বাসস দেশ-২০ : অবহেলায় রোগী মৃত্যু মামলা, চার চিকিৎসকের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র আমলে

326

বাসস দেশ-২০
আদালত-আদেশ
অবহেলায় রোগী মৃত্যু মামলা, চার চিকিৎসকের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র আমলে
ঢাকা, ৩০ মে, ২০১৮ (বাসস): রাজধানীর উত্তরায় আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসায় অবহেলায় শারমিন সরকার (১৮) নামের এক শিক্ষার্থী রোগীর মৃত্যুর অভিযোগে ওই হাসপাতালের চার চিকিৎসকের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র আমলে নিয়েছে ঢাকার একটি আদালত।
সিআইডি পুলিশের ইন্সপেক্টর মিজানুর রহমান গত ১১ এপ্রিল এ চার্জশিট দাখিল করেছে। আজ বুধবার ওই চার্জশিট গ্রহণ করে ঢাকা মহানগর হাকিম সাদবীর ইয়াসির আহসান চৌধুরী মামলাটি বিচারিক আদালতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন।
চার চিকিৎসক হচ্ছেন, উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইএনটি বিভাগের অধ্যাপক ডা. ফিরোজ আহমেদ খান, ডা. আবুল হোসেন, অ্যানেসথেশিয়া বিভাগের ডা. এম এ করিম ও ডা. ফাইজুল ইসলাম চৌধুরী (ফ্রোবেল)। আসামিরা সকলেই জামিনে আছেন।
এর আগে দু’দফা মামলাটিতে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি মর্মে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছিল ডিবি ও পিবিআই।
ডিবি পুলিশ ২০১৬ সালে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি মর্মে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করলে বাদী ওই প্রতিবেদনের ওপর নারাজী দাখিল করেন। সিএমএম আদালত নারাজী গ্রহণ করে পিবিআইকে পুনরায় তদন্তের নির্দেশ দেয়। পিবিআই ২০১৭ সালে একই প্রতিবেদন দাখিল করলে পুনরায় বাদী নারাজী দাখিল করেন। সিএমএম আদালত পুনরায় নারাজী গ্রহণ করে সর্বশেষ সিআইডিকে তদন্তের নির্দেশ প্রদান করেন। সিআইডির তদন্তেই আসামিদের অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দাখিল করা হলো।
মামলায় বলা হয়, নিহত শারমিন সরকার (১৮) গলায় সিস্ট নিয়ে ২০১৫ সালের ৩০ মে উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গেলে ডা. ফিরোজ আহমেদ রোগটি খুব খারাপ জানিয়ে দ্রুত অপারেশন করার পরামর্শ দেন। তিনি নিজেই অপারেশন করবেন বলে স্বজনদের জানান। ডা. ফিরোজের পরামর্শে ৩ জুন শারমিনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও তিনি অপারেশন করেননি। ৪ জুন ইএনটি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. আবুল হোসেনকে ওই অপারেশনের দায়িত্ব দেন তিনি। সকাল ১০টার দিকে হাসপাতালের অ্যানেসথেশিয়া বিভাগের ডা. ফাইজুল ইসলাম চৌধুরী (ফ্রোবেল) রোগীকে অজ্ঞান করেন এবং ডা. আবুল হোসেন অপারেশন শুরু করেন। অপারেশনের মাঝপথে ডা. ফ্রোবেল অ্যানেসথেশিয়া বিভাগের প্রধান ডা. এম এ করিমের মৌখিক সম্মতি নিয়ে ওটি বয় জামালের হাতে অ্যানেসথেশিয়ার দায়িত্ব দিয়ে মিটিংয়ে চলে যান। এরপর তিনি আর অপারেশন থিয়েটারে ফেরেননি। কোনো অ্যানেসথেশিস্ট ছাড়াই ওটি বয় জামালের সহায়তা নিয়ে ডা. আবুল হোসেন অপারেশন কার্যক্রম সম্পন্ন করেন। অপারেশনের পর রোগীর অবস্থার অবনতি ঘটলে ওটি বয় জামাল ডা. এম এ করিমকে ফোন করেন। ডা. করিম তার পরও ওটিতে না এসে ফোনে জামালকে একটি ইনজেকশন পুশ করতে বলেন। জামাল রোগীর শিরায় ইনজেকশন পুশ করেন। অপারেশন শেষ হওয়ার পর ডা. করিম ওটিতে ফিরে রোগীর লাইফসাপোর্ট খুলে নিয়ে পোস্ট অপারেটিভ রুমে নার্স কাজল ও আয়া শেবুতুনেচ্ছার কাছে রোগীকে হস্তান্তর করেন। এ সময় পোস্ট অপারেটিভ কক্ষেও কোনো চিকিৎসক ছিলেন না।
বাদিনী মৃত শারমিনের মা সুফিয়া সরকার অভিযোগ করেন, মাইনর অপারেশনে দুই ঘণ্টা লাগার কারণে তার সন্দেহ হয়। তিনি জোর করে পোস্ট অপারেটিভ কক্ষে প্রবেশ করে দেখতে পান, শারমিন যন্ত্রণায় ছটফট করছে। এ সময় চিকিৎসক ও নার্সরা তাকে বের করে দেন। দুপুর ২টার দিকে শারমিনকে ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে ভর্তি করা হয়। পরে ১৩ জুন রাত ১০টার দিকে শারমিনের মৃত্যু হয়। ত্রুটিপূর্ণ অপারেশন ও ভুল চিকিৎসায় মৃত্যু হওয়ায় হাসপাতালে বিল বকেয়া থাকলেও সেগুলো না নিয়ে তড়িঘড়ি করে অ্যাম্বুলেন্সযোগে মৃতদেহ বাসায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
ওই ঘটনায় মৃতের মা সুফিয়া সরকার ২০১৫ সালের ২ আগস্ট চার চিকিৎসককে আসামি করে উত্তরা থানায় মামলা করেন।
বাসস/এএসজি/ডিএ/১৯৪৫/আরজি