মন্ত্রিসভায় ইপিজেড শ্রমিক আইনের খসড়া অনুমোদন

866

ঢাকা, ৩ ডিসেম্বর ২০১৮ (বাসস) : শিল্প-কারখানাগুলোতে কর্মবিরতি ও লকআউটের অধিকারসহ রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ এলাকায় (ইপিজেড) ট্রেড ইউনিয়ন কার্যক্রমের অনুমতি দিয়ে মন্ত্রিসভা আজ খসড়া ‘বাংলাদেশ ইপিজেড লেবার এ্যাক্ট, ২০১৮’ অনুমোদন করেছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে আজ সোমবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের বর্তমান মেয়াদের মন্ত্রিসভার শেষ বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়।
সভা শেষে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. শফিউল আলম বলেন, ‘বাংলাদেশ শ্রম আইনের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে এই আইনটি প্রণয়ন করা হয়েছে। শ্রমিক বান্ধব করার লক্ষ্যে এই আইনে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) সুপারিশ এবং কানাডা ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পর্যবেক্ষণ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।’ তিনি জানান, শ্রমিকদের জন্য নমনীয় করে এই আইন প্রণয়ন করা হয়েছে এবং একটি শ্রমিক সংগঠন গঠনের জন্য ন্যূনতম সদস্যপদের সীমা ৩০% থেকে কমিয়ে ২০% করা হয়েছে। এই আইন অনুসারে যেকোন ধর্মঘট কার্যকর করার জন্য ইপিজেড-এর শ্রমিক সংগঠনগুলোকে সেখানে কর্মরত শ্রমিকদের তিন-চতুর্থাংশের পরিবর্তে দুই-তৃতীয়াংশের সমর্থন প্রয়োজন হবে।
বাংলাদেশ শ্রম আইনের সাথে সঙ্গতি রেখে শ্রমিক সংগঠনগুলো তাদের শ্রমিক কল্যাণ সমিতির গঠনতন্ত্র প্রণয়ন করতে পারবে।
নতুন আইনে, চাকুরিতে ইস্তফা দেওয়ার জন্য একজন কর্মি ‘সার্ভিস বেনিফিট’ হিসাবে বিদ্যমান বিধান অনুযায়ী চাকুরি জীবনের প্রতিবছর থেকে ৩০ দিনের পরিবর্তে ৪৫দিনের বেনফিট পাবেন, যা চাকুরির ২৫ বছর পূর্ণ হওয়ার পর কার্যকর হবে।
এই আইনের আওতায়, বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেপজা) পাশাপাশি ‘কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর’ কলকারখানাসমূহ পরিদর্শন করতে পারবে।
এ আইনে শ্রমিক কল্যাণ সমিতি ফেডারেশন গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে এবং শ্রমিক সংগঠন গঠনের পূর্বে ‘রেফারেন্ডাম’-এর বিধান ও নতুন শিল্পকারখানা প্রতিষ্ঠার তিন মাসের মধ্যে শ্রমিক সংগঠন গঠনের ওপর নিষেধাজ্ঞার বিধান বাতিল করা হয়েছে।

সংবাদপত্র ও সংবাদ সংস্থাসমূহে কর্মরত সাংবাদিক ও কর্মচারীদের নতুন নিয়মে বেতন-ভাতা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা প্রদানের জন্য নবম ওয়েজবোর্ড রিপোর্ট মূল্যায়ন ও সরকারের নিকট উপস্থাপনের লক্ষ্যে মন্ত্রিসভা আজ সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রীর নেতৃত্বে ৫ সদস্যের একটি কেবিনেট কমিটি গঠনেরও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।
মন্ত্রী পরিষদ সচিব জানান, কমিটির সদস্যরা হচ্ছেন শিল্প, স্বরাষ্ট্র, তথ্য ও শ্রমমন্ত্রী। তথ্যমন্ত্রী এই কমিটিকে সাচিবিক সহায়তা দেবেন।
মন্ত্রী পরিষদ সচিব বলেন, ‘২০১৯ সালের ২৮ জানুয়ারির মধ্যে ওয়েজবোর্ডের গেজেট প্রকাশের বাধ্য-বাধকতা থাকায় অবিলম্বে এই রিপোর্ট পেশের জন্য কমিটিকে নির্দেশনা প্রদান করা হয়। তিনি আরো বলেন, কেবিনেট কমিটির মূল্যায়নের পর সাংবাদিকদের জন্য নবম ওয়েজবোর্ড রোয়েদাদ ঘোষণা করা হবে।
তাছাড়া মন্ত্রিসভার আজকের বৈঠকে বীমা কর্পোরেশন আইন, ২০১৮, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এভিয়েশন এন্ড এরোস্পেস ইউনিভার্সিটি আইন, ২০১৮, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট (সংশোধন) আইন, ২০১৮ এর খসড়া এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম (ভূমি অধিগ্রহণ) নিয়ন্ত্রণ, ১৯৫৮ এর সংশোধনীর খসড়ার অনুমোদন দেয়া হয়।

