ব্যবসার মাধ্যমেই স্বাবলম্বী হতে চান কান্তা

1179

॥ আবেদা হক লোরা ॥
ঢাকা, ১০ নভেম্বর, ২০১৮ (বাসস) : গত এক দশকে শিক্ষা ক্ষেত্রে দেশের ব্যপক উন্নতি ঘটেছে। শিক্ষার সাথে সাথে সব ক্ষেত্রেই দেশের অভাবনীয় উন্নতি হয়েছে। একজন শিক্ষার্থী শিক্ষা জীবনেই নিজের ভবিষ্যৎ বেছে নেয়। অর্থাৎ ভবিষ্যতে তিনি কি হতে চান- সে লক্ষ্য নিয়েই অনেকে পড়াশোনা করেন। তবে শিক্ষা জীবন শেষে সবাই যে নিজের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে পারবেন, তেমনটা না-ও ঘটতে পারে। তাই আবার অনেকেই শিক্ষা জীবনেই নিজের পথ বেছে নেন। বর্তমানে দেশের শিক্ষার হার বাড়লেও চাকরির হার তেমন বাড়ছে না। ফলে অধ্যয়নরত অবস্থাতেই অনেকে নিজেকে কিভাবে প্রতিষ্ঠিত করা যায় সেই উপায় নিয়ে ভাবছেন। কেউ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে শিক্ষানবিশ হিসেবে কাজ করছেন। কেউ কেউ আবার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে গবেষণায় ব্যস্ত। আবার কেউ কেউ পড়াশোনার পাশাপাশি ছোটখাটো ব্যবসায় শুরু করেছেন। যার মাধ্যমে নিজকে ব্যবসায়ী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারেন তিনি। তাদেরই একজন মারজিনা আক্তার কান্তা। বেসরকারি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি ও সামাজিক বিজ্ঞান বিভাগে প্রথম বর্ষে অধ্যয়নরত কান্তা। তারুণ্যের উদ্যম এবং স্বাধীন হওয়ার অদম্য ইচ্ছা নিয়েই নারী উদ্যোক্তা হওয়ার যাত্রা শুরু করেন তিনি, হতে চান স্বাবলম্বী। কিন্তু এ ক্ষেত্রে খুব সহজেই সাফল্য পাওয়াটা সহজ কাজ নয়। ব্যবসা জগতের অন্যান্য উদ্যোক্তাদের বয়স এবং অভিজ্ঞতার তুলনায় খুব একটা পরিণত না হলেও কর্ম দক্ষতা ও একাগ্রতার মাধ্যমে নিজের ব্যবসায়কে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।
আর্থিকভাবে স্বনির্ভর হওয়ার জন্য ব্যবসাকে অবলম্বন করার তার মূল প্রেরণা আসে চার মাসের একটি চাকরির অভিজ্ঞতা থেকে। ২০১৫ সালে এইচএসসি সম্পন্ন করার পর তিনি একটি অনলাইন ভিত্তিক ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিলেন। প্রতিষ্ঠানটি শিশুদের বিভিন্ন পণ্য এবং মহিলাদের বিভিন্ন প্রসাধনী বিক্রি করত। চাকরিতে থাকালীন বিভিন্ন কাজ করার সময় বুঝতে পারলেন যে, তিনি নিজেও এমন ছোটখাটো একটি ব্যবসায় শুরু করতে পারেন। যার মাধ্যমে তিনি নিজেকে স্বাবলম্বী হিসেবে গড়ে তুলতে পারবেন। এমন চিন্তা থেকেই চাকরি ছেড়ে স্বাবলম্বী হওয়ার যাত্রা শুরু করেন তিনি। টিউশনি করে নিজে রোজগার করা ৩৬,০০০ (ছত্রিশ হাজার) টাকা মূলধন নিয়ে নারীদের বিভিন্ন সামগ্রী নিয়ে ব্যবসা শুরু করেন কান্তা।
প্রথমে চীনের কুয়াংচৌ শহর থেকে পণ্য আমদানি করে ব্যবসা শুরু করেন তিনি। তিন মাস পূর্বে অনলাইনে হিজাব বিক্রি করার মধ্য দিয়ে ব্যবসায় জগতে পদচারণ করেন বিশ বছরের এই তরুণ নারী উদ্যোক্তা। স্বল্প সময়ে সুনাম কুড়াতে সক্ষম হওয়ায় হিজাবের সাথে সাথে তিনি বর্তমানে লেডিস ব্যাগসহ বিভিন্ন প্রসাধনী পণ্যও যুক্ত করেন ব্যবসায়ের সঙ্গে। ক্রেতাদের মধ্যে তার পণ্যের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে এবং তার ব্যবসায়ের বর্তমান অবস্থা অনুযায়ী ভবিষ্যতে তার ব্যবসায়ের সাফল্য নিয়ে তিনি আশাবাদী। তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হচ্ছে ব্যবসাকে আরও বড় পরিসরে স্থাপনের জন্য আগামী বছর নাগাদ অনলাইনের পাশাপাশি একটি আউট-লেট স্থাপন করা।
