রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে নিরাপত্তা পরিষদের অব্যাহত অভিভাবকত্ব চায় বাংলাদেশ

383

ঢাকা, ১ মার্চ, ২০১৯ (বাসস) : পররাষ্ট্র সচিব মো: শহিদুল হক রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে নিরাপত্তা পরিষদের অব্যাহত অভিভাবকত্ব বজায় রাখার আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের নিরাপদ, স্বেচ্ছা-প্রণোদিত, টেকসই ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসন ব্যতীত আর কিছুই আমরা চাই না। রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে আমরা নিরাপত্তা পরিষদের অব্যাহত অভিভাবকত্ব প্রত্যাশা করি।’
পররাষ্ট্র সচিব বৃহস্পতিবার জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে মিয়ানমার পরিস্থিতির নিয়ে অনুষ্ঠিত এক বিশেষ সভায় বাংলাদেশের পক্ষে বক্তৃতাকালে এ প্রত্যাশা করেন।
সভায় মিয়ানমার বিষয়ক জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ দূত মিজ্ ক্রিস্টিন শ্রেনার বার্গেনার তাঁর সাম্প্রতিক বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সফরের বিষয়ে ব্রিফ করেন।
নিরাপত্তা পরিষদের ফেব্রুয়ারি মাসের সভাপতি ইকোটরিয়াল গিনি বিশেষ এই আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। নিউইয়র্কস্থ জাতিসংঘ সদর দপ্তরে আয়োজিত এ বিশেষ সভায় নিরাপত্তা পরিষদের ১৫ সদস্যের বাইরে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের পক্ষ থেকে বক্তব্য উপস্থাপন করা হয়।
জাতিসংঘে চলমান অভিবাসন সপ্তাহে যোগদান উপলক্ষে নিউইয়র্ক সফররত পররাষ্ট্র সচিব মো: শহিদুল হক নিরাপত্তা পরিষদে মিয়ানমার পরিস্থিতি বিষয়ক এ আলোচনায় বাংলাদেশের পক্ষে আলোচনায় অংশ গ্রহণ করেন।
তিনি দৃঢ়তার সাথে বলেন, ‘রোহিঙ্গা সঙ্কটের শিকড় মিয়ানমারেই প্রোথিত, এবং এর সমাধান মিয়ানমারের কাছেই রয়েছে’।
শুক্রবার ঢাকায় প্রাপ্ত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়।
এতে বলা হয়, নিরাপত্তা পরিষদ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, “আমাদের পূর্ণ আন্তরিক প্রচেষ্টা সত্ত্বেও মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে প্রত্যাবাসনের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি না হওয়ার কারণে দীর্ঘদিনেও রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন কাজ শুরু করা যায়নি। তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে প্রশ্ন রাখেন ‘প্রতিবেশী দেশের নাগরিক যারা নিজ দেশে বর্বরোচিত নৃশংসতা এবং জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতির স্বীকার এমন নিগৃহীত সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করে তাদেরকে মানবিক আশ্রয় দেওয়ার জন্যই কী বাংলাদেশকে এই মূল্য দিতে হচ্ছে’?
পররাষ্ট্র সচিব সন্ত্রাস দমন বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জিরো টলারেন্স নীতির উল্লেখ করে বলেন, ‘বাংলাদেশের এক ইঞ্চি ভূখন্ডও যাতে কোনভাবে কোন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর কর্মকান্ডে ব্যবহৃত হতে না পারে সে বিষয়ে শেখ হাসিনার সরকার দৃঢ় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। কিন্তু দুঃখজনক যে, ‘মিয়ানমার প্রায়ই অভিযোগ করে থাকে আমরা তাদের ভূখন্ডে সন্ত্রাসবাদ উসকে দিচ্ছি। আমরা স্পষ্টভাবে জানাতে চাই, মিয়ানমারের অভ্যন্তরে কোন ধরনের সন্ত্রাসবাদ সৃষ্টির চেষ্টা বা সন্ত্রাসীদের প্রশ্রয় দানে বাংলাদেশের কোন স্বার্থ, ইচ্ছা, আগ্রহ, উদ্দেশ্য নেই। বরং সর্বদাই আমরা সন্ত্রাস দমন বিষয়ে মিয়ানমারকে সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদান করেছি।’
বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের মানবিক আশ্রয় দেওয়ার ফলে বাংলাদেশে আর্থ-সামাজিক ও পরিবেশগত নানা সঙ্কটের কথাও পররাষ্ট্র সচিব বক্তৃতায় উল্লেখ করেন।
শহিদুল হক এ সভায় নিরাপত্তা পরিষদের বিবেচনার জন্য কফি আনান অ্যাডভাইজরি কমিশনের সুপারিশসমূহের পূর্ণ বাস্তবায়নসহ তিনটি প্রস্তাবনা তুলে ধরেন।
নিরাপত্তা পরিষদের অধিকাংশ সদস্যই রোহিঙ্গা সঙ্কটের সমাধানে আন্তর্জাতিক নীতি অনুযায়ী স্বেচ্ছায়, নিরাপদে, নিরাপত্তার সাথে টেকসই প্রত্যাবাসন বাস্তবায়ন করার উপর জোর দেন। তাঁরা মিয়ানমার সরকারের প্রতি প্রত্যাবাসনের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি, চলাচলের স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা প্রদান, জাতিসংঘসহ সকল আন্তর্জাতিক সংস্থার বাধাহীন প্রবেশ ও কর্মসহায়তা প্রদান, সহিংসতা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়বদ্ধতা নিরুপণ, সাধারণ পরিষদ গৃহীত রেজ্যুলেশনের বাস্তবায়ন এবং নিরাপত্তা পরিষদের প্রেসিডেন্সিয়াল স্টেটমেন্ট বাস্তবায়নসহ মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশসহ অন্যান্য সকল পক্ষের মধ্যে সম্পাদিত সমঝোতা স্মারক এর পূর্ণ বাস্তবায়নের আহ্বান জানান।
জাতিসংঘ মহাসচিবের সাথে বৈঠক : এর আগে বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেজের সাথেও পররাষ্ট্র বৈঠক করেন। দ্বি-পাক্ষিক এই বৈঠকে অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি রোহিঙ্গা বিষয়টি উঠে আসে।
দীর্ঘমেয়াদি এই রোহিঙ্গা সমস্যার বিষয়ে জাতিসংঘ মহাসচিব উদ্বেগ প্রকাশের পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের আশ্রয়দানের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে উদারতা ও মানবিকতা দেখিয়েছে তাঁর উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন। এছাড়াও বর্তমান সরকারের নেতৃত্বে বাংলাদেশ অব্যাহতভাবে যে আর্থ-সামাজিক অগ্রগতি সাধন করে চলেছে তারও প্রশংসা করেন গুতেরেজ।