হাজার টাকা লাভ হবে বলে আশা করছনে তিনি।
সদর উপজেলা কৃষি অফিসার নাসরিন পারভিন জানান- ভুট্টা একটি লাভজনক আবাদ হিসেবে মেহেরপুর জেলায় পরিচিতি পাচ্ছে। সরকারের বিভিন্ন সহযোগিতা এবং কৃষি প্রণোদনার মাধ্যমে এবছর ভুট্টা আবাদ বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলন ভালো করতে কৃষি বিভাগ থেকে কৃষকদের বিভিন্ন পরামর্শ দেয়া হচ্ছে । আশা করি কৃষকরা লাভবান হবে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এবারে সাড়ে ৪ হাজার হেক্টর জমিতে ভুট্টার আবাদ হয়েছে। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি। হেক্টর প্রতি ফলন নির্ধারণ করা হয়েছে ৯ মেট্রিক টন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক স্বপন কুমার খাঁ জানান- ভুট্টা চাষে কৃষি বিভাগ থেকে চাষিদের উদ্বুদ্ধকরণসহ ক্ষতিকারক কীট-পতঙ্গ দমনে বিভিন্ন পরামর্শ দেয়া হয়। যার ফলে জেলার কৃষকরা ভুট্টা চাষে আরও বেশি উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন।