বাসস
  ০৪ জানুয়ারি ২০২২, ১৭:২৭
আপডেট  : ০৪ জানুয়ারি ২০২২, ২৩:০৪

দিনাজপুরসহ ৩ জেলায় কোল্ড ইনজুরির আশংকায় বোরো বীজতলা : বিশেষজ্ঞদের পরমর্শ

দিনাজপুর, ৪ জানুয়ারি, ২০২২ (বাসস) : উত্তরের জনপদ বৃহত্তর দিনাজপুরসহ ৩ জেলায় বোরো ধানের বীজতলা রক্ষায় কৃষকদের উৎকণ্ঠায় দিন কাটাতে হচ্ছে। কোল্ড ইনজুরির কারনে বীজতলার ক্ষতি হলে কৃষকদের বেকায়দায় পড়তে হবে। তবে কৃষি বিভাগ আশার বাণী শুনিয়েছে। গম ও ভুট্টা চাষে কৃষকদের ব্যস্ততাও রয়েছে এখন।
দিনাজপুর জেলা কৃষি অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক প্রদীপ কুমার গুহ আজ জানান, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড় জেলার চলতি মৌসুমে হাজার-হাজার কৃষক বোরো গম ও ভুট্টা চাষ নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। তবে শীত প্রবণ ৩ জেলায় গত ৫ দিন ধরে কুয়াশা ও তীব্র শীতের কারণে বোরো বীজতলা নিয়ে দারুন উৎকণ্ঠায় রয়েছেন কৃষকেরা। লাগাতার শীতের কারণে কোল্ড ইনজুরিতে বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশংকায় কৃষি বিভাগের পরামর্শে বীজতলায় পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তার পরেও বীজতলা রক্ষায় কৃষকদের অবিরাম পরিশ্রম করতে হচ্ছে।
দিনাজপুর অঞ্চলের কৃষি বিভাগে সোহরাব হোসেন জানান, উত্তরের জনপদ বৃহত্তর দিনাজপুরের ৩ জেলায় এ বছর ১২ হাজার ৫৩৫ হেক্টরে বীজতলা তৈরীর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত হলেও কৃষকেরা তা অতিক্রম করে ১৩ হাজার ১২২ হেক্টরে বীজতলা তৈরী করেছেন। উত্তরাঞ্চলের শীত প্রধান এই ৩ জেলায় যদি কোনো কারণে শীতের জন্য বীজতলার কিছুটা ক্ষতি হয় তবে তা অতিরিক্ত বীজতলা দিয়ে পুষিয়ে নেয়া সম্ভব হবে। তিনি বলেন, আগামী ২/১ দিনের মধ্যে শীত কমে আসবে বলে আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে। এছাড়া দিনের প্রায় ৩/৪ ঘন্টা রোদ থাকায় বীজতলার ক্ষতির সম্ভাবনা কম। বীজতলা রক্ষায় কৃষকেরা ইতিমধ্যে পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখার ব্যবস্থা করেছেন। সূত্রটি নিশ্চিত করেন শীত কমে আসলে পলিথিন সরিয়ে সালফার জাতীয় কীটনাশক স্প্রে করে বীজতলা সতেজ রাখা সম্ভব হবে। তীব্র শীত ও কুয়াশার কারণে ৩ জেলার কোথাও-কোথাও বীজতলার  কিছু অংশ হলুদ ও বিবর্ণ হচ্ছে বলে কৃষকেরা জানান। তবে তার পরিমাণ খুবই কম। কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন বীজতলা রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য ইতিমধ্যেই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ও সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। মাঠ কর্মীরা এ ব্যাপারে কৃষকদের অবহিত করে সচেতন করছেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দিনাজপুর অঞ্চলের কৃষি গবেষণা কর্মকর্তা সাইদুর রহমান জানায়, চলতি মৌসুমে দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও এবং পঞ্চগড় জেলার ২ লাখ ৬০ হাজার ৬১০ হেক্টরে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ২ লাখ ১০ হাজার ৪৪০ হেক্টরে উফসী ও ৫০ হাজার ১৭০ হেক্টরে হাইব্রিড ধান চাষ করা হবে। এ বছর দিনাজপুরে ১ লাখ ৭১ হাজার ১২০ হেক্টর, ঠাকুরগাঁও এ ৫৮ হাজার ৯৯০ হেক্টর ও পঞ্চগড় জেলায় ৩০ হাজার ৫০০ হেক্টরে বোরো আবাদ করা হবে। এ বছর বোরো ধানের উৎপাদনের লক্ষমাত্রা স্থির করা হয়েছে ১১ লাখ ৫৮ হাজার ১০২ টন। এর মধ্যে ২ লাখ ৪৪ হাজাার ৬৪২ টন হাইব্রিড ও ৯ লাখ ১৩ হাজার ৪৬০ টন উফসী বোরো ধান রয়েছে। গত মৌসুমে ৩ জেলায় ৬ লাখ ৬১ হাজার ২০ হেক্টরে বোরো ধান উৎপাদন হয়েছিল ১১ লাখ ৫৫ হাজার ৯৯০ টন।
চলতি মৌসুমে ৩ জেলায় ২ লাখ ৮০ ৬৮১ টন গম উৎপাদনের ৭০ হাজার ৪৫০ হেক্টরে আবাদ শুরু করেছেন কৃষকেরা। এর মধ্যে দিনাজপুরে ৫ হাজার হেক্টর, ঠাকুরগাঁও এ ৪৭ হাজার ৪৫০ হেক্টর ও পঞ্চগড় জেলায় ১৮ হাজার হেক্টর জমিতে গম চাষ করা হচ্ছে।
৩ জেলার কৃষকেরা ভুট্টা চাষে বেশী আগ্রহী হচ্ছেন। এই ফসলে কোনো ধরনের ঝুঁকি না থাকায় ও উৎপাদন ব্যয় কম হওয়ার পাশাপাশি বাজারে উপযুক্ত মূল্য পাওয়ায় দিন দিন ভুট্টা চাষের পরিমাণ বাড়ছে। চলতি মৌসুমে ১ লাখ ৩৬ হাজার ৫৬০ হেক্টরে ১৫ লাখ ৩৬ হাজার ৬৩৩ টন ভুট্টা উৎপাদনের কাজে ব্যস্ত রয়েছেন কৃষকেরা। জানা যায়, দিনাজপুরের ৭১ হাজার ১৫০ হেক্টর, ঠাকুাগাঁও ৩৫ হাজার ২৬০ হেক্টর ও পঞ্চগড় জেলায় ৩০ হাজার ১৫০ হেক্টরে ভুট্টা আবাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়