জাতিসংঘের সঙ্গে বাংলাদেশের সংশ্লিষ্টতা জোরদার চান রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী

732

ঢাকা, ২৩ অক্টোবর, ২০১৮ (বাসস) : রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘ ব্যবস্থার সঙ্গে বাংলাদেশের সংশ্লিষ্টতা অব্যাহতভাবে জোরদারের প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন। তাঁরা আজ জাতিসংঘ দিবস উপলক্ষে পৃথক পৃথক বার্তায় এ প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ তাঁর বার্তায় বলেন, ১৯৪৫ সালের ২৪ অক্টোবর প্রতিষ্ঠার পর থেকে জাতিসংঘ সবচেয়ে বেশি প্রভাবশালী ও অংশীদারিত্বমূলক সংস্থায় পরিণত হয়েছে। তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠার ৭ দশক পরও জাতিসংঘ নিরাপত্তা, শান্তি, টেকসই উন্নয়ন ও মানবাধিকার প্রশ্নে সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ ও সক্রিয় রয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা যখন টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজিজ) বাস্তবায়ন করছি, দারিদ্র্য নির্মূলের জন্য সম্মিলিতভাবে লড়াই করছি এবং সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলা করছি তখন জাতিসংঘের ভূমিকা আরো বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে।’
রাষ্ট্রপতি বলেন, জাতিসংঘ যে ভূমিকা পালন করছে অন্য কোন আন্তর্জাতিক সংস্থার পক্ষে তা সম্ভব নয়।
তিনি বলেন, ‘তাই জাতিসংঘ সনদে বিবৃত নীতি-আদর্শ বাস্তবায়নের মাধ্যমে আমাদের সকলের জাতিসংঘের ইতিবাচক ভূমিকা সমুন্নত করার নিবিড় প্রচেষ্টা চালানো প্রয়োজন।’ রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দায়িত্বশীল সদস্য হিসেবে বাংলাদেশ সবসময় জাতিসংঘের নীতি-আদর্শকে সম্মান করবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও মানবিক সমস্যা সমাধানে এবং বিশ্বব্যাপী শান্তি ও নিরাপত্তায় অবদান রাখতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মধ্যে সহযোগিতা গড়ে তোলার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে।
তিনি বলেন, ‘এই স্মরণীয় দিনে আমরা মানুষ যাতে মর্যাদা, শান্তি ও সমৃদ্ধির সাথে বসবাস করতে পারে এবং যেখানে কাউকে বাদ দেয়া হবে না তেমন একটি উন্নত ও উজ্জ্বল ভবিষ্যত গড়ার জন্য জাতিসংঘকে শক্তিশালী করার আমাদের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করছি।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর বার্তায় বলেন, জাতিসংঘ দিবসের এই শুভক্ষণে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পাশাপাশি বাংলাদেশও জাতিসংঘ সনদ ও বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী বিশ্বব্যাপী শান্তি বজায় রাখা, নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, মানবাধিকারের সুরক্ষা এবং উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার দৃঢ় সংকল্প পুনর্ব্যক্ত করছে। তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা লাভের পর বাংলাদেশ ১৯৭৪ সালে জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে জাতিসংঘে যোগ দেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু ১৯৭৪ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ভাষনে উল্লেখ করেছিলেন, বাঙ্গালীরা শান্তিতে এবং বিশ্বের সকল দেশের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে বসবাস করছে। তিনি বলেন, আমাদের লাখ লাখ মানুষের সর্বোচ্চ আত্মত্যাগের স্বীকৃতি জাতিসংঘ সনদে স্থান করে নিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা সারাবিশ্বে টেকসই শান্তি, নিজেদের এবং সমাজের, ধর্ম জাতিগত গোষ্ঠির মধ্যে সম্প্রীতি বজায় রাখার প্রচেষ্টায় জাতিসংঘকে সমর্থন দিয়ে আসছি। বাংলাদেশ বিশ্ব শান্তি রক্ষায় ৫৪টি মিশনে ১,২৮,৫৪৩ জন শান্তি রক্ষী মোতায়েন করেছে। আমরা এ পযর্ন্ত দায়িত্বপালনকালে ১৪৫ জন শান্তিরক্ষীকে হারিয়েছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, উন্নয়ন, দারিদ্র্য বিমোচন, দুযোর্গ ব্যবস্থাপনা, নারীর ক্ষমতায়ন এবং অন্যান্য আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের চমৎকার ভূমিকা একটি বিশ্ব উন্নয়ন মডেল হিসাবে আত্মপ্রকাশে সহায়তা করেছে।
তিনি বলেন, আমাদের মাথা পিচু আয় ২০০৬ সালে ৫৪৩ মাকির্ন ডলার থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০১৮ সালে ১৭৫১ মাকির্ন ডলারে উন্নীত হয়েছে। আমরা গত এক দশকে জিডিপি গড়ে ৬.৫ শতাংশ করতে সক্ষম হয়েছি এবং চলতি অর্থ বছরে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭.৮৬ শতাংশ। শেখ হাসিনা বলেন, মূদ্রাস্ফীতি কমে হয়েছে ৫.৪ শতাংশ। দারিদ্র্যতার হার ২০০৬ সালের ৪১.৫ শতাংশ থেকে কমে ২০১৮ সালে ২১.৮ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
তিনি বলেন, আমাদের উন্নয়ন নীতিতে সকল মানুষের জন্য সমান সুবিধা দিয়েছে। এলডিসি ক্যাটাগরি থেকে আমাদের গ্রাজুয়েশনের ভিত্তি রচিত হয়েছে। আমারা আমাদের এমডিজি’র অধিকাংশই অর্জন করেছি এবং এসডিজি বাস্তবায়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
শেখ হাসিনা বলেন, জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য এখনো পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়নি। বিশ্বের অনেক দেশকে সংঘর্ষ, ক্ষুধা ও দারিদ্র্যতা মোকাবেলা করতে হচ্ছে। জাতিসংঘ সর্বদাই সকলের জন্য মানবতা, শান্তি ও সম্প্রীতি ও টেকসই উন্নয়নে কাজ করে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী ।
প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘ ও বৃহত্তর বিশ্ব সম্প্রদায়ের সাথে আমাদের আন্তরিক সম্পৃক্ততার নীতি হিসাবে শান্তি, ন্যায় বিচার, উন্নয়ন এবং সহযোগিতা এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভিশন থেকে উৎসাহ লাভ অব্যাহত থাকবে।