সরকার শ্রমিকদের আপদে বিপদে সর্বদা পাশে রয়েছে : প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক

674

ঢাকা, ৩ মে, ২০১৮ (বাসস) : শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মো. মুজিবুল হক এমপি বলেছেন, বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন তহবিলের মাধ্যমে সরকার শ্রমিকদের আপদে বিপদে সর্বদা তাদের পাশে রয়েছে। এখন থেকে আর কোন শ্রমিক অসহায় থাকবে না, তাদের সার্বিক কল্যাণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে মহান মে দিবস- ২০১৮ উপলক্ষে ‘শ্রমজীবী মানুষ ও তাদের পরিবারের কল্যাণে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ভূমিকা’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী একথা বলেন।
শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে এবং সেইফটি এন্ড রাইটস সোসাইটি, কর্মজীবী নারী ও অ্যাকশন এইডের সহযোগিতায় এই সেমিনারের আয়োজন করা হয়।
অ্যাকশন এইড বাংলাদেশের পরিচালক আসগর আলী সাবরির সঞ্চলনায় অনুষ্ঠানে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব আফরোজা খান, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতরের মহাপরিচালক সামসুজ্জামান ভুঁইয়া, বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক ড. এ.এম.এম আনিসুল আওয়াল ও বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক ডা. ওয়াজেদুল ইসলাম খান বক্তৃতা করেন।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এসআরএস-এর নির্বাহী পরিচালক মো. সেকেন্দার আলী মিনা। কর্মজীবী নারীর নির্বাহী পরিচালক রোকেয়া রফিক স্বাগত বক্তব্য দেন।
সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতন ও জিআইজেড-এর টেকনিক্যাল এ্যাডভাইজার ফিরোজ আলম অনুষ্ঠানে প্যানেল আলোচক ছিলেন।
শ্রমিকদের কল্যাণকে অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করে প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক বলেন, শ্রম পরিবেশ উন্নয়নে মন্ত্রণালয় নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তিনি মনে করেন, শ্রমিক কল্যাণ তহবিলে যে পরিমাণ টাকা রয়েছে তা দিয়ে শ্রমিকদের কল্যাণে অনেক কিছু করা সম্ভব। শ্রমিকদের চিকিৎসার জন্য নারায়ণগঞ্জের চাষাড়ায় খুব শিগগিরই একটি বিশেষায়িত হাসপাতাল নির্মাণের কাজ শুরু হবে। শ্রমিক কল্যাণ তহবিলের বণ্টন কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার বিষয়ে যথাযথ উদ্যোগ নেয়া হবে বলে প্রতিমন্ত্রী আশ্বাস দেন।
প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন তহবিলে জমা হয়েছে প্রায় ২৮৩ কোটি টাকা। প্রতিবছরই এ তহবিল বৃদ্ধি পাচ্ছে। এছাড়া শতভাগ রফতানিমুখী শিল্পের শ্রমিকদের কল্যাণে গঠিত কেন্দ্রীয় তহবিলে জমা পড়েছে প্রায় ৭৬ কোটি টাকা।
তিনি বলেন, সরকারের শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন পরিচালিত এ তহবিল থেকে অসুস্থ্য ও অক্ষম শ্রমিকদের আর্থিক সহায্য প্রদান, দুর্ঘটনাজনিত শ্রমিকের মৃতদেহ পরিবহন, সৎকার ও তাদের পরিবারকে সাহায্য প্রদান, জটিল রোগের চিকিৎসা ব্যয়, শ্রমিক পরিবারের মেধাবী সদস্যকে শিক্ষা বৃত্তি প্রদানসহ শ্রমিকের বিশেষ দক্ষতার স্বীকৃতিস্বরূপ প্রণোদনা প্রদান করা হয়।
শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব আফরোজা খান বলেন, ‘শ্রমিকের আর্থ-সামাজিক অবস্থা উন্নয়নের লক্ষ্যে মন্ত্রণালয়ে থেকে বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। শ্রমিক কল্যাণ তহবিল থেকে শ্রমিক ও তার পরিবারকে সাহায্য প্রদান করা হচ্ছে। বীমা সুবিধা প্রদান করা হয়েছে এবং শ্রমিকদের কল্যাণে আরো উদ্যোগ নেয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।’
কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতরের মহাপরিচালক সামসুজ্জামান ভুঁইয়া বলেন, ‘দেশের উন্নয়নে শ্রমিক ও মালিকের পারস্পরিক সমঝোতা অবশ্য প্রয়োজনীয়। কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতর নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর কর্মপরিবেশে উন্নয়নে কাজ করে চলেছে। শ্রম পরিদর্শকের পরিমাণ বৃদ্ধি করা হয়েছে এবং হেল্প লাইনের মাধ্যমে শ্রমিকের প্রয়োজনে সেবা প্রদান করা হচ্ছে।’
বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক ড. এ.এম.এম আনিসুল আওয়াল বলেন, ‘২০১৭ সালে ১ হাজার ৮৪৩ জনের অধিক ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিক ও তার পরিবারকে আর্থিক সহযোগিতা করা হয়েছে। বিপুল সংখ্যক শ্রমজীবী মানুষের কল্যাণ সাধনের জন্য ভবিষ্যতে আরো ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণের জন্য শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনের কার্যক্রমকে আরো গতিশীল করার কার্যক্রম গ্রহণ করেছে।’
সেমিনারে মূল প্রবন্ধে এসআরএস-এর নির্বাহী পরিচালক মো. সেকেন্দার আলী মিনা বলেন, সরকার আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার মৌলিক কনভেনশনসহ আরো অনেক কনভেশন রেটিফাই করেছে। কিন্তু পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা সম্পর্কিত কনভেনশন এখনও রেটিফাই করেনি। এ কনভেনশন রেটিফাই এবং শোভন কর্ম-পরিবেশ নিশ্চিত করা হলে শ্রমজীবী মানুষের জীবনমান আরো উন্নত হবে বলে তিনি মনে করেন।
শ্রম পরিদর্শন ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং পরিদর্শন কার্যক্রম নিয়মিত মনিটরিং, কর্মক্ষেত্র দুর্ঘটনায় আহত ও নিহতদের জন্য ক্ষতিপূরণের নির্দিষ্ট মানদন্ড নির্ধারণ এবং শাস্তির বিধান রাখার সুপারিশ করেন মিনা তার প্রবন্ধে।