বাসস প্রধানমন্ত্রী-৪ (দ্বিতীয় ও শেষ কিস্তি) : স্বাধীনতা বিরোধী খুনী চক্র যেন আর ক্ষমতায় আসতে না পারে : প্রধানমন্ত্রী

548

বাসস প্রধানমন্ত্রী-৪ (দ্বিতীয় ও শেষ কিস্তি)
শেখ হাসিনা-অলোচনা সভা
স্বাধীনতা বিরোধী খুনী চক্র যেন আর ক্ষমতায় আসতে না পারে : প্রধানমন্ত্রী

নির্যাতিত-নিপীড়িত বাঙালির মনে জাতির পিতা স্বাধীনতার আকাঙ্খা সৃষ্টি করেছিলেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি একটি জাতিকে মুক্তি দিয়েছিলেন। নির্যাতিত বাঙালির মনে স্বাধীনতার আকাঙ্খা সৃষ্টি করেছিলেন। যার ফলশ্রুতিতে আমরা একটি স্বাধীন দেশ পেয়েছি। বাঙালি জাতি নির্যাতন-নিপীড়ন সইতে গিয়ে তাদের অধিকারের কথা যেন ভুলেই গিয়েছিল, বলেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, দেশের মানুষ একবেলা খাদ্য জোগাড় করতে পারতো না, উল্টো নির্যাতিত হতো। এ নিয়ে তাদের কোনো অভিযোগও ছিলো না বরং এটাকেই আল্লাহর বিধান বলে তারা মেনে নিতো।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতির পিতা সেই মানুষগুলোর মধ্যে ধীরে ধীরে সাহস দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের মতো একটি যুদ্ধ করার মানসিকতা তৈরি করে দিয়েছিলেন। তিনি শোষণ-বঞ্চনা থেকে জাতিকে মুক্তির জন্য সংগ্রাম করেছেন।’
ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে প্রত্যেকটি আন্দোলনে জন্য জাতির পিতার কারা নির্যাতন ভোগের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভাষা আন্দোলনেও তাঁর অনেক অবদান। ১৯৪৮ সালে ভাষার জন্য আন্দোলন করতে গিয়েই বারবার গ্রেফতার হয়েছেন তিনি। ’৪৯ সালে গ্রেফতার হন। বায়ান্ন সালে গুলি চললো, ভাষা শহীদরা প্রাণ দিলেন। অনেকেই এ আন্দোলনকে সেখানেই থামিয়ে দিলেও প্রকৃত আন্দোলন তখনো শেষ হয়নি। জাতির পিতা জেল থেকে বেরিয়ে সেই আন্দোলন আবারও চালাতে থাকেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘পাকিস্তান সৃষ্টির জন্য যেমন তিনি (জাতির পিতা) সংগ্রাম করেন পরবর্তী সময়ে তাদের হাত থেকে বাঙালি জাতিকে মুক্ত করার সংগ্রামও তিনিই শুরু করেন। আমাদের দুর্ভাগ্য, ভাষা আন্দোলনে তার যে অবদান তা আমাদের জ্ঞানী-গুণীরাও তাদের লেখায় উল্লেখ করতেন না।’
বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে পাকিস্তানী গোয়েন্দা সংস্থার নিয়মিত প্রতিবেদনকে কেন্দ্র করে প্রকাশিতব্য ১৪ খন্ডের সিক্রেট ডকুমেন্টস অন ফাদার অফ দি নেশন্স’র সবগুলো খন্ড প্রকাশিত হলে এ সম্পর্কে দেশবাসী আরো জানতে পারবে উল্লেখ করে শীঘ্রই ১৯৫৩ সালের ঘটনাকে কেন্দ্র করে রচিত এর তৃতীয় খন্ড প্রকাশিত হবে বলেও প্রধানমন্ত্রী জানান।
প্রধানমন্ত্রী এদিনের ভাষণে যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনে জাতির পিতার অসামান্য ভূমিকার বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরতে গিয়ে বাকশাল প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য যে, জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন, তাও উল্লেখ করেন।
তিনি বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার নামে দেশের রাজনীতিকে কলুষিত করায় জিয়াউর রহমানের সমালোচনা করার পাশাপাশি ’৭৫ পরবর্তী বাংলাদেশকে শাসনকারী স্বৈরশাসকদের স্বরূপ উন্মোচন করেন এবং তাদের সমর্থনকারী দেশের তথাকথিত সুবিধাভোগী এলিট শ্রেণীরও কঠোর সমালোচনা করেন।
তিনি তথাকথিত সেসব সুধী শ্রেণীর উদ্দেশ্যে প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন, ‘ভাওতাবাজি দিয়ে অনেক দল সৃষ্টি করতে পারলেই কি বহুদলীয় গণতন্ত্র হয়?’
তিনি বলেন, ‘তার (জিয়ার) বহুদলীয় গণতন্ত্র ছিল একটি ভাঁওতাবাজি। যেখানে কথা বলার অধিকার নেই, মত প্রকাশের অধিকার নেই, সেটা আবার বহুদলীয় গণতন্ত্র হয় কীভাবে! অথচ কিছু জ্ঞানী-গুণী তাকেই বাহবা দিতে শুরু করল।’
দেশে অপরাজনীতি করার জন্যই যুদ্ধাপরাধীদের সহযোগী বিএনপিকে জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, মনোনয়ন বাণিজ্য এবং ক্ষমতায় গেলে কে তাদের প্রধানমন্ত্রী হবে সেটা দেশবাসীর কাছে উপস্থাপনে ব্যর্থতার জন্যই বিগত নির্বাচনে তাদের বিপুল পরাজয় ঘটেছে। যাকে তিনি ‘ভরাডুবি’ বলেও আখ্যায়িত করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘৩শ’ আসনে যখন কোন দল প্রায় ৭শ’ মনোনয়ন দেয় তখন তারা ভোট পাবে কিভাবে। আর ক্ষমতায় গেলে তাঁদের প্রধানমন্ত্রী কে হবে, এতিমের টাকা মেরে যে কারাগারে রয়েছে সে, নাকি বিভিন্ন মামলার ফেরারী আসামী হয়ে বিদেশে পালিয়ে রয়েছে সে?’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচন নিয়ে কেউ প্রশ্ন তুলেনি। সেই নির্বাচনে বিএনপি মাত্র ২৮টি সিট পায়। আওয়ামী লীগ সেখানে এক তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়। ২০১৪ সালে নির্বাচন বর্জন করা বিএনপি ২০১৮ সালের নির্বাচনে অংশ নিলেও তাদের প্রস্তুতির অভাব ছিল।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘গত নির্বাচনের আগে দেশি-বিদেশি সব জরিপে আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় আসবে সেটা বোঝা যাচ্ছিল।’ ‘গত ১০ বছরে দেশের অভূতপূর্ব যে উন্নয়ন করেছেন সে কারণেই জনগণ তাদেরকে টানা তৃতীয়বারের মতো বেছে নিয়েছে’, বলেন বঙ্গবন্ধু কন্যা।
বাসস/এএসজি-এফএন/২১৫৫/-কেএমকে