বাসস প্রধানমন্ত্রী-১ : ৩৫টি ড্রেজার কিনতে ৪,৪৮৯ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন

315

বাসস প্রধানমন্ত্রী-১
প্রধানমন্ত্রী-একনেক-সভা
৩৫টি ড্রেজার কিনতে ৪,৪৮৯ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন
ঢাকা, ২৩ অক্টোবর, ২০১৮ (বাসস) : জাতীয় অর্থনৈতিক নির্বাহী কমিটি (একনেক) দেশের ১০০টি প্রধান নদীতে নৌযান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে ৩৫টি ড্রেজার সংগ্রহের জন্য ৪ হাজার ৪৮৯ কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন করেছে।
একনেক চেয়ারপারসন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে আজ রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত চলতি অর্থবছরের ১১তম একনেক সভায় প্রকল্পটি অনুমোদন করা হয়।
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে পরিকল্পনামন্ত্রী এএইচএম মুস্তাফা কামাল বলেন, আজ মোট ১৯ হাজার ৭৭৮ কোট ৭৩ লাখ টাকা ব্যয় সাপেক্ষ ২১টি প্রকল্পের অনুমোদন করা হয়েছে। এসব প্রকল্পে ব্যয়ের ১৭ হাজার ৩১৬ কোটি ৯৩ লাখ টাকা বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে, ২৩৩ কোটি ৯৩ লাখ টাকা সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে এবং ২ হাজার ২২৭ কোটি ৮৭ লাখ টাকা বৈদেশিক প্রকল্প সাহায্য হিসেবে পাওয়া যাবে। অনুমোদিত ২১টি প্রকল্পের মধ্যে ১৯টি নতুন এবং বাকি দু’টি প্রকল্প সংশোধন করা হয়েছে।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) ২০২৩ সালের জুন মাসের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে যাতে সরকার নিজস্ব তহবিল থেকে পুরো প্রকল্পের ব্যয় বহন করবে।
তিনি বলেন, সারাদেশের ১০০টি নদীর প্রায় ৮ হাজার কিলোমিটার ড্রেজিং করার লক্ষে এই প্রকল্পের অধীনে ড্রেজারসহ আনুষঙ্গিক সরঞ্জাম ক্রয় করা হবে।
মন্ত্রী বলেন, ড্রেজিংয়ের ফলে সারাবছর ধরে দেশের অভ্যন্তরে নদীগুলোতে ফেরি, লঞ্চ, পণ্যবাহী জাহাজ চলাচল স¦াভাবিক রাখা যাবে।
নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সূত্র অনুসারে জানা যায়, বিআইডব্লিউট-এর বর্তমানে ২৫টি ড্রেজার রয়েছে। এতে তাদের বার্ষিক ড্রেজিং করার ক্ষমতা ১১৪ লাখ কিউবিক মিটার এবং চলমান প্রকল্পের আওতায় আরো ১০টি ড্রেজার যুক্ত হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
অতিরিক্ত ড্রেজারগুলো যুক্ত হলে বিআইডব্লিউটিএ ২০১৯ সাল নাগাদ ৩৪৬ লাখ ৫০ হাজার কিউবিক মিটার ড্রেজিং করতে সক্ষম হবে।
প্রকল্প ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, মাদারীপুর, বরিশাল, বাগেরহাট, গাইবান্ধা, কক্সবাজার, চাঁদপুর, কিশোরগঞ্জ, জামালপুর ও সিলেট জেলা জুড়ে বাস্তবায়িত হবে।
মন্ত্রী বলেন, শিল্প ও বাণিজ্য গতিশীল করতে এশিয়ান হাইওয়ে নেটওয়ার্ক জোরদারের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এর অংশ হিসেবে ‘ভূমি অধিগ্রহণ ও ইউটিলিটি স্থানান্তর প্রকল্প: সাপোর্ট টু ঢাকা (কাঁচপুর)-সিলেট-তামাবিল মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ এবং উভয় পাশে পৃথক সার্ভিস লেন নির্মাণ’ নামের প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে বিমসটেক করিডোর, সার্ক করিডোরসহ আঞ্চলিক সড়ক নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ ত্বরান্বিত হবে। ভবিষ্যতে উপআঞ্চলিক সড়ক নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার জন্য মহাসড়কের উভয় পাশে পৃথক সার্ভিস লেনসহ চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্প বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত হবে। প্রল্পটি বাস্তবায়নে খরচ ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৮৮৫ কোটি ৭২ লাখ টাকা। ঢাকা (কাঁচপুর)-সিলেট মহাসড়কটি এশিয়ান হাইওয়ে এবং সার্ক