আঁশকলের মাধ্যমে পাটের আঁশ ছাড়ানো অত্যন্ত লাভজনক: কৃষি বিশেষজ্ঞদের অভিমত

976

রংপুর, ১৭ জুলাই, ২০১৭ (বাসস): কৃষি বিশেষজ্ঞগন বলেছেন, নতুন উদ্ভাবিত পাটের ছাল ছাড়ানোর মেশিন ব্যবহারের মাধ্যমে অত্যন্ত উন্নতমানের পাট উৎপাদন করে কৃষকদের বেশী লাভবান হওয়ার পাশাপাশি সোনলী আঁশের হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনা সম্ভব।
তারা আজ সোমবার যুক্তরাজ্য ভিত্তিক বেসরকারী আর্ন্তজাতিক সংস্থা প্র্যাকটিক্যাল এ্যাকশন বাংলাদেশ কর্র্র্তৃক আরডিআরএস বাংলাদেশ-এর বেগম রোকেয়া অডিটোরিয়ামে আয়োজিত গ্রামীন উদ্যোক্তাদের মাঝে পাটের ছাল ছাড়ানোর মেশিন বিতরণ উৎসব উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা অনুষ্ঠানে একথা বলেন।
রংপুর চেম্বার অব কর্মাস এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ এর সভাপতি মো: আবুল কাসেমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন রংপুর জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রসাশক (সার্বিক) মো: রুহুল আমিন মিয়া।
রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক স.ম আশরাফ আলী, আরডিআরএস বাংলাদেশ-এর পরিচালক (উন্নয়ন কর্মসূচী) মনজুশ্রী সাহা, বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের রংপুর আঞ্চলিক কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আবুল ফজল মোল্লা, কারুপন্য রংপুর লিমিটেডের জনসংযোগ উপদেষ্টা মো: মাহবুব রহমান এবং রংপুর কারিগরী প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের উপাধ্যক্ষ মো: খালেকুজ্জামান বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন।
প্র্যাকটিক্যাল এ্যাকশন বাংলাদেশ-এর এ্যাকটিং কান্ট্রি ডিরেক্টর ড. ফারুক-উল- ইসলাম তার স্বাগত বক্তব্যে বলেন, প্রতিষ্ঠানটি “জুট টেক্সটাইল ও লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং সেক্টরের মাধ্যমে বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলে টেকসই কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন” শীর্ষক একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।
আরডিআরএস বাংলাদেশ, রংপুর চেম্বারস অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ, কারুপণ্য রংপুর লিমিটেড, রংপুর জেলা লেদ মেশিন শ্রমিক ইউনিয়ন মিলে একসাথে ইউরোপীয় ইউনিয়নের আর্থিক সহযোগীতায় উত্তরাঞ্চলের চারটি জেলা কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, রংপুর ও গাইবান্ধায় এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, সোনালী আঁশ পাট বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। অতীতে প্রধান রপ্তানী পণ্য হিসেবে সর্বোচ্চ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হত পাট থেকে। পরবর্তীতে বিশ্বব্যাপী কৃত্রিম আঁশ ও বিভিন্ন সিনথেটিক দ্রব্যের আবির্ভাব এবং এর সহজলভ্যতা ও তুলনামূলকভাবে স্বল্প দামের কারণে পাট ও পাটজাত পণ্যের চাহিদা ও মূল্য হ্রাস পেতে থাকে। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর অপরিশোধিত বর্জ্য পরিবেশ দূষণের কারণে বিশ্বব্যাপী পরিবেশ সচেতনতা সৃষ্টি হয়েছে। ফলে পরিবেশ বান্ধব পাট ও পাট পণ্যের প্রতি পুনরায় বিশ্ব সমাজের আগ্রহ ও চাহিদা বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে।
