এক লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকার এডিপি অনুমোদন

742

ঢাকা, ১০ মে, ২০১৮ (বাসস) : জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (এনইসি) আগামী ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জন্য এক লাখ ৮০ হাজার ৮৬৯ কোটি ১৭ লাখ টাকার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) অনুমোদন দিয়েছে। এর মধ্যে মূল এডিপি নির্ধারণ করা হয়েছে-এক লাখ ৭৩ হাজার কোটি টাকার। স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব তহবিল থেকে ধরা হয়েছে ৭ হাজার ৮৬৯ কোটি ১৭ লাখ টাকা।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর শেরেবাংলানগর এনইসি সম্মেলনকক্ষে এনইসি চেয়ারপারসন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এনইসি সভায় আগামী অর্থবছরের এডিপি অনুমোদন দেওয়া হয়।
বৈঠকশেষে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ মুস্তাফা কামাল অনুমোদিত এডিপির বিষয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘এডিপিবাস্তবায়নে আমরা পরিকল্পিতভাবে এগুচ্ছি।আমাদের লক্ষ্য ২০৪১ সালে উন্নত দেশে যাওয়া। তাই, প্রবৃদ্ধি বাড়িয়ে উন্নয়নের দিকে যাওয়াই মূল লক্ষ্য।’
তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী চারটি বিষয়ের ওপর গুরুত্ব¡ দিতে বলেছিলেন, এগুলো হচ্ছে সবার স্কুলে উপস্থিতি, ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে যাওয়া, ডিজিটাল বাংলাদেশ এবং ২০২১ সালের মধ্যে সবার জন্য বিদ্যুৎ সুবিধা নিশ্চিত করা।এগুলো পূরণের পথে রয়েছি আমরা।’
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘সংসদ নির্বাচনের কারণে কোনো উন্নয়ন কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হবে না। তবে, আগামী অর্থবছরে সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বা আরএডিপি আর হবে না।’
আগামী অর্থবছরের অগ্রাধিকার প্রকল্পের বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, পদ্মা সেতু এবং পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ প্রকল্পের গুরুত্ব বিবেচনা করে নতুন বাজেটে সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে পরিবহন খাতে। এছাড়া অগ্রাধিকার বিবেচনায় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ বিদ্যুৎ।তৃতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ভৌত পরিকল্পনা-পানি সরবরাহ ও গৃহায়ন খাতে।’
আগামী অর্থবছরের জন্য ১৭টি খাতের মধ্যে সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাওয়া ১০টি খাতের মধ্যে পরিবহন খাতে ৪৫ হাজার ৪৪৯ কোটি ৮৭ লাখ টাকা, যা মোট এডিপির ২৬ দশমিক ২৭ শতাংশ। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ খাতে ২২ হাজার ৯৩০ কোটি ২০ লাখ টাকা,যা মোট এডিপির ১৩ দশমিক ২৫ শতাংশ।তৃতীয় সর্বোচ্চ ভৌত-পরিকল্পনা-পানি সরবরাহ ও গৃহায়ন খাতে ১৭ হাজার ৮৮৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকা, যা ১০ দশমিক ৩৪ শতাংশ।
