জলাবদ্ধতা নিরসনে রাজধানীকে ঘিরে খাল-ড্রেন নেটওয়ার্ক তৈরির ওপর গুরুত্বারোপ

476

ঢাকা, ২ জুন, ২০১৮ (বাসস) : ঢাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে করণীয় বিষয়ে আজ এক গোলটেবিল আলোচনায় রাজধানীকে ঘিরে খাল-ড্রেন নেটওয়ার্ক তৈরির ওপর গুরুত্বারোপ করে খালকে আগের চিত্রে ফিরে আনার উপর জোর দিয়েছেন নগর বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেন, ‘শুধু পাম্প দিয়ে পানি সেচে জলাবদ্ধতা নিরসন করা যাবে না। প্রয়োজনে জমি অধিগ্রহণ করে খাল-ড্রেন নেটওয়ার্ক তৈরি করতে হবে। খালকে আগের চিত্রে ফিরে আনতে হবে।’
জাতীয় প্রেসক্লাবে ঢাকা ইউটিলিটি রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশান (ডুরা) আয়োজিত ‘রাজধানীর জলাবদ্ধতা নিরসনে সরকারি উদ্যোগ ও নাগরিক ভাবনা’ শীর্ষক এই গোলটেবিল আলোচনায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানাস (বিআইপি) এর সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. আকতার মাহমুদ।
রাজধানীর জলাবদ্ধতা নিরসনে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর আন্তরিকতা আরো বাড়াতে হবে উল্লেখ করে নগর বিশেষজ্ঞরা বলেন, ‘জলাবদ্ধতা নিরসনে বিভিন্ন সময়ে একাধিক প্রকল্প নেয়া হয়। কিন্তু প্রকল্প নেয়ার আগে ব্যাপক পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হয় না। অনেক সময় দেখা যায় যেসব প্রকল্প গ্রহণ করা হয় তাতে জলাবদ্ধতা আরও বাড়ে। এছাড়া বিগত বছরগুলোতে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের নামে ঢাকাকে বালতির মতো করে ফেলা হয়েছে। এখন পালতি থেকে পাম্পিং স্টেশনের মাধ্যমে পানি অপসারণ করা হচ্ছে। সেচে সেচে জলাবদ্ধতা নিরসন করা যাবে না। এর জন্য প্রয়োজন বাস্তবভিত্তিক সমন্বিত পরিকল্পনা ও উদ্যোগ।’
আলোচনায় অংশ নিয়ে বিআইডাব্লিউটিএ’র সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী তোফায়েল আহমদ বলেন, ঢাকা থেকে পানি অপসারণের পথ পরিষ্কার রাখতে হবে। সব প্রতিষ্ঠানকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। তবেই জলাবদ্ধতা নিরসন করা সম্ভব হবে।
রাজউকের ডিটেল এরিয়া প্ল্যান (ড্যাপ) পরিচালক আশরাফুল ইসলাম বলেন, রাজধানীর রাস্তার লেভেল এক নয় এ কারণে নিচু এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। ড্যাপ বাস্তবায়ন হলে এই সমস্যাগুলো কমিয়ে আসবে।
ঢাকা ওয়াসা পরিচালক শহীদ উদ্দিন বলেন, ‘২০১১ সাল থেকে ড্রেনেজ ব্যবস্থাকে এক হাতে নেয়ার জন্য বলে আসছি। একাধিক সেবা সংস্থার হাতে দায়িত্ব থাকায় একটু সমস্যা হচ্ছে। আর বৃষ্টির পর পানি নিষ্কাশনের যে লাইন আছে সেই লাইন দিয়ে গন্তব্যে পৌঁছতে যে সময় লাগে শুধু সেই সময়ই জলাবদ্ধতা থাকে। এটা দীর্ঘক্ষণ নয়।’ পরিবেশ বাাঁচাও আন্দোলনের (পবা) চেয়ারম্যান আবু নাছের খান বলেন, উন্নয়ন কাজে জনগণের সম্পৃক্ততা বাড়াতে হবে। অন্যথায় জলাবদ্ধতা কমবে না।
মূল প্রবন্ধে বলা হয়-নগরীতে প্রতি বছর জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাসে গড়ে ৩শ’ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। কিন্তু মাত্র ৫০ মিলিমিটার বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। এতে জলাবদ্ধতার বেশ কিছু কারণ উল্লেখ করা হয়। এগুলো হচ্ছে- রাজউকের বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা এবং ওয়াসার ড্রেনেজ মাষ্টার প্ল্যান সময় মতো বাস্তবায়ন করতে না পারা, ভূ-উপরিস্থ ড্রেন পরিষ্কার না থাকা, ড্রেনেজ চ্যানেল ডি-লিঙ্ক বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া, উন্নয়ন কর্মকা- ও সঠিক ব্যবস্থাপনা না করা, শক্ত নগর পরিসর ও রান-অফ ওয়াটার না থাকা এবং খাল ও পুকুর ভারাট হয়ে যাওয়া। এ অবস্থা থেকে মুক্তি দিতে বেশ কিছু প্রস্তাব তুলে ধরা হয়। এগুলো হচ্ছে- জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রণীত মাষ্টার প্ল্যানের পূর্ণ বাস্তবায়ন, লেক সংরক্ষণ ও পরিকল্পনা অনুযায়ী বারিপাত ধারন করা, সকল বক্স-কালভার্ট ভেঙ্গে উন্মুক্ত করে দেয়া, সকল খাল, ষ্টর্ম ড্রেন ও বক্স কালভার্ট পরিষ্কারের ব্যবস্থা রাখা, পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থাকে আলাদাভাবে ব্যবস্থাপনা করা, সিএস বা আরএস ম্যাপ অনুযায়ী সকল ধরণের দখল উচ্ছেদ করা, খালগুলো সংরক্ষণ করে সকল ধরণের বর্জ্য অপসারণ করা এবং যেখানে খাল প্রশস্তকরণ সম্ভব নয়, সেখানে রিটেইনিং ওয়াল করে হাঁটার পথ তৈরি করা।
বিআইপি’র সাধারণ সম্পাদক আদিল মুহাম্মদ খানের সঞ্চালনায় গোলটেবিল আলোচনার শুরুতে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেন রুবেল স্বাগত বক্তব্য রাখেন। গৃহায়ন ও গণপূর্ত অধিদপ্তরের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী হাফিজুর রহমান মুন্সি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ড. তৌহিদুল হক, স্থপতি ইকবাল হাবিব, গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বায়ক জোনায়েদ সাকি, ডিএসসিসি কাউন্সিলর ও ঢাকা ওয়াসা বোর্ড সদস্য হাসিবুর রহমান মানিক, কাউন্সিলর ফারহানা ইসলাম ডলি, বেসরকারি সংস্থা ডরপ এর প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর আমির খসরু আলোচনায় অংশ নেন।