কান্তা বলেন, ‘সমাজে নারীরা এখন সব কাজই করছে। তারা সরকারি চাকরি থেকে শুরু করে ব্যবসা, বাণিজ্য, বিমান চালনা পর্যন্ত করছে। ভবিষ্যতে যাতে অন্যের ওপর নির্ভরশীল হতে না হয় সেজন্য শিক্ষা জীবনেই ব্যবসা শুরু করেছি। যেভাবে সাড়া পাচ্ছি তাতে ব্যবসার পরিধি আরো বাড়িয়ে অনেকের কর্ম সংস্থানের সৃষ্টি করা সম্ভব হবে। মূলধন বাড়াতে নগদ অর্থের প্রয়োজন। এ জন্য ব্যাংক ঋণের জন্য আবেদন করেছি। শিগগিরই বড় একটা ঋণ পাব বলে আশা করছি।’
নিজের ব্যবসাকে একটি ব্র্যান্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চান এখনো শিক্ষা জীবন শেষ না করা এ তরুণী। পাশাপাশি সামাজিক দায়বদ্ধতা হিসেবে নিজের ব্যবসায়ের আয়ের কিছু অংশ অসহায় এবং দুস্থ শিশুদের সাহায্যে দেয়ার লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
একজন নারী হিসেবে চার দেয়ালের বাইরে এসে নিজেকে স্বাবলম্বী করার মত পদক্ষেপ নেয়া এবং তার পরিপ্রেক্ষিতে কাজ করা খুব একটা সহজ নয়। অন্যান্য নারী উদ্যোক্তাদের মত তিনিও তার ব্যবসায় পরিচালনা করতে গিয়ে সামাজিক দিক থেকে নানা সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন। ব্যবসায়ের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আর্থিক সমস্যার সম্মুখীনও হতে হয়েছেন তিনি। তবে আত্মবিশ্বাস, মানসিক শক্তি এবং সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে তিনি এসব সমস্যার সমাধান করতে সক্ষম হয়েছেন। শুরুতে ‘এই বয়সে এত বড় সিদ্ধান্ত’, ‘পড়াশোনার ক্ষতি করে এসব করে লাভ কি?’, “মেয়ে মানুষ একা কীভাবে সব কিছু করবে?’ এমন নানা নেতিবাচক কথাবার্তা তার পথে বাধা সৃষ্টি করতে চাইলেও পারেনি। মায়ের সম্পূর্ণ সহায়তায় তিনি এখন নিজেকে একজন সফল নারী উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলার পথে এগিয়ে যাচ্ছেন। যদিও তিনি তার বাবাকে কিছু জানাননি। কারণ তিনি নিজের উপার্জন দিয়ে বড় কিছু উপহার দিয়ে তার বাবার মুখে গর্বের হাসি দেখতে চান।
সামাজিক বিভিন্ন প্রতিকূলতা এবং তারপরও থেমে না থাকা সম্পর্কে কান্তা বলেন, ‘কোন কাজ শুরু করতে গেলে সমাজে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা থাকবেই। তবে থেমে গেলে চলবে না, এগিয়ে যেতে হবে। নিজে সৎ থাকলে এবং লক্ষ্যে অবিচল থাকলে কাঙ্খিত সব কিছুই অর্জন করা সম্ভব। তাছাড়া বর্তমান সরকার নারী-পুরুষ সমান নীতিতে বিশ্বাসী। ব্যবসার জন্য এখন ব্যাংক ঋণ পাওয়া যাচ্ছে। সকল সুযোগ-সুবিধা কাজে লাগিয়ে ব্যবসায়ী হিসেবে স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি সামাজিক দায়িত্বটা ভালভাবে পালন করতে চাই।’