বাসস
  ২০ নভেম্বর ২০২১, ১৫:০৫
আপডেট  : ২০ নভেম্বর ২০২১, ১৭:০৬

মোবাইল প্রযুক্তির ব্যবহার সুবিধাভোগীদের ভাতা প্রাপ্তি  নিশ্চিত ও সহজ করেছে 

॥ একেএম কামাল উদ্দিন চৌধুরী ॥
ঢাকা, ২০ নভেম্বর, ২০২১ (বাসস): কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার ৭৬ বছরের বৃদ্ধা সামেনা বেগমের পক্ষে ব্যাংক থেকে তার বয়স্কভাতা উত্তোলন করা এক সময় খুব কঠিন ছিল। কিন্তু মোবাইল (ওয়ালেট) প্রযুক্তির মাধ্যমে ভাতা বিতরণ প্রক্রিয়া চালু হওয়ায় কাজটি সহজ হয়েছে।
বাসসে’র সাথে আলাপকালে সামেনা বেগম বলেন, তিনি এখন ব্যাঙ্কে যাওয়ার পরিবর্তে নিকটবর্তী ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার (ইউডিসি) থেকে তার সরকারি ভাতার টাকা সহজে এবং স্বাচ্ছন্দ্যে তুলতে পারেন। 
তিনি বলেন, “আগে আমাকে ভাতার টাকা তোলার জন্য ব্যাঙ্ক শাখায় যেতে হত। এজন্য কাউকে না কাউকে আমার সঙ্গে নিতে হতো। কিন্তু, এখন খুব সহজেই কাছের ইউডিসি’র এমএফএস এজেন্টের কাছ থেকে নগদ টাকা তুলতে পারি।” 
একই উপজেলার বিধবা কোহিনুর বেগম জানান, আগে তাকে ভাতার টাকা পাওয়ার জন্য ব্যাংকে যেতে হতো। কিন্তু এখন আর ব্যাংকে যেতে হয় না। মোবাইল প্রযুক্তির কল্যাণে সহজেই ভাতার টাকা পেয়ে যান। 
সরকার সামাজিক সুরক্ষা বেষ্টনী (এসএসএন) কর্মসূচির আওতায় পরিষেবাগুলো; যেমন-বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, বিশেষ চাহিদা বা সুবিধাবঞ্চিতদের ভাতা এবং বিশেষ আর্থিক সুবিধা সম্পন্ন শিক্ষার্থীদের জন্য ২০২০-২১ অর্থবছরে ভাতা হিসেবে প্রায় ৫ হাজার ৮৮৫ কোটি টাকা বিতরণ করা হয়েছে। এভাবেই এমএফএসের মাধ্যমে বিভিন্ন সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর ভাতা বিতরণ, সুবিধাভোগীদের ঝামেলা কমানোর পাশাপাশি সামগ্রিক বিতরণ প্রক্রিয়ায় সর্বোত্তম স্বচ্ছতা নিশ্চিত করেছে বলে সুবিধাভোগীরা জানিয়েছেন। 
সরকার সামাজিক নিরাপত্তা খাতে মোট প্রায় ১ লাখ ৭ হাজার ৬১৪ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে। যা ২০২১-২২ অর্থবছরের মোট বাজেটের ১৭ দশমিক ৮৩  শতাংশ এবং মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৩ দশমিক ১১ শতাংশ।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট পেশ করার সময় বলেন, দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সামাজিক সুরক্ষা বেষ্টনী (এসএসএন) একটি অপরিহার্য উপাদান হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে এবং সরকার দারিদ্র্য বিমোচনে সাহসী, শক্তিশালী, গণমুখী এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক নীতি গ্রহণ ও বাস্তবায়নে কঠোর পরিশ্রম করছে। 
তিনি বলেন, সরকার ২০২৩-২০২৪ সালের মধ্যে দারিদ্র্যের হার ১২ দশমিক ৩ শতাংশ এবং চরম দারিদ্র্যের হার ৪ দশমিক ৫ শতাংশে নামিয়ে আনার পরিকল্পনা করেছে।
মন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি মানবমুখী, সমৃদ্ধ ও শক্তিশালী বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন লালন করতেন। দেশের দরিদ্র, অসহায়, নিঃস্ব ও পিছিয়ে পড়া মানুষের জীবনমান উন্নয়নের মাধ্যমে একটি কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন। জাতির পিতা তাঁর সরকারের সংক্ষিপ্ত সময়ে, প্রথমবারের মতো সরকারিভাবে বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্থ দরিদ্রদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি চালু করেন।  সে সময় ভিজিডি ও কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচি শুরু করা হয় এবং শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবার, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও নির্যাতিত নারীদের সামাজিক নিরাপত্তা প্রকল্পের আওতায় আনার পাশাপাশি দরিদ্র মানুষের জন্য ক্ষুদ্রঋণ সুবিধা চালু করা হয়।
বঙ্গবন্ধুর দেখানো পথ অনুসরণ করে বর্তমান সরকার সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী আরও বিস্তৃত করেছে। ১৯৯৭-১৯৯৮ অর্থবছরে দেশে প্রথমবারের মতো বয়স্ক ভাতা চালু করা হয়। ১৯৯৮-১৯৯৯ অর্থ বছরে বিধবা, দুঃস্থ ও ছিন্নমূল মহিলাদের জন্য ভাতাসহ বিভিন্ন সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি চালু করা হয়। মহামারীজনিত কারণে দেশের দরিদ্রতম অংশকে বেকারত্ব এবং আয়ের ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতে সরকার সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতা বাড়ানোর পদক্ষেপ গ্রহণ করে।
এটুআই-এর ডিজিটাল অ্যাকসেস অ্যান্ড ডিজিটাল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের প্রোগ্রাম ম্যানেজার মো. তহুরুল হাসান বলেন, সরকারি সাহায্য ও নিরাপত্তা বেষ্টনী ভাতা বিতরণ ডিজিটাইজেশন হওয়া সারাদেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সামাজিক ও আর্থিক অন্তর্ভুক্তি অর্জনে সরাসরি সাহায্য করছে। অতীতে ভাতা বিতরণের জন্য মধ্যস্বত্বভোগীদের অস্তিত্ব ছিল। কিন্তু এমএফএসের মাধ্যমে ভাতা বিতরণে ডিজিটাল পদ্ধতি প্রবর্তনের ফলে তাদের প্রভাব অনেকাংশে হ্রাস পেয়েছে।
তিনি বলেন, কিছু লোক আছে যারা সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর নিরীহ সুবিধাভোগীদের প্রতারণা করার চেষ্টা করে। কিন্তু ভাতা বিতরণে এমএফএস-এর আওতা সম্প্রসারণ এবং ডিজিটাল ব্যবস্থায় ভাতা প্রাপ্তিতে সচেতনতা এই ধরণের জালিয়াতি রোধ করবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়