১৯৭৩ সালে প্রণীত বিদ্যমান আইনের স্থলে ‘দ্য বীমা কর্পোরেশন এ্যাক্ট’ বহাল হবে। নতুন আইনে জীবন বীমা কর্পোরেশন এবং সাধারণ বীমা কর্পোরেশন- উভয় প্রতিষ্ঠানের ‘অনুমোদিত ও পরিশোধিত’ সমর্পণ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
নতুন আইনের আওতায় জীবন বীমা কর্পোরেশনের ‘অনুমোদিত পুঁজি’ ৩শ’ কোটি টাকা এবং ‘পরিশোধিত পুঁজি’ ৩০ কোটি টাকা। সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের ‘অনুমোদিত পুঁজি’ ৫শ’ কোটি টাকা এবং ‘পরিশোধিত পুঁজি’ ১২৫ কোটি টাকা।
শুরুতে রাষ্ট্র- পরিচালিত এই দু’টি বীমা কর্পোরেশনের প্রতিটির অনুমোদিত পুঁজি ছিল ২০ কোটি টাকা।
নতুন আইন অনুযায়ী, বিদ্যমান ৭ সদস্যের পরিচালনা পর্ষদের পরিবর্তে কর্পোরেশনগুলোতে বিভিন্ন পেশার প্রতিনিধিত্বকারী ১০ সদস্যের পরিচালনা পর্ষদ থাকবে।
‘আন্তর্জাতিক মার্তৃভাষা ইনস্টিটিউট (সংশোধন) আইন, ২০১৮’-এর আওতায় এই প্রতিষ্ঠানটির প্রধান হিসাবে ‘মহাপরিচালক’-এর পরিবর্তে একজন ‘পরিচালক’ নিয়োগের মাধ্যমে জনবল কাঠামো পুনর্বিন্যাস করা হবে।
‘বি ক্যাটাগরি’ প্রতিষ্ঠান হিসাবে ‘ইউনেস্কো’র প্রধান একজন মহাপরিচালক এবং আন্তর্জাতিক মার্তৃভাষা ইনস্টিটিউটে অনুরূপ নামে একটি পদ থাকতে পারে না। তাই ইনস্টিটিউটের আইনে এই সংশোধন প্রয়োজন।
সংশোধনী অনুসারে ‘মহাপরিচালক’-এর পরিবর্তে একজন ‘পরিচালক’ আন্তর্জাতিক মার্তৃভাষা ইনস্টিটিউট-এর প্রধান হবেন এবং ‘অতিরিক্তি মহাপরিচালক’রা ‘অতিরিক্ত পরিচালক’ হিসেবে অভিহিত হবেন।
নতুন আইনের আওতায়, ইউনেস্কো বিধিমালা অনুযায়ী বিদ্যমান ২২ সদস্যের পরিবের্ত এই ইনস্টিটিউটে ৬-সদস্যের একটি পরিচালনা পর্ষদ থাকবে।
‘চিটাগং হিল ট্র্যাক্টস (ল্যান্ড একুইজিশন) রেগুলেশন, ১৯৫৮’-অনুসারে পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণ সরকারি কাজে তাদের জমি অধিগ্রহণ করলে দুইশ’ শতাংশ ক্ষতিপূরণ এবং বেসরকারি কাজে অধিগ্রহণ করলে তিনশ’ শতাংশ ক্ষতিপূরণ পাবে।
বৈঠকের শুরুতে সফররত ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে টেস্ট ম্যাচ বিজয়ী হওয়ায় বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলকে অভিনন্দন জানানো হয়। মন্ত্রিসভায় বীর প্রতীক তারামন বিবির মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করা হয়।
মন্ত্রী পরিষদ সচিব বলেন, সভায় তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু দশম সংসদের বিভিন্ন অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া বক্তব্যের সংকলনের একটি কপি হস্তান্তর করেন।