উদ্বোধনের অপেক্ষায় খুলনার নতুন রেলস্টেশন

378

খুলনা, ১৩ অক্টোবর ২০১৮ (বাসস) : দীর্ঘ প্রতীক্ষা শেষে খুলনার নতুন রেলস্টেশনের কাজ শেষ হয়েছে। দৃশ্যমান হয়েছে ঝকঝকে তিনতলা বিশিষ্ট মূল স্টেশন ভবন। ১ হাজার ২০০ ফুট দৈর্ঘ্যরে তিনটি প্লাটফরম। সীমানা প্রাচীর, সুবিশাল গাড়ি পার্কিং ও ফুটপাতের কাজ শেষ হয়েছে আরও আগে। প্রস্তুত হয়েছে নতুন রেললাইনও।
রেলওয়ের কর্মকর্তারা জানান, প্রধানমন্ত্রীর খুলনা সফরের সময় গত ৩ মার্চ রেলস্টেশনের উদ্বোধন করা হয়। কিন্তু তখনও স্টেশনের কাজ শেষ হয়নি। এখন ট্রেন চালুসহ স্টেশনের অপারেশনাল কাজ উদ্বোধনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর নিকট সময় চাওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী সময় দিলেই স্টেশনটি আনুষ্ঠানিকভাবে ব্যবহার শুরু হবে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, বৃটিশ আমলে নির্মিত খুলনার পুরাতন রেল স্টেশন দিয়ে যাতায়াতে দুর্ভোগের শিকার হন খুলনার মানুষ। এ জন্য খুলনায় একটি আধুনিক রেলস্টেশন নির্মাণের দাবি দীর্ঘদিনের। এই দাবিতে বহুবার মিছিল, মানববন্ধন, স্মারকলিপি এমনকি হরতালও হয়েছে।
সবশেষে, ২০০৭ সালে তখনকার তত্ত্বাবধায়ক সরকার একটি আধুনিক রেলস্টেশন নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করে। এর নাম দেওয়া হয় ‘রিমডেলিং অব খুলনা রেল স্টেশন অ্যান্ড ইয়ার্ড’। একাধিকবার সংশোধনের পর ২০১৪ সালের ২৬ জানুয়ারি প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদন পায়। ২০১৫ সালের এপ্রিল মাসে স্টেশনের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। কিন্তু ধীরগতির কারণে কয়েক দফায় প্রকল্পের সময় বাড়ানো হয়। সম্প্রতি এই কাজ শেষ হয়েছে। স্টেশন নির্মাণে মোট ব্যয় হয়েছে ৬০ কোটি টাকা।
প্রকল্পের আওতায় প্রায় ২২ হাজার বর্গফুট আকারের একটি তিনতলা স্টেশন ভবন, ১ হাজার ২০০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৩০ ফুট প্রস্থের তিনটি প্লাটফরম, ৭৮৪ বর্গমিটারের একটি লিংক করিডোর নির্মাণ হয়েছে। ভবনের ভেতরে ৮৬০ বর্গমিটারের ফাঁকা জায়গা আছে। এছাড়া চার হাজার বর্গমিটার জায়গা জুড়ে কার পার্কিং, ফুটপাত ও রাস্তা রয়েছে। মূল ভবনের ভেতরে অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা, আধুনিক হাইড্রেন সবই আছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, পুরাতন যশোর রোডের পাওয়ার হাউজ মোড়ের কাছেই মূল স্টেশন ভবন। সীমানা প্রাচীরের গায়ে লোহার গ্রিল থাকায় সড়ক থেকেই নতুন ভবন দেখা যায়। সাদা নতুন ভবন ও লম্বা প্লাটফরম চলতি পথে সবারই নজর কাড়ছে। তবে পাওয়ার হাউজ মোড়ে রেলওয়ের জমিতে স্থাপিত ন্যাশনাল ব্যাংক ভবনের জন্য স্টেশনের সৌন্দর্য কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে।
ভেতরে গিয়ে দেখা গেছে, প্লাটফরম তিনটিতে ঘঁষামাজা চলছে। মূল ভবনের কাজ শেষ। এখন শুধু অপেক্ষমাণ কক্ষে এসি লাগানো হবে। প্লাটফর্মের মাঝখানে নতুন রেললাইন বসানো হয়েছে। এখানে একই সঙ্গে ৬টি ট্রেন দাঁড়াতে পারবে। মূল স্টেশন ভবনের সামনে বিশাল এলাকা জুড়ে গাড়ি রাখার জায়গা ও বাগান করা হয়েছে। এছাড়া আগতদের হাঁটার জন্য রাস্তা তৈরি করা হয়েছে। কিছু সৌন্দর্যবর্ধন বাতিও লাগানো হয়েছে প্রবেশপথ ও বের হওয়ার আশপাশে।
স্টেশন ভবন ও প্লাটফর্মগুলো পরিপাটি হলেও সৌন্দর্যবর্ধন বাতি, বাগান, পার্কিং ও ভেতরে হাটার পথগুলোয় অযতেœর ছাপ স্পষ্ট। পার্কিং টাইলসগুলো উঁচু-নিচু হয়ে আছে। গাড়ি প্রবেশের সড়ক সিসি ঢালাই দিয়ে নির্মাণ করা। সেখানেও উঁচু নিচু রয়ে গেছে।
এছাড়া ট্রেন চালুর জন্য কর্মকর্তাদের বসার কক্ষগুলো এখনো ব্যবহার উপযোগী হয়নি। টিকিট বিক্রিসহ অন্যান্য কার্যক্রম শুরুর জন্য যেটুকু প্রস্তুতি প্রয়োজন তাও সম্পন্ন হয়নি। এ অবস্থায় স্টেশনটি চালু হতে আরও কিছুদিন সময় লাগবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
রেলস্টেশনের ঠিকাদারি কাজের দায়িত্বে রয়েছে তমা কনস্ট্রাকশন। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলী মোসাব্বির হক বিপ্লব বলেন, সব কাজই প্রায় শেষ। উদ্বোধনের সপ্তাহ খানেকের মধ্যেই স্থাপনা রেলওয়েকে বুঝিয়ে দেওয়া হবে। বাগান ও বাতি সম্পর্কে তিনি বলেন, এগুলো কাজের চুক্তির মধ্যে ছিলো না। স্থানীয়দের অনুরোধে অতিরিক্ত হিসেবে এগুলো করা হয়েছে। কাজের মান খুবই ভালো, কোথাও কোনো সমস্যা নেই।
খুলনার আধুনিক রেলস্টেশন নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক মোঃ রিয়াদ আহমেদ বলেন, স্টেশনের সব কাজ প্রায় শেষ।