কোহলির সেঞ্চুরি ও ধোনির হাফ-সেঞ্চুরিতে সিরিজে সমতা আনলো ভারত

342

অ্যাডিলেড, ১৫ জানুয়ারি ২০১৯ (বাসস) : অধিনায়ক বিরাট কোহলির সেঞ্চুরি ও সাবেক দলপতি মহেন্দ্র সিং ধোনির অনবদ্য হাফ-সেঞ্চুরিতে অস্ট্রেলিয়াকে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ৬ উইকেটে হারিয়েছে ভারত। এই জয়ে তিন ম্যাচের সিরিজে ১-১ সমতা আনলো ভারত। সিরিজের প্রথম ম্যাচে অস্ট্রেলিয়া ৩৪ রানে জিতেছিলো।
অ্যাডিলেডে সিরিজ নিশ্চিতের ম্যাচে টস জিতে প্রথমে ব্যাটিং বেছে নেয় অস্ট্রেলিয়া। ভারতের দুই উদ্বোধনী পেসার ভুবেনশ্বর কুমার ও মোহাম্মদ সামির বোলিং নৈপুুণ্যের সামনে হার মানেন অস্ট্রেলিয়ার দুই ওপেনার উইকেটরক্ষক অ্যালেক্স ক্যারি ও অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চ। ক্যারি ১৮ রান করে সামির ও ফিঞ্চ ৬ রানে ভুবেনশ্বরের শিকার হন।
ভালো শুরুর ইঙ্গিত দিয়েও রান আউটের ফাঁদে পড়েন উসমান খাজা। দুর্দান্ত এক থ্রোতে খাজাকে ২১ রানে থামিয়ে দেন ভারতের রবীন্দ্র জাদেজা।
এরপর মিডল-অর্ডার ব্যাটসম্যানদের নিয়ে লড়াই শুরু করেন শন মার্শ। দলের সতীর্থরা ছোট ছোট ইনিংস খেলে বিদায় নিলেও, বড় ইনিংসের পথেই ছিলেন মার্শ। খাজার সাথে ৫৬ রানের জুটি গড়ার পর, পিটার হ্যান্ডসকম্বের সাথে ৫২, মার্কাস স্টোয়িনিসের সাথে ৫৫ ও গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের সাথে ৯৪ রানের জুটি গড়েন মার্শ। হ্যান্ডসকম্ব ২০, স্টোয়িনিস ২৯ রান করেন। শেষের দিকে ৫টি চার ও ১টি ছক্কায় ৩৭ বলে ৪৮ রান করেন ম্যাক্সওয়েল।
দলের জন্য জুটি গড়তে গিয়ে ওয়ানডে ক্যারিয়াারের সপ্তম ও ভারতের বিপক্ষে দ্বিতীয় সেঞ্চুরির দেখা পান মার্শ। তিন অংকে পা দিয়েও দমে যাননি তিনি। বড় ইনিংস খেলছিলেন তিনি। শেষ পর্যন্ত ৪৮তম ওভারের পঞ্চম বলে থামেন মার্শ। ১১টি চার ও ৩টি ছক্কায় ১২৩ বলে ১৩১ রান করে ভুবনেশ্বর কুমারের শিকার হন মার্শ। তার ব্যাটিং নৈপুন্যে ৫০ ওভারে ৯ উইকেটে ২৯৮ রানের বড় সংগ্রহ পায় অস্ট্রেলিয়া। ভারতের ভুবেনশ্বর ৪টি ও সামি ৩টি উইকেট নেন।
জবাবে ব্যাট হাতে এবার ভালো শুরু এনে দেন ভারতের দুই ওপেনার শিখর ধাওয়ান ও রোহিত শর্মা। ৪৬ বলে ৪৭ রানের জুটি গড়েন তারা। ৫টি চারে ২৮ বলে ৩২ রান করা ধাওয়ানকে শিকার বানিয়ে অস্ট্রেলিয়াকে প্রথম ব্রেক-থ্রু এনে দেন অস্ট্রেলিয়ার পেসার জ্যাসন বেহরেনডর্ফ ।