এছাড়া গ্রামীণ অর্থনীতি গতিশীল এবং অধিক কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য চতুর্থ সর্বোচ্চ পল্লী উন্নয়ন ও পল্লী প্রতিষ্ঠান খাতে ১৬ হাজার ৬৯০ কোটি ৩০ লাখ টাকা,যা ৯ দশমিক ৬৫ শতাংশ।শিক্ষার প্রসার ও গুণগতমান বাড়াতে শিক্ষা ও ধর্ম খাতে পঞ্চম সর্বোচ্চ বরাদ্দ ১৬ হাজার ৬২০ কোটি ৩৩ লাখ টাকা,যা ৯ দশমিক ৬১ শতাংশ। রুপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণসহ তথ্য প্রযুক্তির প্রসারে বিজ্ঞান,তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে ১৪ হাজার ২১০ কোটি ৭৩ লাখ টাকা,যা ৮ দশমিক ২১ শতাংশ।
স্বাস্থ্য সেবার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে স্বাস্থ্য-পুষ্টি-জনসংখ্যা ও পরিবার কল্যাণ খাতে বরাদ্দ নির্ধারণ করা হয়েছে ১১ হাজার ৯০৫ কোটি টাকা, যা ৬ দশমিক ৬৮ শতাংশ। খাদ্যে স্বয়ং সম্পূর্ণ হতে কৃষিতে বরাদ্দ ৭ হাজার ৭৬ কোটি ২২ লাখ টাকা, যা ৪ দশমিক শুন্য ৯ শতাংশ। নদী ভাঙ্গন রোধ ও নদী ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে পানি সম্পদ খাতে বরাদ্দ ৪ হাজার ৫৯২ কোটি ৭৮ লাখ টাকা, যা ২ দশমিক ৬৫ শতাংশ। মানবসম্পদ উন্নয়নসহ দক্ষতা বৃদ্ধিতে গতিশীলতা আনতে জনপ্রশাসন খাতে বরাদ্দ ৩ হাজার ৩৬১ কোটি টাকা,যা মোট এডিপির ১ দশমিক ৯৪ শতাংশ।
সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাওয়া ১০ মন্ত্রণালয় ও বিভাগ হচ্ছে-স্থানীয় সরকার বিভাগের অধীনে ২৩ হাজার ৪৩৮ কোটি ১৯ লাখ টাকা, দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ বিদ্যুৎ বিভাগ ২২ হাজার ৮৯২ কোটি ৬০ লাখ টাকা এবং তৃতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ ২০ হাজার ৮১৭ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। এরপর পর্যায়ক্রমে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় ১১ হাজার ৭২০ কোটি ৩৭ লাখ টাকা, রেলপথ মন্ত্রণালয় ১১ হাজার ১৫৪ কোটি ৭২ লাখ টাকা, সেতু বিভাগে ৯ হাজার ১১২ কোটি ১৫ লাখ টাকা, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগে ৯ হাজার ৪০ কোটি ৬৩ লাখ টাকা, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে ৮ হাজার ৩১২ কোটি টাকা,মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগে ৬ হাজার ৬ কোটি ৪৬ লাখ টাকা এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় ও বিভাগের জন্য দেয়া হয়েছে ৫ হাজার ৬০৬ কোটি টাকা।
এদিকে, আগামী অর্থবছরের এডিপিতে স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানসহ মোট ১ হাজার ৪৫২টি প্রকল্প যুক্ত করা হচ্ছে। এর মধ্যে বরাদ্দসহ অনুমোদিত প্রকল্পের সংখ্যা ১ হাজার ৩৪৬টি। (বিনিয়োগ প্রকল্প রয়েছে ১ হাজার ২২৭টি, কারিগরি সহায়তা প্রকল্প ১১৭টি এবং জেডিসিএফ প্রকল্প ২টি)। এছাড়া এসব প্রকল্পের মধ্যে চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের সংশোধিত এডিপি থেকে স্থানান্তরিত হচ্ছে ১ হাজার ২৩৪টি প্রকল্প। আর একেবারেই নতুন অনুমোদিত প্রকল্পের সংখ্যা ১১২টি। তবে এগুলোর বাইরে স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়নের জন্য প্রকল্প থাকছে ১০৫টি।
আগামী এডিপিতে বরাদ্দহীনভাবে থাকছে ১ হাজার ৩৩৮টি প্রকল্প। সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব (পিপিপি) বাস্তবায়নের জন্য ৭৮টি প্রকল্প যুক্ত হচ্ছে আগামী এডিপিতে। আগামী অর্থবছরেই বাস্তবায়ন শেষ হবে এ ধরনের ৪৪৬টি প্রকল্পের তালিকা যুক্ত করা হচ্ছে নতুন এডিপিতে।এর মধ্যে বিনিয়োগ প্রকল্প রয়েছে ৪৩০টি এবং কারিগরি সহায়তা প্রকল্প ১৬টি।