বাসস
  ১৯ জানুয়ারি ২০২২, ১৫:০৫

প্রজনন স্বাস্থ্য সেবা বাড়াতে সহায়ক ভুমিকা রাখছে কমিউনিটি ক্লিনিক

ঢাকা, ১৯ জানুয়ারি, ২০২২ (বাসস) : সাতাশ বছর বয়সী আমেনা কাজ করেন সাভারের একটি গার্মেন্ট কারখানায়। দু’ বছর আগে এসেছেন গাইবান্ধার এক প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে কাজের সন্ধানে। সাভারে নিয়ে আসেন তারই গ্রামের এক সমবয়সী মেয়ে। দু’জনই পড়েছেন ক্লাশ ফাইভ পর্যন্ত। মূলত দরিদ্র পরিবারের সন্তান হওয়ায় পড়ালেখা আর এগোয়নি।
এখন গার্মেন্ট কারখানায় কাজ করে স্বপ্ন দেখছেন তার ছেলে-মেয়েদের সুশিক্ষিত হিসেবে গড়ে তুলবেন। কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে তার শরীর ভালো যাচ্ছে না। বিশেষ করে মাসিকের সময় সে খুবই অসুস্থ হয়ে পড়ছে। আবার প্রায় সময়ই প্র¯্রাবের  সময় খুব জ্বালাপোড়া হয়। তলপেটও ব্যথা করে। কিন্তু বিষয়টি মেয়েলি হওয়ায় কারো সাথে আলোচনাও করতে পারছেন না। 
এক পর্যায়ে কষ্ট সহ্য করতে না পেরে যে সমবয়সী মেয়েটি তাকে সাভার নিয়ে আসে তার সাথে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে। মেয়েটি সব শুনে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্্ের নিয়ে যান আমেনাকে। সেখানে ডাক্তার বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর বুঝতে পারেন তার প্রজনন সমস্যা হয়েছে। আর এই কারনেই তার শারিরীক সমস্যা হচ্ছে।
প্রজনন স্বাস্থ্য সেবা নিয়ে কাজ করা ডা. নূজহাত বলেন, মূলত গার্মেন্টসহ বিভিন্ন কারখানায় কর্মরত নারীদের প্রজনন স্বাস্থ্য সেবা অনেকটা উপেক্ষিত। এখানে কর্মরত নারীদের সিংহভাগই আসে দরিদ্র জনগোষ্ঠি হতে। তারা মাসিকের সময় তেমন কোন ন্যাপকিন বা পরিষ্কার কাপড় ব্যবহার করে না। যার ফলে এসকল নারীরা এ ধরেনর ইনফেকশনে আক্রান্ত হয়।
মহিলা শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় পোশাক শিল্পে কর্মরত নারীদের জন্য সাভারে কর্মজীবী নারী হোস্টেল ও শিশুদের জন্য ১৬টি ডে কেয়ার সেন্টার পরিচালনা করছে। তাদের শিশুর স্বাস্থ্য এবং পুষ্টির উন্নয়নে মাসে ৮০০ টাকা করে তিন বছর মেয়াদে কর্মজীবী ল্যাক্টেটিং মা ভাতা দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৩ সালে প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় নারী উন্নয়ন, মা ও শিশু স্বাস্থ্য, ফ্যামিলি প্লানিং বিষয়গুলো অন্তর্ভূক্ত করেন। ইউনিয়ন পর্যায়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা সেবা কেন্দ্র স্থাপন করে জনগণের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেন। বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জেন্ডার সমতা অর্জনের মাধ্যমে নারী উন্নয়ন ও নারীর ক্ষমতায়নে বিশ্বে রোল মডেল সৃষ্টি করেছেন। বর্তমানে ১৫ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে মা ও শিশু স্বাস্থ্য সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।
ইন্দিরা বলেন, নারী অধিকার মানবাধিকার। যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য সেবার অধিকার, নারীর অধিকার। একজন নারীর কখন বিয়ে হবে, কার সঙ্গে বিয়ে হবে, কখন সন্তান হবে, কতজন সন্তান হবে, পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি ব্যবহার এবং নিরাপদ মাতৃত্ব এগুলো নারীর সাধারণ অধিকার।
তিনি বলেন, প্রজনন স্বাস্থ্য বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি ও জেন্ডার বেজড ভায়োলেন্স প্রতিরোধে সরকারের সঙ্গে জনপ্রতিনিধি, কমিউনিটি লিডার ও এনজিওগুলোর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে সারাদেশে আট হাজার কিশোর-কিশোরী ক্লাব স্থাপন করা হয়েছে। এসব ক্লাবের মাধ্যমে কিশোর-কিশোরীদের যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য এবং নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে সচেতন করা হচ্ছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়