শেরপুর, ২৪ অক্টোবর ২০২১ (বাসস) : মহামারী করোনাভাইরাসের কারণে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর প্রাণ ফিরেছে শেরপুর জেলার একমাত্র সরকারি গণগ্রন্থাগার ‘খান বাহাদুর ফজলুর রহমান জেলা সরকারি গণগ্রন্থাগার’-এ। ৫ অক্টোবর থেকে কেন্দ্রীয় নির্দেশনা মোতাবেক ৫০ শতাংশ আসন খালি রেখে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চালু হয়েছে গণগ্রন্থাগারটি।
গ্রন্থগার সূত্রে জানা যায়, শেরপুরের এ প্রাচীণ গণগ্রন্থাগারে বইয়ের সংখ্যা প্রায় ৪৩ হাজার। এখানে বিভিন্ন স্তরের একাডেমিক বই ছাড়াও গল্প, উপন্যাস, ইতিহাস, কবিতা, জীবন কাহিনী, ভ্রমণ কাহিনী, বিজ্ঞানভিত্তিক ও জ্ঞানমূলক নানা বইয়ের সমাহার রয়েছে। এখানে গ্রন্থাগার সেবা, রেফারেন্স সেবা, সম্প্রসারণ সেবা, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি সেবা, প্রতিষ্ঠানিক সেবা, শিশুদের গেম, উদ্ভাবনী গ্রুপের সেবাসহ প্রায় ২১টি সেবা গ্রহণ করতে পারে সাধারণ মানুষ। এখানে প্রতিদিন প্রায় দুই শতাধিক মানুষ পাঠ সেবাসহ নানা সেবা গ্রহণ করে থাকে।
বছরের মার্চ মাস থেকে করোনা মহামারী শুরু হওয়ার পর দুই দফায় সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক শেরপুর সরকারি গণগ্রন্থাগারটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। মাঝখানে চলতি বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি সীমিত পরিসরে গ্রন্থাগারটি চালু হওয়ার পর দ্বিতীয় দফা করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় আবারও ৫ এপ্রিল থেকে সেটি বন্ধ করে দেয়া হয়। এতে দীর্ঘদিন শেরপুরের এ গণগ্রন্থাগারে বই পড়া, পত্রিকা পড়া, শিক্ষিত বেকার যুবকদের চাকরির সংবাদ পত্রিকায় বিভিন্ন চাকুরির খবর নিতে পারেননি অনেকে। এরপর বর্তমানে করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসায় কেন্দ্রীয় নির্দেশনা মোতাবেক আবারও ৫ অক্টোবর থেকে সীমিত পরিসরে ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে পাঠ সেবা শুরু হয়েছে। ফলে পাঠাগারের পাঠক-গ্রাহকসহ অন্যান্য সেবাগ্রহিতারা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন।
জেলা সরকারি গণগ্রন্থাগারে বর্তমানে নিবন্ধিত সদস্য রয়েছেন ৭৩৬ জন। তারা নিয়মিত পাঠাগারের পাঠকক্ষে না বসলেও বাসায় বই নিয়ে পড়াশোনা করছেন। এছাড়া ২০১৯ সালে শেরপুর সরকারি গণগ্রন্থাগারের ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি চালু করা হয়। যার বর্তমান নিবন্ধিত সদস্য রয়েছে আরও ৮৪৪ জন।
শেরপুর সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী হুসনে আরা বলেন, পত্রিকা ও বই পড়ার জন্য গ্রন্থাগারো প্রতিদিন আসতাম। গ্রন্থাগারটি খুলে দেওয়ায় আমাদের জন্য পাঠদানের সুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
শিক্ষিত বেকার যুবক রবিন মিয়া বলেন, অনার্স মার্স্টাস পাস করে বিভিন্ন চাকরির লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য পড়াশোনা এবং নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেখার জন্য নিয়মিত পাঠাগারে যাই। মহামারী করোনার সময় তা বন্ধ থাকায় আমরা সমস্যায় পড়েছিলাম। এখন পাঠাগারটি খুলে দেওয়ায় আবারও ভালোভাবে প্রস্তুতি নিতে পারবেন বলে জানান তিনি।
নিয়মিত বিভিন্ন লেখকের বই পড়েন এমন একজন ব্যক্তি সুহাস চন্দ বাসসকে জানান, আমার বয়স এখন ৬৫ এর উর্ধ্বে। করোনার জন্য বাসা থেকে বের হতে পারিনি। যার ফলে নিয়মিত বই পড়া হয়নি। এখন করোনা নিয়ন্ত্রণে আসার ফলে গণগ্রন্থাগার খুলে দেওয়ায় আমি গ্রন্থাগারে বিভিন্ন বই পড়ে সময় কাটাচ্ছি।
শেরপুর নাগরিক ফোরাম জনউদ্যোগের আহ্বায়ক অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদ বলেন, শেরপুর গণগ্রন্থাগারটি বেকার যুবক যুবতী, লেখক-লেখিকা, সরকারী কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষের আনাগুনায় আবার মুখরিত হয়ে উঠেছে। আমরা যদি শিক্ষিত মাদকাসক্তি ছেলে মেয়েদের নিয়মিত পাঠাগারে নিয়ে যেতে পারতাম, তাহলে হয়তো তাদেরকে মাদক সেবন থেকে দূরে রাখা যেত। এব্যাপারে অভিভাবকদের এগিয়ে আসতে হবে।
শেরপুর জেলা সরকারি গণগ্রন্থাগারের গ্রন্থাগারিক মো. সাজ্জাদুল করিম বলেন, করোনা পরিস্থিতির আরও উন্নতি হলে গ্রন্থাগারের সকল সেবা দ্রুতই চালু হবে। তিনি বলেন, সরকার গ্রন্থাগারকে শুধু বই পড়ার মধ্যে সীমিত না রেখে নানা ধরনের সেবা চালু করেছে। সেসব সেবা গ্রহণ করে বেকার যুবক থেকে শুরু করে শিক্ষকরাও উপকৃত হচ্ছেন। গ্রন্থাগারটি প্রচুর বই রাখার স্থান এবং পাঠকদের বসার স্থান সম্প্রসারণ করার জন্য আমরা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। এখানে প্রতিদিন প্রায় ৫ শতাদিক পাঠক বিভিন্ন বই পত্রিকা, ম্যাগাজিন পড়ার জন্য আসে। প্রতিদিনই এই জেলা গণগ্রন্থাগারে পাঠকদের সংখ্যাবৃদ্ধি পাচ্ছে। আমরা এটিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছি।