বাসস প্রধানমন্ত্রী-৮ : আমরা একটি ভবিষ্যত প্রজন্ম তৈরি করে রেখে যেতে চাই : প্রধানমন্ত্রী

628

বাসস প্রধানমন্ত্রী-৮
শেখ হাসিনা-শুভেচ্ছা
আমরা একটি ভবিষ্যত প্রজন্ম তৈরি করে রেখে যেতে চাই : প্রধানমন্ত্রী
ঢাকা, ৮ জানুয়ারি ২০১৯ (বাসস) : নবগঠিত মন্ত্রিসভাকে জনগণ ভালভাবেই গ্রহণ করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তাঁর দল দেশকে এগিয়ে নিতে নতুন একটি ভবিষ্যত প্রজন্ম তৈরি করে রেখে যেতে চায়।
নবগঠিত মন্ত্রিপরিষদে নতুনদের স্থান দেয়া সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা একটা ভবিষ্যৎ প্রজন্ম তৈরি করে রেখে যাই। আমার পরিস্কার কথা সেজন্যই আমরা পরিবর্তন এনেছি। সবার ওপর নজর রাখবো এবং কে কি করে আমরা দেখতে চাই।’
তিনি বলেন, ‘বয়স ৭০-এর ওপরে হয়ে গেছে কখন মরে যাই তার ঠিক নাই। তাই আমরা নতুন প্রজন্মের ওপরে দায়িত্ব দিয়ে দেখতে চাই তাঁরা কেমন পারে। যদিও নিউজেনারেশনের কারোরই বয়স এখন কম নয়, কাজেই তাদের সবাইকে বিষয়গুলো জানতে হবে, বুঝতে হবে এবং তারপর কাজ করতে হবে।’
নবগঠিত মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটি এবং উপদেষ্টা পরিষদের নেতৃবৃন্দ আজ রাতে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে শুভেচ্ছা জানাতে এলে তিনি এ কথা বলেন।
আওয়ামী লীগ সভাপতি তাঁর মন্ত্রিপরিষদে নতুনদের বেশি সুযোগ করে দেয়ার সম্পর্কে বলেন, ‘আমরা এবার যে সরকার গঠন করলাম সেখানে আমি একটা কাজ করেছি। যারা ১০ বছর একটানা মন্ত্রী ছিলেন, তাদের পরিবর্তে নতুন কিছু মুখ নিয়ে আসতে চাচ্ছিলাম।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘তবে যারা মন্ত্রী ছিলেন তারা সফল ছিলেন বলেই উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশের উত্তরণ ঘটেছে এবং জনগণের জীবন-মানের উন্নয়ন হয়েছে। কাজেই এমন কথা যেন আমি না শুনি তারা ব্যর্থ ছিলেন বলেই বাদ দেয়া হয়েছে।’
মন্ত্রিসভায় পরিবর্তনের কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, ‘আমাদের তো ৭০-এর ওপরে বয়স হয়ে গেছে। তাই নতুন একটি সেটকে একটু ট্রেনিং করানো, বা তাদেরকে আনা বা তাঁরা যেন একটু শিখতে পারে, আমরা তা করতে চেষ্টা করেছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যেসব জেলায় আজ পর্যন্ত কোনদিন কেউ মন্ত্রী হয় নাই ’৯৬ কিংবা ২০০৮ কিংবা ২০১৪ সালেও হয়নি সেসব জেলাগুলো থেকে তিনি মন্ত্রী করার একটা চেষ্টা করেছেন। কারণ স্বাভাবিক একটা ধারণা রয়েছে যে, জেলার মন্ত্রী হয় সে জেলার উন্নয়ন হয়। যদিও তাঁর সরকার উন্নয়নের সমতায় বিশ্বাসী।
’৯১ এবং ২০০১ সালের নির্বাচনের পর দলের নেতা-কর্মীদের হত্যা এবং সংখ্যালঘু নির্যাতন প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসতে না পারলে এ সময় বিএনপি-জামায়াত দেশে গণহত্যা শুরু করে দিত। তাদের সেই চরিত্র আমরা দেখেছি। কিন্তু তাদের মত আচরণ আমরা করতে চাই না। আমরা চাই দেশের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকুক।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর চলমান মেগা প্রজেক্টগুলোর বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করে নবগঠিত মন্ত্রিপরিষদের সদস্যদের উদ্দেশে বলেন, যারা আজকে নতুন দায়িত্ব পেয়েছেন তাঁদেরকে দেশের চলমান সফলতাটাকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। সবকিছু জেনে বুঝে তারপর পদক্ষেপ নিতে হবে। আমরা একটু ট্রেনিং দিয়ে রেখে যেতে চাই।
প্রধানমন্ত্রী এবারের নির্বাচন তাঁর দেশের জনগণের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল উল্লেখ করে বলেন, মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি না স্বাধীনতা বিরোধী, খুনী, আগুন সন্ত্রাসীরা ক্ষমতায় আসবে সেটার একটা প্রশ্ন ছিল। তবে তিনি যেখানেই গিয়েছেন (ভোটের জন্য) জনগণের মাঝে অভূতপূর্ব সাড়া প্রত্যক্ষ করেছেন। কারণ তাঁদের মাঝে এই ধারণা বদ্ধমূল ছিল নৌকা ক্ষমতায় আসলেই তাঁরা কেবল শান্তিতে থাকতে পারবেন, দেশের উন্নয়ন অব্যাহত থাকবে।
তিনি বলেন, তরুণ, যুবক, আবাল, বৃদ্ধ বনিতা-সকল শ্রেণীর মানুষের নৌকার ভোট প্রদানের জন্য আকাক্সক্ষাটা তীব্র ছিল। তিনি এ সময় রংপুর সহ দেশের বিভিন্ন আনাচে-কানাচে নির্বাচনী প্রচার চালাতে যাবার সময়ে হাজার হাজার মানুষের ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার উদাহরণ দেন।
শেখ হাসিনা মনোনয়ন নিয়ে ব্যবসা করাই বিএনপি’র ভরাডুবির অন্যতম কারণ বলে পুনরুল্লেখ করে তিনি কারো নাম উল্লেখ না করে লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এবং ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলাসহ বিভিন্ন মামলার ফেরারী আসামীর বিরুদ্ধে অর্থ নিয়ে দলের মনোনয়ন বিক্রিরও অভিযোগ করেন।
তিনি বলেন, দলের প্রধান খালেদা জিয়া এতিমের অর্থ আত্মসাতের মামলায় কারাগারে থাকার পর ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান যাকে নিযুক্ত করলো সেই তারেক রহমানও ফেরারী আসামী হওয়ায় দলের নেতৃত্বের শূন্যতা তৈরী হয়েছিল, যে কারণে আজকে তাদের এই দুরাবস্থা ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি নিজেদের কপালটা নিজেরা পুড়িয়েছে। তাদের যেখানে ভাল ভাল প্রার্থী ছিল তাদেরকে তাঁরা মনোনয়ন না দিয়ে টাকার বিনিময়ে অখ্যাত কাউকে দিয়ে দিয়েছে। মালয়েশিয়া থেকেও দু’জন এসে বিরাট অংকের টাকা দিয়ে মনোনয়ন নিয়েছে, যাদের এলাকাতে কেউ চেনেই না। আর সবচেয়ে বড় কথা জনগণ তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। মানুষ তাদের বিশ্বাস করতে পারেনি।’
তিনি বলেন, ‘বিএনপি’র ঘুষ, দুর্নীতি, মানি লন্ডারিং, ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলা, ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা, আগুন সন্ত্রাস, এতিমের অর্থ আত্মসাত- এগুলো মানুষ একবারেই গ্রহণ করতে পারে নাই। সেজন্য তাঁদের ভোট একবারেই কমে গিয়েছিল।’
