বাসস
  ১৩ নভেম্বর ২০২১, ১১:৫৭

জয়পুরহাটে ব্ল্যাক রাইচ চাষে সফল তরুণ কৃষক নিঝুম

॥ শাহাদুল ইসলাম সাজু ॥
জয়পুরহাট, ১৩ নভেম্বর, ২০২১ (বাসস) : প্রচুর পরিমাণে ঔষধি গুণাগুন সমৃদ্ধ ব্ল্যাক রাইচ চাষ করে সফল হয়েছেন জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল বেরাখাই গ্রামের তরুণ কৃষক রাফিউন নবী নিঝুম। অধিক ঔষধি গুণাগুন ও বাজারে ব্যাপক চাহিদার কারনে এ ধান চাষে  কৃষকরা আগ্রহী হয়ে উঠছেন। কৃষি প্রধান বাংলাদেশে উচ্চ ফলনশীল জাতের বিভিন্ন ধান চাষ হচ্ছে। এবার  যোগ হয়েছে ব্ল্যাক রাইচ বা কালো ধান। 
সরেজমিন বেরাখাই গ্রাম ঘুরে ব্ল্যাক রাইচ চাষী রাফিউন নবী নিঝুমের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সাধারণ ধান চাষের পাশাপাশি পরীক্ষামূলক ভাবে ২০ শতাংশ জমিতে ব্ল্যাক রাইচ চাষ করছেন। এতে ১০ মন ধান পাওয়ার আশা করছেন তিনি। জমিতে থাকা ধান দেখেই বীজ নেয়ার জন্য অনেকেই বুকিং দিয়েছেন বলে জানান কৃষক নিঝুম। ঔষধি গুণাগুনের কারনে ব্যাপক চাহিদা বলেও জানান তিনি। পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) এর দিক নির্দেশনায় স্থানিয় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ’জাকস ফাউন্ডেশনের কৃষি ইউনিট ’ব্ল্যাক রাইচ’ চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করাসহ বিনামূল্যে বীজ, সার, কীটনাশক ও কারিগরি সহযোগিতা প্রদান করছে। ব্ল্যাক রাইচ চাষে বাজার জাত ও উৎপাদন নিয়ে প্রথমে কৃষকদের মাঝে নানা সংসয় থাকলেও ব্ল্যাক রাইচের ঔষধি গুণাগুন বিবেচনা ও ফলন ভালো হওয়ায় সেটি কেটে যায়। মাঠে ধান দেখেই অনেকেই বুকিং দিয়েছেন নেওয়ার জন্য। 
জানা গেছে, ইন্দোনেশিয়ায় ব্ল্যাক রাইচ ধানের উপত্তি হলেও অধিক ঔষধি গুণাগুনের কারনে চীন দেশের রাজা-বাদশাদের সুস্বাস্থ্যের জন্য গোপনে এই ’ব্ল্যাক রাইচ’ চাষ করা হতো। যা প্রজাদের জন্য চাষ করা বা খাওয়া নিষিদ্ধ ছিল। এ কারনে এই ধানকে নিষিদ্ধ ধানও বলা হতো। পরবর্তীতে জাপান, মিয়ানমার ও ইন্দোনেশিয়া এই ধান চাষ শুরু হয়। সেখান থেকে এই ধান আসে বাংলাদেশে। পার্বত্য এলাকায় এ চালকে বলা হয় পোড়া বিন্নি চাল। থাইল্যান্ডে একে বলে কাও নাইও ডাহম। চীনের সপ্তদশ শতকের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন মূল্যবান ব্ল্যাক রাইচ বা কালো ধান জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের প্রত্যন্ত অঞ্চল বেরাখাই গ্রামের চার জন কৃষক ওই ধান চাষ করছেন। ব্যতিক্রম এই ’কালো ধান’ এক নজর দেখার জন্য ভিড় করছেন কৌতহলী মানুষ। ব্ল্যাক রাইচ চাষী রাফিউন নবী নিঝুমের দেখা দেখি প্রতিবেশী এনামুল হক চৌধুরী ২০ শতাংশ জমিতে, সুলতান আহমেদ ২০ শতাংশ ও একরামুল হক চৌধুরী ৩০ শতাংশ জমিতে ওই ধান চাষ করছেন। এটেঁল যুক্ত মাটি একটু উঁচু জমিতে এ ধান চাষে ভাল ফলন পাওয়ায় কৃষকরা খুশি বলে জানান। সাধারণ অন্যান্য ধানের মতো চাষ পদ্ধতি। এই কালো ধান গাছের উচ্চতা প্রায় সাড়ে ৪ ফুট। এর পাতা, শীষ, ধান ও চাল সবকিছুই কালো। 
পাঁচবিবি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লুৎফর রহমান বলেন, সাধারণ ধানের চেয়ে ব্ল্যাক রাইচ বা ধানের দাম ও চাহিদা অনেক বেশি। কালো ধানে প্রচুর পরিমানে অ্যান্টি অক্সিজেন থাকায় শরীরের রোগ প্রতিরাধ ক্ষমতা বাড়ায়। ত্বক পরিস্কার করে ও শরীর হতে দূষিত পদার্থ বের করে শরীরকে ফুরফুরে রাখে। এতে থাকা ফাইবার হার্টকে রাখে সুস্থ। কালো চাল ডায়াবেটিস, ¯œায়ুরোগ ও বার্ধক্য প্রতিরোধক। এ কালো ধানের চাষ প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে দেয়া গেলে দেশের কৃষি অর্থনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে প্রত্যাশা করেন তিনি। এ ধানের ভাত ঔষধি গুণাগুন সমৃদ্ধ হওয়ায় এক কেজি ধান বীজ হিসাবে বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা কেজি। ব্ল্যাক রাইচে অধিক মাত্রায় থাকা খাদ্য গুণাগুন গুলোর মধ্যে রয়েছে অ্যামিনো অ্যাসিড, কপার, জিংক, ফাইবারসহ ঔষধি গুণাগুন ১১ টি।  কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করা, স্মরণ শক্তি বৃদ্ধিসহ বার্ধক্য, ক্যান্সার প্রতিরোধ, মোটা হওয়া বা স্থুলতা রোধ, রক্ত বৃদ্ধি, কিডনি- লিভার ও হার্ট সুস্থ রাখে। এক গবেষণায় দেখা যায়, ব্ল্যাক রাইচে পুষ্টি উপাদান গুলোর মধ্যে রয়েছে আধা কাপ সিদ্ধ ব্ল্যাক রাইচে ক্যালরি ১৬০ গ্রাম, চর্বি ১ দশমিক ৫ গ্রাম, ফাইবার ২ গ্রাম, প্রোটিন ৫ গ্রাম। এ ছাড়াও  আয়রন শতকরা ৬ ভাগ ও ভিটামিন রয়েছে শতকরা ২ ভাগ এবং কার্বোহাইড্রেট কম থাকায় ডায়াবেটিক রোগীরা খেতে পারেন। 

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়