বিদেশীদের কাছে নালিশ দিয়ে কোন লাভ হবে না : প্রধানমন্ত্রী

745

ঢাকা, ১ মে, ২০১৮ (বাসস) : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক শ্রেণির শ্রমিক নেতাদের কঠোর সমালোচনা করে বলেছেন, বিদেশের কাছে দেশের বিরুদ্ধে বদনামের অশুভ তৎপরতা চালিয়ে কোন লাভ হবেনা। তিনি দৃঢতার সঙ্গে বলেছেন, যতদিন ক্ষমতায় আছেন ততদিন এসব করে কোন লাভ হবে না।
মহান মে দিবস উপলক্ষে আজ বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত আলোচনা সভার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি যতদিন ক্ষমতায় আছি বাইরের কারো কাছে নালিশ করে কোন লাভ হবেনা। আমি জাতির জনকের কন্যা এবং দেশ ও দেশের মানুষকে ভালবেসেই রাষ্ট্র পরিচালনা করে যাচ্ছি। আমি যা কিছু করেছি এবং করছি দেশের কল্যাণের জন্যই।’ শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এ কর্মসূচির আয়োজন করে।
তিনি বলেন, ‘লাখো শহীদের রক্তে রঞ্জিত আমাদের এই স্বাধীনতা। এই স্বাধীনতাকে সমুন্বত রাখা, দেশবাসী এবং দেশকে বিশ্বের দরবারে সম্মানিত করা-এটাই আমার লক্ষ্য। কারো কাছে মাথা নিচু করা নয়।’
শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের দেশের দুর্ভাগ্য আমি বলবো কিছু কিছু লোক শ্রমিক নেতা সাজতে গিয়ে- যারা জীবনে শ্রমিক হিসেবে কাজ করুক আর নাই করুক শ্রমিকদের উপর একটু খবরদারি করে। আর একটু কিছু হলেই বিদেশীদের কাছে গিয়ে নালিশ করে, আর দেশের বদনামটা তুলে ধরে।
তিনি বলেন, এই বদনামটা তুলে ধরতে গিয়ে হয়তো একখানা টিকিট বিনে পয়সায় পান,বিদেশে থাকার একটু সুযোগ পান, একটু সেখানে যেতে পারেন, কিছু সুযোগ-সুবিধা পান। আর ঐ একটু সুযোগের জন্য দেশের বদনামটা বাইরে যেয়ে করে আসা দেশের জন্য যে কতটা ক্ষতিকারক সেটা তারা অনেকেই বুঝতে পারেন না। এটাই হচ্ছে সবচেয়ে দুর্ভাগ্যে।
সরকার প্রধান বলেন, দেশটা আমাদের, এদেশটাকে আমাদেরই গড়ে তুলতে হবে। আর দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা যত ভালো হবে ততই সকলের কল্যাণ হবে। সকলেরই জীবন মান উন্নত হবে। এই কথাটা বুঝতে হবে, দেশপ্রেম থাকতে হবে।
শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি বেগম মুন্নুজান সুফিয়ান।
আরো বক্তৃতা করেন, এদেশে আইএলও প্রতিনিধি গগন রাজভান্ডারি, বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট কামরান টি রহমান, বিজিএমইএ সভাপতি মো, সিদ্দিকুর রহমান এবং জাতীয় শ্রমিক লীগের সভাপতি শুক্কুর মাহমুদ। শ্রম ওকর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব আফরোজ খান অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী দুর্ঘটনায় নিহত শ্রমিক পরিবারের সদস্য এবং শ্রমিকদের মেধাবী সন্তানদের মধ্যে শ্রমিক কল্যাণ তহবিল থেকে অনুদানের চেকও বিতরণ করেন।