ধাওয়ানের মত ভালো শুরু করে বড় ইনিংস খেলতে পারেননি আগের ম্যাচে সেঞ্চুরি করা রোহিত। ২টি করে চার ও ছক্কায় ৫২ বলে ৪৩ রান করেন রোহিত। কোহলির সাথে ৫৪ রানের জুটি গড়েন রোহিত।
১০১ রানের মধ্যে দুই ওপেনারের বিদায়ের পর দলের হাল ধরেন অধিনায়ক কোহলি ও আম্বাতি রাইদু। বেশ সর্তকতার সাথে খেলতে থাকেন তারা। তাই ধীরলয়েই দেড়শ’তে পৌঁছায় ভারতের রান। দলীয় ১৬০ রানে এই জুটিতে ভাঙ্গন ধরান অস্ট্রেলিয়ার স্পিনার ম্যাক্সওয়েল। ৩৬ বলে ২৪ রান করে আউট হন আম্বাতি। তৃতীয় উইকেটে কোহলির সাথে ৭৭ বলে ৫৯ রান যোগ করেন রাইদু।
রাইদুর বিদায়ে উইকেটে আসেন ধোনি। এবারও শুরু থেকে বেশ সর্তকই ছিলেন ধোনি। তবে অন্যপ্রান্ত দিয়ে মারমুখী মেজাজে ছিলেন ভারত দলপতি। তাই রানের গতি নিয়ে খুব বেশি চিন্তা করতে হয়নি ধোনিকে।
তবে এরমধ্যে ১০৮তম বলে নিজের ৩৯তম ওয়ানডে সেঞ্চুরির দেখা পান কোহলি। সেঞ্চুরির পরই কোহলিকে থামিয়ে দিয়ে অস্ট্রেলিয়াকে খেলায় ফেরানোর পথ দেখান প্রথম ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার জয়ের নায়ক পেসার জেই রিচার্ডসন। ৫টি চার ও ২টি ছক্কায় ১১২ বলে ১০৪ রান করেন কোহলি। ধোনির সাথে ৭৮ বলে ৮২ রান দলকে এনে দেন কোহলি। এরমধ্যে কোহলির অবদান ছিলো ৪৪ বলে ৫১ রান।
কোহলি যখন ফিরেন তখন ভারতের জয়ের জন্য প্রয়োজন পড়ে ৩৮ বলে ৫৭ রান। এ অবস্থায় ক্রিজে ধোনির সঙ্গী হন দিনেশ কার্তিক। অস্ট্রেলিয়ার বোলারদের বিপক্ষে প্রতিরোধ গড়ে তুলেন ধোনি-কার্তিক। তাই এই জুটি ভাঙ্গতে অস্থির হয়ে উঠেন অস্ট্রেলিয়ার বোলাররা। শেষ পর্যন্ত নিজেদের সেরাটা প্রদর্শন করে ৪ বল বাকী থাকতে ভারতকে জয় এনে দেন ধোনি ও কার্তিক। হাফ-সেঞ্চুরি তুলে ৫৪ বলে অপরাজিত ৫৫ রান করেন ধোনি। ১৪ বলে ২৫ রানে অপরাজিত থাকেন কার্তিক। ধোনির ইনিংসে ২টি ছক্কা ও কার্তিকের ইনিংসে ২টি চার ছিলো। ম্যাচ সেরা হয়েছেন ভারতের অধিনায়ক কোহলি।
আগামী ১৮ জানুয়ারি মেলবোর্নে অনুষ্ঠিত হবে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
অস্ট্রেলিয়া : ২৯৮/৯, ৫০ ওভার (মার্শ ১৩১, ম্যাক্সওয়েল ৪৮, ভুবেনশ্বর ৪/৪৫)।
ভারত : ২৯৯/৪, ৪৯.২ (কোহলি ১০৪, ধোনি ৫৫*, ম্যাক্সওয়েল ১/১৬)।
ফল : ভারত ৬ উইকেটে জয়ী।
ম্যাচ সেরা : বিরাট কোহলি (ভারত)।
সিরিজ : তিন ম্যাচের সিরিজে ১-১ সমতা।