বাসস দেশ-২৫ : ৩২ ভাগ শিশু অনলাইন সহিংসতা, অনলাইনে ভয়ভীতি প্রদর্শন ও ডিজিটাল উৎপীড়নের শিকার : ইউনিসেফ

307

বাসস দেশ-২৫
ইউনিসেফ-আহবান
৩২ ভাগ শিশু অনলাইন সহিংসতা, অনলাইনে ভয়ভীতি প্রদর্শন ও ডিজিটাল উৎপীড়নের শিকার : ইউনিসেফ
ঢাকা, ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ (বাসস) : অনলাইনে হয়রানি এবং ভয়ভীতি প্রদর্শনকারীদের কবল থেকে ৩২ শতাংশ বাংলাদেশি শিশুদের রক্ষার আহ্বান জানিয়ে ইউনিসেফ বলেছে, শিশু অধিকার বিষয়ক কনভেনশন গ্রহণের এবং ‘ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব’ সৃষ্টির ৩০ বছর পর, শিশুদের ডিজিটাল অধিকারের ওপর আবারও দৃষ্টি দেওয়ার এখনই সময়।
ইউনিসেফ আজ সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ১০ থেকে ১৭ বছর বয়সী ৩২ শতাংশ শিশু অনলাইন সহিংসতা, অনলাইনে ভয়ভীতি প্রদর্শন ও ডিজিটাল উৎপীড়নের শিকার হওয়ার মতো বিপদের মুখে রয়েছে। একইসঙ্গে সংস্থাটি অনলাইনে শিশু ও তরুণ জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সহিংসতার ঘটনা মোকাবেলা ও প্রতিরোধে সমন্বিত পদক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছে।
‘নিরাপদ ইন্টারনেট দিবসে’ জানানো এই আহ্বান এসেছে তরুণ জনগোষ্ঠীর ওপর সম্প্রতি ইউনিসেফ পরিচালিত এক জরিপ এবং ‘#এন্ডভায়োলেন্স ইয়ুথ টকস’ শিরোনামে শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে বিশ্বব্যাপী অনুষ্ঠিত একটি ধারাবাহিক আলোচনা অনুষ্ঠানের ভিত্তিতে। ১৬০টিরও বেশি দেশে ইউনিসেফ পরিচালিত জরিপে পাঁচ সপ্তাহ ধরে ১০ লাখেরও বেশি সাড়া আসে।
‘বাংলাদেশে শিশুদের অনলাইন নিরাপত্তা’ শিরোনামে ইউনিসেফ বাংলাদেশ পরিচালিত সাম্প্রতিক এক সমীক্ষার জন্য দেশের স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থার ১ হাজার ২৮১ জন স্কুল-বয়সী (১০ থেকে ১৭ বছর) শিশুর ওপর জরিপ পরিচালনা করা হয়, যারা ইন্টারনেট ব্যবহার করে।
বিভিন্ন ধরনের সাইবার অপরাধের মধ্যে ধর্মীয় উস্কানি দেয়ার বিষয়টিও সমীক্ষায় উঠে এসেছে। জরিপে অংশগ্রহণকারী প্রায় ১০ শতাংশ শিশু ধর্মীয় উস্কানিমূলক বিষয়বস্তুর মুখোমুখি হওয়ার অভিযোগ করে। কিশোর বয়সীরা (১৬ থেকে ১৭ বছর) অন্য বয়সী শিশুদের তুলনায় অনেক বেশি এই ধরনের উস্কানিমূলক বিষয়বস্তুর সম্মুখীন হয়।
ইউনিসেফ বাংলাদেশের প্রতিনিধি এডুয়ার্ড বেগবেদার বলেন, “বাংলাদেশ এবং বিশ্বব্যাপী শিশু ও তরুণ জনগোষ্ঠীর কথা আমরা শুনেছি এবং তারা যা বলছে তা পরিষ্কার- ইন্টারনেট একটি নির্দয় মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে। এজন্য নিরাপদ ইন্টারনেট দিবসে ইউনিসেফ তরুণ জনগোষ্ঠীর নেতৃত্ব অনুসরণ করছে ও অনলাইনে তাদের প্রতি সদয় হতে সবার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে।
