বাসস
  ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১০:৩৬
আপডেট  : ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১২:০৩

নাটোরে উত্তরা গণভবনের প্রকৃতিতে ফিরে গেল লক্ষ্মীপেঁচা বর্ণ

নাটোর, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২১ (বাসস) : উত্তরা গণভবনে অসুস্থ অবস্থায় উদ্ধার হওয়া লক্ষ্মীপেঁচা সপ্তাহ শেষে সুস্থ হয়ে ফিরে গেছে নিজের প্রকৃতি মাঝে! গতকাল বুধবার রাতে ‘বর্ণ’ নাম রাখা পেঁচাটিকে উত্তরা গণভবনের পাখি অভয়াশ্রমে অবমুক্ত করা হয়।
উত্তরা গণভবনের বিশাল প্রকৃতি জুড়ে বাসকারী পাখিদের সুরক্ষা দিতে এবং পাখির সংখ্যা বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে ২০১৮ সালের ১৫ জুন উত্তরা গণভবন পাখি অভয়াশ্রম উদ্বোধন করা হয়। জেলা প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় উদ্বোধনকৃত এ অভয়াশ্রমে পাখিদের উপযোগী অসংখ্য গাছ রোপণ, পাখির আবাস তৈরীসহ কার্যকরি বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করার ফলে গণভবনে পাখির সংখ্যা বাড়ছে। বিলুপ্ত প্রায় গয়ার বা সাপপাখি ছাড়াও বিভিন্ন প্রজাতির দেশীয় পাখির কূজনে মুখর এখন গণভবন। বিশেষ করে পাখিদের আবাস হিসেবে গাছে গাছে মাটির কলস স্থাপনের ফলে পেঁচার সংখ্যা বেড়েছে বহুগুণে। দিনে কলসে বাস করলেও খাবারের সন্ধানে ওরা বের হয় দিনের শেষে। পেঁচাদের উপস্থিতিতে গণভবনের সন্ধ্যা হয়ে ওঠে ¯িœগ্ধ।
গত ১৫ সেপ্টেম্বর গণভবনের পাখি ফুল গাছের নীচে উদ্ধার করা হয় অসুস্থ এক পেঁচাকে। আঘাতজনিত কারণে পেঁচাটি উড়তে পারছিল না। উত্তরা গণভবনে পাখিদের অবস্থান নিয়ে কাজ করা ওয়াইল্ড লাইফ ফটোগ্রাফার মূর্তজা সারওয়ার এর কাছে খবর গেলে পাখিটির নতুন আশ্রয় হয় ঐ ফটোগ্রাফারের বাড়ি। পাখি বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে পেঁচাটিকে দেওয়া হয় গ্লুকোজ পানি। পরে ভেটেরিনারী সার্জনের পরামর্শে দেওয়া হয় কিছু ভিটামিন আর স্যালাইন। পথ্য হিসেবে দেওয়া হয় মুরগীর মাংসের টুকরো।
গাছ থেকে পড়ে গিয়ে পা আহত হওয়া অসুস্থতাকে খধসবহবংং বলে জানান পশু হাসপাতালে পেঁচাটাকে চিকিৎসা প্রদানকারী নাটোর সদর উপজেলা ভেটেরিনারী সার্জন ডাঃ এস এম মেহেদী হাসান।
সাতদিন ধরে ফটোগ্রাফার মূর্তজা সারওয়ারের সাথে ঐ পেঁচাটির চলে সখ্যতা। পরম মমতায় খাবার দিয়ে, ্ওষুধ সেবন করিয়ে, কোলে তুলে নিয়ে বাড়িতে পাখি পালন করেন তিনি। পেঁচার নাম রাখেন ইধৎহ ড়ষি, তাই বর্ণ!
গতকাল বুধবার রাতে উত্তরা গণভবনে নিয়ে গিয়ে অবমুক্ত করা হয় সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠা বর্ণকে। গণভবনে কর্মরত নুর মহম্মদ জানান, অবমুক্ত করার পরে বর্ণ বেশ কিছুক্ষণ গণভবনের মূল প্রবেশ দ্বারের ভেতরের দুই পাশে থাকা লোহার বেড়ায় বসে ছিলো, এরপর উড়ে যায় নিজের পরিবারের খোঁজে! নিশ্চয়ই পাখিটা ওর স্বজনদের খুঁজে পেয়েছে।
সাতদিন, সাতরাত ধরে বর্ণের সাথে সখ্যতায় আবেগ তাড়িত মূর্তজা সারওয়ার। তিনি বলেন,‘বর্ণের সাথে সাত দিন আর সাত রাতে জমেছে অনেক স্মৃতি। এরআগে কখনো প্রাণিজগতের কাউকে পোষার অভিজ্ঞতা ছিলো না আমার। প্রাণিদের মুক্তভাবে বিচরণ করতে দেখলেই শান্তি লাগে। মুক্তভাবে বিচরণ করতে থাকা প্রাণিদের ছরি তোলা আর পোষ মানিয়ে সাথে রাখা সম্পূর্ণ আলাদা বিষয়। এবার প্রথম কোন প্রাণির সাথে বেশ কিছুটা সময় কাটানোর অভিজ্ঞতা হলো!
বর্ণকে রেখে বাসায় ফিরে ফ্রিজ খুলতেই দেখতে পেলাম, ওর জন্যে ছোট ছোট করে কেটে রাখা চিকেন পিস। মিস করছি। কিন্তু মনে শান্তি পাচ্ছি এই ভেবে যে, বর্ণ তার নিজের পরিবারের কাছে ফিরে গেছে। সংক্ষিপ্ত জীবনে এর চেয়ে সুখের আর কিই বা থাকতে পারে!’
নাটোরের জেলা প্রশাসক এবং উত্তরা গণভবন ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি শামীম আহমেদ বাসস’কে বলেন, গণভবনে আহত পাখিকে উদ্ধার করে চিকিৎসা প্রদান করে সুস্থতার পরে আবারো অবমুক্ত করে দেওয়ার এ কার্যক্রম অসাধারণ। পাখির জন্যে ভালবাসার এ বোধে আমি মুগ্ধ। আমাদের উদ্যোগ এবং সকলের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় আশাকরি গণভবন সমৃদ্ধ পাখির অভয়াশ্রমে পরিণত হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়