হাইওয়ে করিডোরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি উপআঞ্চলিক বাণিজ্য সম্প্রসারণ ও বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলের সঙ্গে রাজধানী ঢাকাসহ অন্যান্য অঞ্চলের যোগাযোগের প্রধান করিডোর। সেজন্য ঢাকা (কাঁচপুর)-সিলেট মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করা অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। ভবিষ্যতে ঢাকা-সিলেট-তামাবিল মহাসড়ক চারলেনে উন্নীতকরণ এবং উভয় পাশে পৃথক সার্ভিসলেন নির্মাণের জন্য যে বিনিয়োগ প্রকল্প নেওয়া হবে, তার লিংক প্রকল্প হিসেবে ভূমি অধিগ্রহণ এবং ইউটিলিটি স্থানান্তর কার্যক্রম শেষ করা প্রয়োজন। এই প্রকল্প এশিয়ান হাইওয়ে অংশ হিসেবে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কটি চার লেনে উন্নীতকরণ কাজ সহজ করবে।
মন্ত্রী আরো বলেন, দেশের দুর্গম এলাকায় নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ করছে সরকারি মোবাইল অপারেটর টেলিটক। এ জন্য স্থাপন করা হচ্ছে সৌর বেসড স্টেশন। ফলে দুর্গম অঞ্চলে সুবিধাবঞ্চিত ২৫ লাখ মানুষকে টেলিযোগাযোগ সুবিধা দেয়া সম্ভব হবে। সেইসঙ্গে টেলিটকের সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। এ লক্ষ্যেই ‘সৌর বেসড স্টেশন স্থাপনের মাধ্যমে দুর্গম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে টেলিটক নেটওয়ার্ক কভারেজ শক্তিশালীকরণ’ শীর্ষক প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়েছে। এটি বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ৪০৬ কোটি ১৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ১২৫ কোটি ২৪ লাখ টাকা, ভারতীয় তৃতীয় লাইন অব ক্রেডিট (থার্ড এলওসি) থেকে ২৫৫ কোটি টাকা এবং বাস্তবায়নকারী সংস্থা টেলিটক, বাংলাদেশ লিমিটেডের নিজস্ব তহবিল থেকে ২৫ কোটি ৯২ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। টেলিটক বাংলাদেশ লিমিটেড ২০০৪ সালে ২ হাজার কোটি টাকা মূলধন নিয়ে গঠিত হয়। ২০০৫ সালের ৩১ মার্চ টেলিযোগাযোগ সুবিধা সম্প্রসারণে বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করে। বর্তমানে টেলিটকের মার্কেট শেয়ার মাত্র ৩ শতাংশ। সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০২০ সাল পর্যন্ত মার্কেট শেয়ার ২০ শতাংশে উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে। এ লক্ষ্যপূরণে কোম্পানিটি নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণে নিজস্ব, সরকারি এবং বৈদেশিক সহায়তায় বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। কিন্তু দেশের দুর্গম এলাকা যেমন: হাওর, বন, দ্বীপ, চট্টগ্রামের পাহাড়ি এলাকা, জামালপুর, শেরপুর, নেত্রকোনা ও ময়মনসিংহের পাহাড়ি এলাকায় এখনও আধুনিক উচ্চগতি সম্পন্ন থ্রি-জি প্রযুক্তির টেলিযোগাযোগ সেবা পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। এসব অঞ্চলে টাওয়ার বেসড স্টেশন নির্মিতব্য স্থানে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া সম্ভব নয়। তাই, সেলুলার নেটওয়ার্ক স্থাপন কৌশলগতভাবেই চ্যালেঞ্জিং। এর বাইরে ডিজেল জেনারেটরের মাধ্যমে বেস স্টেশন স্থাপন করা হলে জনবসতি না হওয়ায় ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ ফেরত আনা যাবে না। কারণ, অন্যান্য এলাকার তুলনায় জনবসতি কম হওয়ায় রাজস্বও কম আদায় হবে। তবে, সৌরচালিত স্টেশনের মাধ্যমে নি¤œ পাওয়ার বেসড স্টেশন স্থাপন করা হলে নেটওয়ার্ক পরিচালনা ব্যয় কম হবে। ফলে, দেশের দুর্গম এলাকায় নেটওয়ার্ক স্থাপনকে অধিক সহজতর করবে। এর মধ্য দিয়ে দেশের যেসব এলাকায় বেসরকারি খাতের মোবাইল অপারেটরদের সেবা বিস্তৃত হয়নি, সেসব এলাকার জনগণকে টেলিটক নেটওয়ার্কের আওতায় নিয়ে আসা সম্ভব হবে।
বাসস/জিএম/সবি/কেজিএ/১৯৫৫/আরজি