একইসঙ্গে সবার জন্য, বিশেষ করে শিশুদের জন্য ইন্টারনেটকে নিরাপদ একটি জায়গায় পরিণত করতে ব্যাপক পদক্ষেপ গ্রহণেরও আহ্বান জানান তিনি।
ইউনিসেফ বাংলাদেশের সমীক্ষা অনুযায়ী, প্রায় ২৫ শতাংশ শিশু (১০-১৭ বছর বয়সী) ১১ বছর বয়সের আগেই ডিজিটাল জগতে প্রবেশ করতে শুরু করে। এ ছাড়া, শিশুদের একটি বড় অংশ (৬৩ভাগ) প্রাথমিকভাবে ইন্টারনেট ব্যবহারের স্থান হিসেবে তাদের নিজেদের কক্ষটিকেই ব্যবহার করে। এটা “বেডরুম কালচার”-এর ব্যাপকতা নির্দেশ করে, যা অপেক্ষাকৃত কম নজরদারির মধ্যে ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ তৈরি করে।
বাংলাদেশে উচ্চমাত্রায় অনলাইনে প্রবেশাধিকারে সুযোগ ও ব্যবহারের দিক থেকে ছেলেরা (৬৩ ভাগ) মেয়েদের (৪৮ভাগ) চেয়ে এগিয়ে আছে। ইন্টারনেটে নিয়মিত সবচেয়ে বেশি যে দু’টি কাজ করা হয় তা হচ্ছে, অনলাইন চ্যাটিং (বার্তা আদান-প্রদান) ও ভিডিও দেখা।
প্রতিদিন গড়ে ৩৩ শতাংশ সময় অনলাইন চ্যাটিং এবং ৩০ শতাংশ সময় ভিডিও দেখা হয়ে থাকে। সমীক্ষায় উঠে এসেছে যে, ৭০ শতাংশ ছেলে ও ৪৪ শতাংশ মেয়ে অনলাইনে অপরিচিত মানুষের বন্ধুত্বের অনুরোধ গ্রহণ করে। এমনকি জরিপে অংশগ্রহণকারীদের একটি অংশ তাদের নিরাপত্তাকে ঝুঁকিতে ফেলে সেই অনলাইন ‘বন্ধুদের’ সঙ্গে সরাসরি দেখা করার কথাও স্বীকার করে।
অন্যদিকে বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ব্যাপকহারে বাড়ছে। ২০০০ সাল থেকে এই সংখ্যা ৮শ’ গুণ বেড়েছে। বাংলাদেশে অনলাইন জনগোষ্ঠীর গড় বয়স ক্রমেই কমছে। এমনকি ১১ বছরের শিশুরাও প্রতিদিন ইন্টারনেটে প্রবেশ ও ব্যবহার করছে। যদিও ছোট শিশুদের তুলনায় বেশি বয়সী শিশুরা অনলাইনে ভয়ভীতির সম্মুখীন হওয়ার বেশি ঝুঁকিতে থাকে। তবে ক্ষতিকর সামগ্রী, যৌন নিগ্রহ ও অপব্যবহার এবং ভয়ভীতির সম্মুখীন হওয়ার ঝুঁকি থেকে শিশুরা কখনোই মুক্ত নয়।
অনলাইনে হয়রানী এবং ভয়ভীতি প্রদর্শন ব্যাপক ক্ষতির কারণ হতে পারে। কারণ এটা দ্রুত অনেকের কাছে পৌঁছে যেতে পারে এবং অনলাইনে অনির্দিষ্টকাল ধরে এগুলো থেকে যেতে পারে। অন্য শিক্ষার্থীদের তুলনায় যারা অনলাইনে ভয়ভীতির শিকার হয়, তাদের অ্যালকোহল ও মাদকে আসক্ত হওয়ার এবং স্কুল ফাঁকি দেওয়ার হার বেশি। এছাড়া তাদের পরীক্ষায় ফল খারাপ করা, আত্ম-সম্মান কমে যাওয়া ও স্বাস্থ্যগত সমস্যা দেখা দেওয়ার সমূহ আশঙ্কা থাকে।
বাসস/সবি /কেসি/২০০৮/এএএ