২০০৮ সালে ক্ষমতা গ্রহণের দুই বছর পর থেকেই প্রতি ৬ মাস অন্তর সারা বাংলাদেশে দলের প্রার্থীদের নির্বাচনী এলাকায় জরিপ চালিয়ে কার কি অবস্থা তা জানার চেষ্টা করতেন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘নির্বাচনের ৭/৮ মাস আগে এই সার্ভের আমি যে ফাইনাল রিপোর্ট পাই সেখানেই দেখা যাচ্ছিল বিএনপি’র ভোটের পরিমাণ অনেক অনেক কম।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, এই সার্ভে রিপোর্ট যে শুধু এজেন্সীর মাধ্যমে নেয়া হয়েছিল তাও নয়, এক্ষেত্রে যেখানে তাঁর সন্দেহ হয়েছে সেখানে আন্তর্জাতিক সংস্থার মাধ্যমেও সার্ভে করানো হয়। এরফলে আজ আওয়ামী লীগ বিপুলভাবে জয়লাভ করেছে। কারণ আমরা এই সার্ভের পর সে অনুযায়ী নিদ্ধান্ত নিতাম কিভাবে এখানকার মহিলা এবং তরুণদের ভোটগুলোকে পাওয়া যাবে।
তিনি বলেন, সেজন্য নির্বাচনী ইশতেহারেও তাঁর দল তরুণ প্রজন্মের জন্য কি কি করা যায় সে ধরনের একটি অধ্যায়ের সংযোজন করেছে।
তিনি নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন দেশে এবং সেসব দেশের দূতাবাসে গিয়ে বিএনপি’র অভিযোগ জানানোর সমালোচনা করে বলেন, পরবর্তীতে নির্বাচন পর্যবেক্ষণে আসা বিভিন্ন বিদেশী সংস্থার প্রতিনিধিরা দেশের ভোট কেন্দ্রে ভোটার তথা মহিলা ভোটারদের উপস্থিতি দেখে অবাক হয়ে গেছেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘পর্যবেক্ষকদের অনেকেই মন্তব্য করেন আমরা শুনলাম কি আর দেখছি কি।’
তিনি তাঁর কাছে থাকা ২০০৮ সালের নির্বাচনের ফলের উল্লেখ করে বলেন, আমাদের সে সময়কার প্রাপ্ত ভোট আর বর্তমানের খুব বেশি তফাৎ নাই। তবে ২০০৮ এর নির্বাচনী আসন থেকে এবার আসন আমরা বেশি পেয়েছি। বিএনপি’র মনোনয়নের কারণে তাদের জেতা সীটগুলোও তারা হারিয়েছে।
তিনি বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনে প্রদত্ত ভোটের হার ছিল ৮৬ দশমিক ৯১ শতাংশ আর ২০১৮ সালে হচ্ছে ৮০ দশমিক ৪১ শতাংশ।
শেখ হাসিনা বলেন, নির্বাচন অনেকটা অংকের মত হিসেব করে যদি করা যায় তাহলে ভালো রেজাল্ট পাওয়া যায়। শুধু মনোনয়ন দেয়া বা কাকে দেয়া হলো সেটা বিষয় নয়, বিষয়টা অনেকটা অংকের মত হিসেবে করা।
উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, ২০০১ সালের নির্বাচনে পরাজয়ের পর তিনি সকলকে নিয়ে বসে সারাদেশের ভোট কেন্দ্রের কোন সব কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা শতকরা ৩০ শতাংশের কম ভোট পেয়েছিল তাঁর একটি তালিকা করেন। সেসব কেন্দ্রে প্রার্থী এবং এজেন্টদের নিয়ে তিনি দিনের পর দিন মিটিং করেছেন। সেই সাথে প্রত্যেক ইউনিয়ন এবং উপজেলার সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক এবং জেলা কমিটি নিয়ে সভা করেছেন ধানমন্ডী ৩ নং কার্যালয়ে। পরে সকলকেই একটি করে করণীয় তিনি ঠিক করে দেন যে. এই সব কেন্দ্রের ভোটারদের কাছে তাঁদের পৌঁছে ভোট নিতে হবে।
বাসস/এএসজি-এফএন/এসএইচ/২৩৪০/এবিএইচ