সাতক্ষীরার প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রত্যাশার আলো ছড়াচ্ছে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার

824

সাতক্ষীরা, ৪ জুন, ২০১৮ (বাসস) : অনেক দিন পর প্রবাসী ছেলে ও বৌমার মুখোচ্ছবি দেখে আনন্দে আপ্লুত হলেন রহিমা বিবি। তাদের সাথে আলাপচারিতা শেষে হাসি মুখে ফিরলেন বাড়িতে। সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার জালালপুর ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার থেকে ইচ্ছে হলেই ছেলে-বৌমার সাথে ভিডিও কলে কথা বলেন তিনি। তার ছেলে-বৌমা থাকে মালয়েশিয়ায়। ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার দূরকে নিকট করেছে। ছেলে-বৌমা ৭ বছর বাড়ি না আসলেও তিনি তাদের সাথে ভিডিও কলে কথা বলে আনন্দ পান। ফেলেন স্বস্তির নিঃশ্বাস।
শুধু রহিমা বিবি নয়, ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার থেকে প্রতিদিন হাজারো সেবা গ্রহণ করছেন সীমান্তবর্তী সাতক্ষীরা জেলার গ্রামীণ জনগোষ্ঠী। শ্যামনগরের খুঁটিকাটা গ্রামের হরিপদ মন্ডল জানান, ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার তাদের জীবনে ব্যাপক পরিবর্তন এনে দিয়েছে। আগে যেখানে উপজেলা শহর বা জেলা শহরে জমির পর্চার জন্য বিভিন্ন অফিসে ছুটতে হতো। কিন্তু এখন অনলাইনের মাধ্যমে কোন প্রকার হয়রানি এবং ঘুষ ছাড়া খুব সহজেই এখন জমির পর্চা তোলা যায়। সাতক্ষীরার সদর উপজেলার সীমান্তবর্তী আগড়দাড়ী ইউনিয়নের বাসিন্দা শাহজাহান আলী। তার ভাইয়ের মেয়ে ও জামাতা থাকেন সিঙ্গাপুরে। মোবাইল সম্পর্কে ভালো ধারণা না থাকায় মেয়ে-জামাতার সাথে যোগাযোগ করতে তাকে আসাতে হয় ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারে।
তিনি বলেন, ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার হয়ে আমাদের অনেক সুবিধা হয়েছে। আগে মেয়ে-জামাইয়ের সাথে যোগাযোগ করতে হলে সাতক্ষীরা শহরে যেতে হতো। শ্যামনগরের উপজেলার ভুরুলিয়া ইউনিয়নের আবু সাঈদ নামে এক তরুণ জানান, এইচএসসি পরীক্ষা শেষ। এখন কলেজে যেতে হচ্ছে না। তাই ইউনিয়ন পরিষদের ডিজিটাল সেন্টারে কম্পিউটার শিখছি। শুনেছি এখান থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আবেদন করা যায়। একই ইউনিয়নের শাহরিয়ার ইমতিয়াজ পলক বলেন, আগে হাতে চাকরির আবেদন করতে নানা ঝামেলায় পড়তে হতো। চালানের মাধ্যমে টাকা দিতে হতো। তারপরও বাড়ি প্রবেশপত্র আসতো না। এখন অনলাইনে আবেদন, আর এসএমএস-এ টাকা দেয়া হয়। কত ঝামেলা যে কমেছে বলার অপেক্ষা রাখে না। বাড়ির পাশে ইউনিয়ন পরিষদ। যখন দরকার, চলে আসি। ঝামেলা শেষ। তিনি বলেন, দেশ অনেক এগিয়ে যাচ্ছে, ডিজিটাল হচ্ছে। তার প্রমাণ ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার। এখানে আসলে বোঝা যায় হয়রানি ছাড়াই মানুষ সেবা পাচ্ছে।
তালা উপজেলার খলিশখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোজাফ্ফর রহমান বলেন, তার ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারে আইডি কার্ড, জন্ম ও মৃত্যু সনদপত্র, সিএস ও এসএ খতিয়ান নামজারী, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের প্রতি মাসে একশ টাকা ভাতা ইত্যাদি কার্যক্রম নির্বিঘেœ চলছে।
ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তা রনি হোসেন জানান, শিক্ষা স্বাস্থ্য, স্থানীয় সরকারসহ বিভিন্নমুখী কার্যক্রম তিনি চালিয়ে যাচ্ছেন। এতে ভুক্তভোগী জনগণ উপকৃত হচ্ছেন। অনলাইনে জন্ম ও মৃত্যু রেজিস্ট্রার, কম্পিউটার কম্পোজ, প্রিন্ট, স্ক্যানিং, নাগরিক সনদ, ছবি তোলা, ফটোকপি, কম্পিউটার প্রশিক্ষণ, অনলাইনে জমির পর্চার আবেদন, জমির ডিসিআরের আবেদন, ই-মেইল, ইন্টারনেট ব্রাউজিং, সরকারি-বেসরকারি ডাটা সরবরাহ, চাকরির আবেদন, অনলাইনে পরীক্ষার রেজাল্ট প্রদান, ওয়ারেশ কায়েম সনদ, ট্রেড লাইসেন্স এবং বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজে ভর্তির আবেদনসহ বিভিন্ন সেবা দেওয়া হচ্ছে। এতে মানুষের হয়রানি কমছে। সেবা নিশ্চিত হচ্ছে। তিনি প্রতি কর্মদিবসে ৫০০ টাকা থেকে ৭০০ টাকা আয় করছেন। তার সংসারে স্বাচ্ছন্দ্য এসেছে।
মৌতলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাঈদ মেহেদী বলেন, আগে মানুষ ইউনিয়ন পরিষদে কম আসতো। ডিজিটাল সেন্টারের কারণে এখন ইউনিয়ন পরিষদই সেবার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।
জেলা প্রশাসক ইফতেখার হোসেন বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ সরকারের জণকল্যাণমুখী কর্মকান্ডের প্রধান আকর্ষণ। জনসাধারণ অল্প সময়ে, স্বল্প ব্যয়ে এলাকায় বসে সেবা পাচ্ছে। তাতে কমছে জন দুর্ভোগ।