অভ্যন্তরীণ ও বহির্বিশ্বের চাহিদার দিকে দৃষ্টি রেখে দক্ষ শ্রমশক্তি গড়ে তুলতে সরকার নিরলসভাবে কাজ করছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শ্রমকল্যাণ নিশ্চিতকরণে আমরা ‘জাতীয় শ্রমনীতি, ২০১২’ প্রণয়ন করেছি। ‘বাংলাদেশ শ্রম বিধিমালা, ২০১৫’ প্রণয়ন করেছি। তিনি বলেন,‘জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেইফটি নীতিমালা, ২০১৩’ এবং ‘জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন নীতি, ২০১১’ প্রণীত হয়েছে। মানবসম্পদ উন্নয়নে ‘জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কাউন্সিল’ গঠন করা হয়েছে। শিল্প-কারখানায় কমপ্লায়েন্স নিশ্চিত করতে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন পরিদপ্তরকে অধিদপ্তরে উন্নীত করেছি।
শেখ হাসিনা শিল্প কলকারখানা সুরক্ষা এবং কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে তাদের ভূমিকা পালনের আহবান জানিয়ে বলেন, আমি শ্রমজীবীদের একটা কথাই বলবো- যে কারখানা আপনাদের রুটি-রুজির ব্যবস্থা করে আপনার ভাত খাওয়ার ব্যবস্থা করে সে করাখানা যেন ঠিকমতো চলে, সেখানে যেন অশান্তি সৃষ্টি না হয়, সেদিকে আমাদের সবাইকে দৃষ্টি দিতে হবে।
তিনি সকলকে আশ্বস্ত করে বলেন, একটা ভরসা রাখবেন আপনাদের কোন অসুবিধা হলে আমিতো আছিই। সেখানে কোন সমস্যা হলে আমরা দেখবো।
এ সময় জনগণের ভাগ্য গড়ার জন্যই তিনি ক্ষমতায় এসেছেন বলেও উল্লেখ করেন।
মালিকদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মালিকদের আমি বলবো- যে শ্রমিকরা শ্রম দিয়ে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে আপনাদের জন্য উৎপাদন করে, আপনি ব্যবসা করেন- অর্থ উপার্জন করেন, আপনারা ভালো থাকেন, আপনাদের পরিবার ভালো থাকে সেই শ্রমজীবী মানুষের প্রতিও আপনাদের আন্তরিক হতে হবে। তাদের প্রতিও আপনাদের কতর্ব্যের যেন কোনরকম কমতি না হয় সেটা দেখতে হবে।
তিনি এ সময় এবারের মে দিবসের প্রতিপাদ্য ‘মালিক শ্রমিক ভাই ভাই সকলে মিলে সোনার বাংলা গড়তে চাই’র আলোকে বলেন, এই শ্লোগানটা যে কতটা উপযোগী শ্লোগান সেটা মনে রেখে মালিক-শ্রমিক একে অপরের পরিপূরক শক্তি হয়ে কাজ করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি এইটুকুই চাই আমাদের মালিক এবং শ্রমিক তাদের মাঝে একটা সৌহাদ্যপূর্ণ সম্পর্ক যেন বজায় রাখে। বাইরের থেকে কেউ উস্কানি দিলো অমনি সেখানে শুরু হয়ে গেল তান্ডব-এই ঘটনা যেন কখনো না ঘটে সে ব্যাপারে আমি সকলকে সতর্ক করে দিচ্ছি।
নিজের কাজ, চাকরি এবং পরিবারের রুটি-রুজির ব্যবস্থাটা যেন কোনভাবে ধ্বংস না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখার জন্যও তিনি বিশেষভাবে আহবান জানান।
শেখ হাসিনা এ সময় শ্রমিকদের কল্যাণে তাঁর সরকার গৃহিত বিভিন্ন পদক্ষেপ যার মধ্যে শ্রম কল্যাণ কমপ্লেক্স নির্মাণ, শিল্প-কারখানা স্থাপন, মজুরি বৃদ্ধি, কল্য্যাণ তহবিল গঠন, শ্রমিক-কর্মচারিদের জন্য ডরমেটরি, ডরমেটরী কাম-ট্রেনিং সেন্টার, শ্রমজীবী মহিলা হোস্টেল নির্মাণ এবং শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ প্রদানে বিভিন্ন উদ্যোগ তুলে ধরেন।
তিনি তাঁর সরকারের সময়ে স্বল্প অভিভাসন ব্যয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশী শ্রমিকদের কর্মসংস্থানের একটি পরিসংখ্যান তুলে ধরে দালালদের খপ্পরে পড়ে বিদেশে সোনাার হরিণ ধরতে যাওয়া থেকে বিরত থাকার জন্য সকলকে সতর্ক করেন।
সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ২০২১ সালের মধ্যে ক্ষুধা ও দারিদ্র মুক্ত বাংলাদেশ এবং ২০৪১ সাল নগাদ বাংলাদেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ গড়ে তোলার রাজনৈতিক অঙ্গীকারও অনুষ্ঠানে পুনর্ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী।