বাসস
  ২২ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৪:৪৫

ফুটবল রেফারি ফরিদার জার্মান জয়

ঢাকা, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২১ (বাসস) : একজন খেলোয়াড় একটা দেশের দূত। অর্থাৎ কখনো কখনো  কোন দেশ সম্পর্কে খুব বেশি না জানলেও একজন ভালো খেলায়াড়ের  কারণে ওই দেশ সম্পর্কে জানতে পারে বিশ্ববাসী। যেমন  ফুটবলের ম্যারাডোনা। বিশ্বে অনেক মানুষই  আছেন  যারা  তার দেশ আর্জেন্টিনা সম্পর্কে খুব বেশি কিছু  না জানলেও  ম্যারাডোনা সম্পর্কে জানেন।  অনেকে  হয়তোবা  আর্জেন্টিনার রাষ্ট্রপতির নাম জানেনা। কিন্তু  ম্যারাডোনা সম্পর্কে জানে।  সে দিক থেকে  বিশ্বে আর্জেন্টিনার দূত হিসেবে কাজ করেছেন ম্যারাডোনা। তেমনি আমাদের আছেন একজন দূত ফরিদা কাজল।  যিনি  কিনা একজন ফুটবল রেফারি হিসেবে জয় করেছেন জার্মানি। এক সময় খেলতেন ক্রিকেট। তবে  জাতীয় দলে সুযোগ না পেলে শেষ পর্যন্ত ফুটবল বেছে নেন ফরিদা কাজল। বাংলাদেশে ফুটবলের অবস্থা খুব একটা ভাল না হলেও  এ খেলাটাকেই  বেছে নেন ফরিদা।  খেলোয়াড় হিসেবে  যতোটা না আলো ছড়িয়েছেন তার চেয়ে বেশি  উজ্জলতা ছড়িয়েছেন  ফুটবলের একজন রেফারি হিসেবে। ফুটবল  রেফারি হিসেবে সুদুর জার্মানিতে আলো ছড়িয়ে বাংলাদেশের মুখ উজ্জল করেছেন ফরিদা। রেফারিং করেছেন পুরুষ  ম্যাচে।  মাঠে দুই দলের ২২ জন পুরুষ ফুটবলার। দু’জন সহকারি রেফারি পুরুষ। কিন্তু সারা মাঠে মাত্র একজন  নারী, যার হাতে রয়েছে প্রধাান রেফারির বাঁশি। ইউরোপে  এমন দৃশ্য প্রায়ই  দেখা যায়। প্রধান রেফারি  হিসেবে বাঁশি বাজাচ্ছেন বাংলাদেশের মেয়ে ফরিদা কাজল। জার্মানিতে ফুটবল লীগে রেফারিদের কাছে পরিচিত মুখ ফরিদা।
ঢাকার পাইওনিয়ার  ফুটবল, বঙ্গবন্ধু  ও বঙ্গমাতা স্কুল ফুটবল, ক্লাব ফুটবল, জেলা বিভাগীয় বিভিন্ন পর্যায়ের  টুর্নামেন্টে একসময় দক্ষতার সাথে খেলা পরিচালনা করেছেন ফরিদা। সেই অভিজ্ঞতাই যে এত বেশি কাজে লাগবে তা কখনো কল্পনাও করেননি শরিয়তপুুরের মেয়ে ফরিদা। জার্মানির  লিপজিগে  গিয়ে বদলে ফেলেছেন ভাগ্যের চাকা। লিপজিগের স্থানীয় ফুটবল লীগের বিভিন্ন ম্যাচ পরিচালনার পাশাপাশি বার্লিনেও অনেক ম্যাচে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।
এক যুগেরও বেশি সময় আগে ২০০৭ সালে ফরিদা ঢাকায় ক্রিকেট খেলতেন। তিন বছর খেলেছেন আবাহনীর হয়ে। মেয়েদের জাতীয় দলের বাছাইয়ে টিকলেও চুড়ান্ত দলে জায়গা পাননি। হতাশ ফরিদা তাই ক্রিকেট খেলার পাশাপাশি  ফুটবলের রেফারি ট্রেনিং শুরু করেন। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের(বাফুফে) রেফারি কমিটির যোগ্যতার পরীক্ষায় পাশ করে ২০১৪ সাল পর্যন্ত নিয়মিত রেফারিং করেছেন দেশে। একসময় ভলিবল  রেফারিং কোর্সও করেন। রেফারিং এর পাশাপাশি সমাজকর্মের ওপর ¯œাতক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে  ¯œাতকোত্তর করেন ফরিদা। একাডেমিক  পড়আশোনার পাশাপাশি ২০১১ সালে শারীরিক শিক্ষা কলেজ কলেজ থেকে বিপিএড পাশ করেন। রেফারিং করে পাওয়া অর্থে নিজের জীবন চালানো কষ্টকর হয়ে পড়েছিল। তাই ঢাকার বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল ও অস্ট্রেলিয়ান ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে কিছুদিন কয়েক বছর ক্রীড়া শিক্ষকের চাকরি করেন।
২০১৪ সালে সুযোগ পান জার্মানির লিপজিগ বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্রীড়া শিক্ষার ওপর পড়াশোনার। জার্মান সরকারের বৃত্তি নিয়ে ২০১৫ সালে ভর্তি হন লিপজিগ বিশ্ববিদ্যালয়ে। পড়াশোনার পাশাপাশি ততদিনে জার্মান ভাষাটাও শিখতে শুরু করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করলেও ফরিদার মন পড়ে থাকতো ফুটবল মাঠে। রেফারিংয়ের জন্য সুযোগ খুঁজতে শুরু করেন। জার্মানির পঞ্চম স্তরের এফসি গ্রিমায় নিজের আগ্রহের কথা জানিয়ে একটা আবেদন করেন। ফরিদার সব কাগজপত্র দেখে ক্লাব কর্তৃপক্ষ সন্তষ্ট হয়। এরপর এফসি গ্রিমা ক্লাবের সহায়তায় স্থানীয় লীগে রেফারিংয়ের সুযোগ দেয়া হয় তাকে।
জার্মানিতে প্রথম দিনের খেলা চালানোর অভিজ্ঞতাটা বেশ চমৎকার ছিল উল্লেখ করে ফরিদা বলেন,‘ ২০১৬ সালের ৩১ জানুয়ারি ছিল আমার প্রথম ম্যাচ। প্রথম দিনই ছেলেদের ম্যাচ। একটু ভয় করছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত  কোন সমস্যা হয়নি। সবাই প্রশংসা করেছিল।’
মেয়ে বলে কেউ কখনো উপেক্ষা করেনি জানিয়ে ফরিদা বলেন,‘ আমার গায়ের রং কালো বলেন শুরুতে ভয় পেতাম। ভাবতাম ওরা আমাকে  সম্মান করবেনা। মাঠে ভয় পাবেনা। কিন্তু প্রতিটি ম্যাচেই ওরা দারুন সহযোগিতা করেছে। মেয়ে বলে কখনো অবহেলা করেনি।’
স্থানীয় লীগে ভাল পারফরমেন্স করায় ইতোমধ্যেই পদক পেয়েছেন ফরিদা। খেলা চালাতে গিয়ে মজার অভিজ্ঞতা কথা উল্লেখ করে  ফরিদা বলেন,‘ ছেলেদের ম্যাচে একবার এক গোলরক্ষককে লাল কার্ড দিই। ছেলেটা ডি-বক্সের বাইরে  এসে বল ধরেছিল। ভুল বুঝতে পেরে পরে আমার কাছে মাফ চেয়েছিল।’
সুযোগ পেলেই  স্টেডিয়ামে বসে  বুন্দেসলীগার  ম্যাচ দেখেন ফরিদা। স্থানীয় আরবি লিপজিগের সঙ্গে বায়ার্ন মিউনিখ, এফসি শালকের  অনেক ম্যাচ লিপজিগ স্টেডিয়ামে বসে উপভোগ করেছেন। করোনার কারনে আপাতত লিপজিগে সব ধরনের ফুটবল বন্ধ। দু:সময় শেষে আবারো মাঠে ফিরতে যেন তর সইছেনা ফরিদার।
বাসস/ইউনিসেফ ফিচার/এসডিজি/মহ/১৪৪৫/কেজিএ

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়