স.ম আশরাফ আলী বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্রচলিত পাটপণ্য সামগ্রির পাশাপাশি বহুমুখী পাটপণ্যের চাহিদাও বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমান বৈশ্বিক এবং স্থানীয় বাজারে বাংলাদেশের পাট টেক্সটাইল সেক্টর বিশেষ করে ছোট ও মাঝারী পাট শিল্প প্রতিযোগীতায় অনেকটা পিছিয়ে পড়েছে। কারণ অন্যান্য দেশের মত পাটের আঁশ প্রক্রিয়াজাতকরণ, যান্ত্রিকীকরণের সামর্থ এবং বাজারজাতকরণের সহযোগীতার অভাব। পাট শিল্পের দ্রুত বিকাশ লাভের জন্যে বাংলাদেশের দারিদ্র পীড়িত গ্রামাঞ্চলে পাটের আঁশ প্রক্রিয়াজাতকরণের সাথে লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং খাত ও কারিগরি প্রশিক্ষণকে একত্রিত করতে হবে, যাতে ছোট ও মাঝারি শিল্প কারখানায় কর্মরত কর্মীর দক্ষতা বৃদ্ধি এবং শ্রমিকদের কর্মসং¯থানের মাধ্যমে পাট টেক্সটাইল ভ্যালু চেইন শক্তিশালী করা যায়। এতে স্থানীয় উদ্যোক্তাদের ক্ষমতায়ন করে স্থানীয় ও আঞ্চলিক বাজারে প্রতিযোগিতা করার মনোভাব সৃষ্টি করা যাবে। ফলে পাটজাত পন্যের বাজার ব্যবস্থাপনা ও ভ্যালু চেইন উন্নয়নে এই প্রযুক্তি জোরালোভাবে সহায়তা করবে, যার ফলশ্রুতিতে দরিদ্র মানুষের নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির ক্ষেত্রে যুগান্তকারী ভুমিকা রাখবে।
ড. আবুল ফজল মোল্লা প্রাকটিক্যাল এ্যাকশন কর্তৃক উল্লেখিত সমস্যাগুলো সমাধানে অবদান রাখার উদ্যোগকে স্বাগত জানান। এ প্রকল্পের মাধ্যমে কৃষি তথা পাটের আঁশের মান উন্নয়ন, যান্ত্রিক পদ্ধতিতে পাটের আঁশ ছাড়ানো, কৃষি যন্ত্রপাতির মান উন্নয়ন ও তৈরী, মেটাল ওয়ার্কসপের কর্মীদের দক্ষতা উন্নয়ন, পাটের আঁশ প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে গুনগত মান সম্পন্ন নতুন নতুন পণ্য উৎপাদন, পাটজাত পণ্যের বাজার সৃষ্টি করা, বিক্রেতাদের দক্ষতা উন্নয়ন, মেটাল এবং ওয়েল্ডিং ওয়ার্কসপের মাধ্যমে পাটের আঁশ ছাড়ানোর মেশিন তৈরী ও এর প্রসার ঘটানো হবে।
প্রধান অতিথি বলেন,্ প্রাকটিক্যাল এ্যাকশনের প্রস্তাবিত এ প্রকল্পটি সুষ্ঠভাবে বাস্তবায়নের জন্য বাস্তবমুখী কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। এসব কর্মসূচীর আওতায় মেকানাইজড পদ্ধতিতে পাটের ছাল ছাড়ানো এবং পাটের রিবন রেটিং, পাটের আঁশের গুণগত মানর উন্নয়ন, পাটের আঁশ দিয়ে বৈচিত্রময় পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাত করা, পাটজাত পণ্যের রপ্তানীর পরিমান বাড়ানো, ব্যবসায়ীদের আয় বাড়ানো, জুট টেক্সটাইল মিলে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা সম্ভব।
পরে তিনি রংপুর জেলার বিভিন্ন উপজেলার ৩০ জন উদ্যোক্তার মাঝে (১৫জন মহিলা ও ১৫ জন পুরুষ)-এর মাঝে চীন থেকে আমদানীকৃত ১৫টি পাটের নতুন আঁশকল মেশিন বিতরণ করেন।