চতুর্থ প্রজন্মের শিল্প বিপ্লবের চাহিদা মেটাতে শিক্ষা ব্যবস্থায় সংস্কার প্রয়োজন : অর্থমন্ত্রী

647

ঢাকা, ২৪ জানুয়ারি, ২০১৯ (বাসস) : অর্থমন্ত্রী আ ফ ম মুস্তাফা কামাল চতুর্থ প্রজন্মের শিল্প বিপ্লবের চাহিদা মেটাতে বিদ্যমান শিক্ষা ব্যবস্থায় আমূল সংস্কার আনার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন।
তিনি বলেন,‘আমাদের বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থা চাহিদাভিত্তিক নয়, এটি চতুর্থ প্রজন্মের শিল্প বিপ্লবের চাহিদা পূরণ করার মতোও নয়। তাই এখনকার ও আগামীর চাহিদা মেটাতে শিক্ষা ব্যবস্থায় ব্যাপক সংস্কার আনতে হবে। শিক্ষা ব্যবস্থায় কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা, ক্লাউড টেনোলজি, ব্লকচেইন, ন্যানো টেকনোলজির মত বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দিতে হবে।’
বৃহস্পতিবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় রাজস্ব ভবন সম্মেলনকক্ষে রাজস্ব কর্মকর্তাদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
সদ্যসাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের বিদায়ী শুভেচ্ছা এবং নবনিযুক্ত অর্থমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
এনবিআর চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন ভূইয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিদায়ী অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে এনবিআর সদস্য কালিপদ হালদার ও খন্দকার আমিনুর রহমান এবং বিসিএস ট্যাক্স এসোসিয়েশনের সভাপতি সেলিম আফজাল বক্তব্য রাখেন।
মুস্তাফা কামাল শিক্ষা ব্যবস্থায় সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে আরো বলেন, ‘২০৩০ সালে আমরা ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত দেশ গড়তে চাই। আর ২০৪১ সালে যেতে চাই উন্নত দেশের তালিকায়, এর জন্য আমাদের পৃথিবীর ২০টি ধনী দেশের একটি হতে হবে। কিন্তু এখন যে শিক্ষা গ্রহণ করছি, সেটা দিয়ে এই স্বপ্ন পূরণ হবার নয়। তাই এ খাতে ব্যাপক সংস্কার আনতেই হবে।’
তিনি মনে করেন, তরুণ প্রজন্মকে সময়োপযোগী শিক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে দক্ষ মানবসম্পদ হিসেবে তৈরি করতে পারলেই,কেবল কাঙ্খিত লক্ষ্য পূরণ হওয়া সম্ভব।
গত দশ বছরে বাংলাদেশের আর্থিক খাত বিকাশের বিভিন্ন চিত্র তুলে ধরে নতুন অর্থমন্ত্রী বলেন, মাত্র দশ বছরের ব্যবধানে আমাদের মাথাপিছু জাতীয় আয় ৫৪৩ মার্কিন ডলার থেকে ১৭৫১ ডলারে উন্নীত হয়েছে।মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) আকার ৭২ বিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে ২৭৪ ডলারে পৌঁছেছে। দশ বছর আগে পৃথিবীর অর্থনীনিতে আমাদের অবস্থান ছিল ৫৮তম,এই সময়ে ১৭টি দেশকে পেছনে ফেলে আমরা এখন ৪১তম অবস্থানে এসেছে।
সদ্যবিদায়ী অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের অসাধারণ নেতৃত্ব,মেধা ও নিষ্ঠা এই অভূতপূর্ব উন্নয়নের ভিত্তি রচনা করেছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
সাবেক এই অর্থমন্ত্রীর কর্মদক্ষতার প্রশংসা করে মুস্তাফা কামাল বলেন,‘আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছিলেন,তিনি পরবর্তী অর্থমন্ত্রীর জন্য একটি কর্মপরিকল্পনা দেবেন।আমি বিশ্বাস করি-তার কাছ থেকে সেই পরিকল্পনা পাব। উনি যেখানে রেখে গেছেন আমি তার পরামর্শ নিয়ে সেখান থেকে শুরু করব।’
অনুষ্ঠানে আবুল মাল আবদুল মুহিত তার বক্তব্যে নতুন অর্থমন্ত্রীকে সহযোগিতা প্রদানের প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করে বলেন, ‘আমি অবসরে গেলেও কাজকর্ম থেকে অবসরে যায়নি। দেশের প্রয়োজনে আপনি আমার কাছে পরামর্শ চাইলে-সেটা সবসময় পাবেন। আমি ইতোমধ্যে আগামী অর্থবছরের বাজেটের একটি কাঠামো তৈরি করে রেখেছি। আপনি সেটাকে কাজে লাগাতে পারবেন।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা সবসময় বাজেট আলোচনা ফেব্রুয়ারিতে শুরু করি।আমি এ বিষয়ে একটি পদক্ষেপ নিয়ে রেখেছি।সেটা হলো-ডিসেম্বরে আলোচনা শুরু করা যেতে পারে।এতে আপনি বাজেটটা সুন্দরভাবে করার জন্য লম্বা একটা সময় পাবেন।’
মুহিত নতুন করদাতা সংগ্রহের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাজে লাগানোর পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের দিয়ে জরিপ করাতে হবে। তারা ঢাকা ও আরো দু’একটি শহরে মানুষের বাড়ি ও রেস্টুরেন্টে যাবে। গাড়ির ব্যবহার দেখবে। এরপর শিক্ষার্থীরা এ্যাসেসমেন্ট করবে-কার কত আয়। তখন রাজস্ব কর্মকর্তারা সহজে নতুন করদাতা সনাক্ত করতে পারবে।
এনবিআর চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন ভূইয়া রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে রাজস্ব কর্মকর্তাদের সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করার নির্দেশ দেন।