ভোলায় সবজি চাষে যুবকের অবস্থার পরিবর্তন

450

॥ হাসনাইন আহমেদ মুন্না ॥
ভোলা, ১৯ জানুয়ারি, ২০১৯ (বাসস) : জেলার উপজেলা সদরের ভেদুরিয়া ইউনিয়নে সবজি চাষ করে অবস্থার পরিবর্তন করেছেন মো. আবু সাইদ (২৯) নামের এক যুবক। বাড়ির পাশের প্রায় ৪ একর জমিতে শীতের লাল শাক, লাউ, টমেটো, ফুলকপি, মিষ্টি কুমোর, শষা, করলা, মুলা, শিমের চাষ করছেন। ১১ বছর ধরে কঠোর পরিশ্রম ও একগ্রতা ভাগ্য বদলে তাকে সহায়তা করেছে। প্রথম দিকে ধান চাষ করলেও লোকসান হওয়ায় সবজি আবাদের দিকে ঝোঁকেন তিনি। বর্তমানে সাইদ একজন সফল সবজি চাষি। পাইকাররা সরাসরি তার মাঠ থেকই সবজি কিনে নিয়ে যান।
সরেজমিনে ভেদুরিয়া ইউনিয়নের চর রমেশ এলাকায় গিয়ে দেখা যায় নিজ বসত ঘরের পাশে সবজির ক্ষেতে পরিচর্যায় ব্যস্ত রয়েছেন সাইদ। তিনি জানান, ২০০৫ সালে এসএসসি পাস করার পর বাবা আবু তাহের অসুস্থ হয়ে পড়লে লেখা পড়া আর করতে পারেননি। বাবার কৃষি কাজে মনোনিবেশ করেন। প্রথম দিকে ধান চাষ করলে লোকসান হয় তার। পরে সবজি চাষে সফলতা ধরা দেয় তাকে। বর্তমানে স্থানীয়ভাবে একজন সফল সবজি চাষি হিসেবেই সবার কাছে পরিচিত সাইদ।
আবু সাইদ আরো জানান, এখন শুধু নিজেদের খাবার ধানটা চাষ করেন, এছাড়া ১২ মাসই সবজির চাষ করেন তিনি। চলতি মৌসম ছাড়াও আগামী মৌসমের জন্য পুই শাক, পাট শাক, তরমুজ, বেগুন, বাদাম, দুন্দুল চাষেরও প্রস্তুতি নিচ্ছেন। সবজি ক্ষেত পরিচর্যার জন্য একজন লোক নিয়োগ দিয়েছেন তিনি। এবছর সবজির বাজার দাম ভালো হওয়ায় লাভ বেশি হচ্ছে বলে জানান কৃষক সাইদ।
স্থানীয় কৃষি বিভাগের সব ধরনের পরামর্শ সেবা অব্যাহত থাকায় রোগ-বালাই’র আক্রমণ থেকেও নিরাপদ তার সবজি। পোকা দমনে গত ৪ বছর যাবত ব্যবহার করছেন ফেরোমন ট্রাপ পদ্ধতি। ফলে ছোট পোকা ফসলের ক্ষতি করতে পারে না। ইতোমধ্যে তার উৎপাদিত সবজি বিক্রি করেছেন প্রায় ২ লাখ টাকার। আগামীতে আরো দেড় লাখ টাকার সবজি বিক্রি হবে বলে প্রত্যাশা। আবু সাঈদের দেখাদেখি অনেক যুবকই এখন সবজি চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো: রিয়াজউদ্দিন বাসস’কে জানান, আবু সাইদ অত্যন্ত পরিশ্রমী একজন সবজি চাষি। তার সবচে বড় গুন হলো সে কৃষি বিভাগের পরামর্শ ছাড়া কোন কাজ করেনা। তার ক্ষেতের যে কোন সমস্যায় তিনি আমাদের সরণাপন্ন হন। আমরা সমস্যা সমাধানে সর্বাত্মক সহায়তা সেবা দিয়ে থাকি।
স্থানীয় কৃষক আকবর হোসেন ও নাগর হোসেন বলেন, তারা সবজি চাষ করলেও সাইদের মত লাভ হতো না। অধিকাংশ সবজি রোগ-বালাই’র কবলে পড়ত। পরে সাইদের পরামর্শে উপজেলা কৃষি অফিসে গিয়ে তাদের কথা মত সবজি চাষ শুরু করেন। এখন তাদের ফলন ভালো হচ্ছে। পোকা-মাকড় থেকে রক্ষার জন্য ফেরোমন ট্রাপ পদ্ধতি ব্যবহার করছেন। প্রায় ২ একর জমির উপর পালং শাক, টমেটো, ফুলকপি, বাধা কপি, লাউ, মিষ্টি কুমোরের চাষ করছেন তারা।
সবজি চাষি আবু সাইদ আরো বলেন, শুধু সবজির চাষ করেই তিনি ছোট ৩ বোন বিয়ে দিয়েছেন। বাড়ির পাশে প্রায় ৪০ শতাংশ জমি ক্রয় করেছেন। অসুস্থ পিতার চিকিৎসা ব্যয় বহন করেছেন। বর্তমানে বাবা, মা, স্ত্রী, ছোট ভাই ও শিশু সন্তান নিয়ে সুখে আছেন তিনি।
উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো: মাসুম বিল্লাহ বলেন, সাইদের প্রথম দিকে সবজির প্রতি আগ্রহটা মূলত কৃষি বিভাগই সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে কিভাবে বিষমুক্ত সবজি উৎপাদন করা যায়, এ ধারণাটা কৃষি বিভাগ থেকে নিয়ে সে কাজে লাগায়। তার মাঠের সবজির অবস্থা ভালো রয়েছে। নিয়মিত আমাদের তদারকি ও পরামর্শ সেবা অব্যাহত রয়েছে। বর্তমানে সে একজন সফল কৃষক হিসেবে এলাকায় সাড়া ফেলেছে। অনেকেই তাকে দেখে সবজি চাষ শুরু করেছেন।