বাসস দেশ-২২ : সিলেটে ১২ বছরে কর আদায় বেড়েছে ৬ গুণ

607

বাসস দেশ-২২
সিলেট-কর
সিলেটে ১২ বছরে কর আদায় বেড়েছে ৬ গুণ
সিলেট, ১১ নভেম্বর, ২০১৮ (বাসস) : সিলেট অঞ্চলে গত ১২ বছরের ব্যবধানে কর আদায়ের হার ৬ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০০৫-০৬ অর্থবছরে সিলেটে কর আদায় হয়েছিল ৮৬ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৫১৯ কোটি ১৭ লাখ টাকা আদায় হয়েছে।
কর অঞ্চল সিলেটের কর্মকর্তারা বলছেন, ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার, সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি ও নানামুখি পদক্ষেপের ফলে সিলেটের মানুষ কর প্রদানে আগ্রহী হচ্ছেন। এ কারণে সিলেটে কর আদায়ের পরিমাণ কয়েকগুণ বেড়েছে। নতুন করদাতার সংখ্যা দিনদিন বাড়ছে।
সিলেট কর অঞ্চলে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে করদাতার সংখ্যা ছিল ৮০-৯০ হাজার। বর্তমানে মোট করদাতার সংখ্যা ২ লাখ ৫ হাজার ৪৫৯।
আঞ্চলিক কর অফিস থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে টিআইএনধারী রয়েছে ১ লাখ ৩৩ হাজার ৯৪৬। ব্যক্তি করদাতার সংখ্যা ৯৪ হাজার ২০৩, কোম্পানী করদাতা ১৪৪ এবং অন্যান্য ১ হাজার ১১২জন।
২০১৭-১৮ অর্থবছরে রিটার্ন দাখিলের সংখ্যা ৬৪ হাজার ৯৮৯। রিটার্নের সাথে আদায় হয়েছে ৩৬ কোটি ৭৭ লাখ ৫৫ হাজার ১৮৪ টাকা। চলতি অর্থবছরের অক্টোবর পর্যন্ত ১১ হাজার ৬২০ জন রিটার্ন দাখিল করেছেন এবং আদায় হয়েছে ৪ কোটি ৫৬ লাখ ৫৫ হাজার ৫৭৫ টাকা।
কর অঞ্চল সিলেটের কমিশনার আবু হান্নান দেলওয়ার হোসেন বাসসকে বলেন, সিলেটে কর আদায়ের হার আশাব্যঞ্জক। কর আদায়ে মানুষের মধ্যে যে ভয় ছিলো তা অনেকটা কেটে গেছে। গত অর্থবছরে ১৮ হাজার নতুন করদাতা যুক্ত হয়েছে। গত ৪ মাসে ৬ হাজার নতুন করদাতার কর আদায় করেছে। চলতি মাসের আরো এক হাজার করদাতা বাড়বে।
কর কমিশনার বলেন, আমরা মানুষকে বোঝানোর চেষ্টা করছি। কর প্রদান পদ্ধতি এখন আগের তুলনায় সহজ। মানুষ এগিয়ে আসছে, আমরা তাদের সহযোগিতা করছি। সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্কের মাধ্যমে কর প্রদানে উৎসাহিত করা হচ্ছে।
এ অঞ্চলে শিল্পকারখানা গড়ে উঠলে কর আদায়ের হার অনেকগুণ বেড়ে যাবে বলে মনে করেন আবু হান্নান দেলওয়ার হোসেন। তিনি বলেন, সিলেটে এখনও বড়ধরণের শিল্প-কারখানা গড়ে উঠেনি হয়নি। স্পেশাল ইকোনমিক জোন প্রতিষ্ঠা করেছে সরকার। সিলেটের মানুষের বিনিয়োগ বাড়লে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার হবে এবং সরকারও রাজস্ব পাবে।
কর অঞ্চল জানায়, ২০০৬-০৭ অর্থবছরে সিলেটে একশ’ এক কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে। যা লক্ষ্যমাত্রার সমান। ২০০৭-০৮ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা একশ’ ৫০ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়। বিপরীতে আদায় হয়েছে একশ’ ৫৫ কোটি টাকা। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা একশ’ ৭৩ কোটি টাকা ছিল। আদায় হয়েছে একশ’ ১৮ কোটি ৬০ লাখ টাকা। ২০০৯-১০ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা একশ’ ৮৫ কোটি টাকার বিপরীতে আদায় হয়েছে একশ’ ৩০ কোটি ৮৫ লাখ টাকা।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর ২০১০-১১ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় একশ’ ৮৫ কোটি টাকা। বিপরীতে আদায় হয় একশ’ ৭৮ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। ২০১১-১২ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে দুইশ’ ৮১ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়। বিপরীতে আদায় হয় দ শ’ ৮৪ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। ২০১২-১৩ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা আরো বাড়িয়ে তিনশ’ ৫৫ কোটি টাকা নির্ধারণ হলে আদায় হয় তিনশ’ ৭১ কোটি ৮৬ লাখ টাকা।
২০১৩-১৪ বছরে লক্ষ্যমাত্রা চারশ’ ৫০ কোটি টাকার বিপরীতে আদায় হয়েছে তিনশ’ ৯২ কোটি ৪০ লাখ টাকা। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে আদায় হয়েছে ৩৫৯ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে আদায় হয় ৩৮৩ কোটি টাকা। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৫০০ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এর বিপরীতে আদায় হয় ৫১০ কোটি টাকা। সর্বশেষ ২০১৭-১৮ অর্থবছরে আদায় হয়েছে ৫১৯ কোটি ১৭ লাখ ২০ হাজার ৫শ’ টাকা।
চলতি অর্থবছরে (২০১৮-১৯) ৮৫২ কোটি ৯৮ লাখ টাকা কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কর কমিশনার আবু হান্নান দেলওয়ার হোসেন। চারমাসে ১১৭ কোটি টাকা আদায় হয়েছে। চলতি মাসে আয়কর মেলায় এক সপ্তাহে ৫০ কোটি টাকারও বেশি আয়কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা তাদের।
তিনি আশা করছেন, টিআইএনধারী যারা নিয়মিত কর আদায় করছেন না তারা এগিয়ে এলে এবং দেশের স্বাভাবিক স্থিতিশীল পরিবেশ বজায় থাকলে তাদের চলতি অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে। তিনি আরও বলেন, করযোগ্য সকল সরকারি কর্মকর্তার বেতন এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে যথাযথ উৎসে কর কর্তন ও আদায়ের কারণেই এই অগ্রগতি হয়েছে।
কর কমিশনার জানান, মাঠ পর্যায়ে করসেবা প্রদানে গতিশীলতা ও মানোন্নয়নের লক্ষ্যে নিয়মিতভাবে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কর্মসূচির আয়োজন করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে সিলেট কর অঞ্চলের ৩৭৬টি ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের ৭২০ জন উদ্যোক্তাকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। এখন করদাতা ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার থেকেই ই-টিআইএন রেজিস্ট্রেশন করতে পারেন।
বাসস/মআম/১৯০০/মরপা