বাসস প্রধানমন্ত্রী-৩ (প্রথম কিস্তি) : আওয়ামী লীগ বিদেশী শক্তির মদদে নয়, জনগণের ওপর নির্ভরশীল : প্রধানমন্ত্রী

631

বাসস প্রধানমন্ত্রী-৩ (প্রথম কিস্তি)
শেখ হাসিনা-সংবাদ সম্মেলন-প্রশ্নোত্তর
আওয়ামী লীগ বিদেশী শক্তির মদদে নয়, জনগণের ওপর নির্ভরশীল : প্রধানমন্ত্রী
ঢাকা, ৩ অক্টোবর ২০১৮ (বাসস) : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আগামী নির্বাচনে জনগণ তাঁকে ভোট দিলেই তার সরকার ক্ষমতায় থাকবে, নচেৎ নয় বা বিদেশী কোন শক্তির মদদে নয়। তিনি বলেন, ‘আমরা জনগণের ওপর নির্ভরশীল, কারো মুখাপেক্ষী হয়ে আমরা রাজনীতি করি না। কে সমর্থন করবে বা কে করবে না, বাইরের মুখাপেক্ষী হয়ে আমার রাজনীতি না।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ বিকেলে তাঁর সরকারী বাসভবন গণভবনে তাঁর জাতিসংঘ সফর উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে একথা বলেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি মনে করি আমার জোর হচ্ছে আমার দেশের জনগণ। আমার জনগণের সমর্থন আছে কি না, জনগণ আমাদের চায় কি না, জনগণ আমাদের ভোট দেবে কি, দেবে না, সেটাই আমার কাছে বিচার্য বিষয়।’ এ সময় ২০০১ সালে বিএনপি বিদেশি প্রভুদের কাছে বাংলাদেশের প্রাকৃতিক গ্যাস বিক্রীর মুচলেকা দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিল বলেও তাঁর অভিযোগ পুনরুত্থাপন করেন।
সাংবাদিক সম্মেলনে সদ্য পাশ হওয়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা করে, তাঁদের এই আইন নিয়ে উদ্বেগের কোন কারণ নেই। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি যেসব সাংবাদিক মনে করেন তারা কোন অন্যায় করবেন না, কারো বিরুদ্ধে কোন ধরনের অপবাদ বা মিথ্যা তথ্য দেবেন না, জনগণকে বিভ্রান্ত করবেন না, তাদের উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই।’
তিনি স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অধিকাংশ ধারাই ফৌজদারি দন্ডবিধিতে (সিআরপিসি) আছে। কেবলমাত্র ডিজিটাল ডিভাইসের ব্যবহার সংক্রান্ত ধারাগুলো নতুন ডিজিটাল আইনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী উদাহরণ দেন- জঙ্গি দমনের ক্ষেত্রে কাউকে মোবাইল ট্রাক করে সনাক্ত করা হলো এবং সে যেকোন সময় একটি বিপদজনক ঘটনা ঘটাতে পারে। সেখানেতো গ্রেফতারের জন্য কারো নির্দেশের অপেক্ষা করলে চলে না। তাকে আগে ধরতে হবে, পরে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে এবং সারাবিশ্বে এটাই নিয়ম।
তিনি বলেন, কাজেই এখানে উদ্বিগ্ন তারাই বেশী হবে, যারা এতদিন ধরে খুব তৈরী হয়ে রয়েছে যে, নির্বাচন আসলেই বা তফসিল ঘোষণা হলেই আমাদের বিরুদ্ধে তৈরী করা একের পর এক মিথ্যা খবর প্রচার করবে।
তিনি বলেন, এই আইনের একটি ধারা রয়েছে, কেউ কারো বিরুদ্ধে যদি কোন মিথ্যা তথ্য দেয় তাহলে সেই মিথ্যা তথ্যটা তাকে প্রমাণ করতে হবে যে, এটা সত্য। যদি সে প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয় তাহলে সেই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে বা যে পত্রিকা বা ইলেকট্রনিক মিডিয়া বা ডিজিটাল ডিভাইস এটা প্রকাশ বা ব্যবহার করবে, তাদের সবাইকে শাাস্তি পেতে হবে। যার বিরুদ্ধে লিখবে তার যে ক্ষতি হবে তার ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। কাকে জরিমানা করা হবে, যে বিধান বাংলাদেশের আইনে না থাকলেও ইংল্যান্ডে রয়েছে।
এ সময় বিবিসি’র একটি সংবাদ পরিবেশন নিয়ে সেটি ভুল প্রমাণিত হওয়ার পরে তাদের অনেক কর্তা ব্যক্তিদের পদত্যাগ করার বিষয়টি উল্লেখ করেন।
প্রধানমন্ত্রী এ প্রসঙ্গে ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় কিছু মিডিয়ায় তাঁর চরিত্র হননের অপচেষ্টার সমালোচনা করেন। তাঁর বিরুদ্ধে অপপ্রচার মিথ্যা প্রমাণিত হলেও যারা সেই অপপ্রচারে যুক্ত ছিলেন তারা এখনও বহাল তবিয়তে থাকায় তাদের বিরুদ্ধে তিনি এখনো কোন ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ এমনকি মামলাও করতে পারেননি বলে উল্লেখ করেন।
মিডিয়ায় মিথ্যা তথ্য দিয়ে যাকে সমাজ এবং পরিবারের কাছে হেয় করা হলো তার বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া যাবেনা, প্রশ্ন উত্থাপন করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা নিয়ে অনেক সাংবাদিক উদ্বিগ্ন তা না হয় বুঝলাম কিন্তু এখানে ভুক্তোভোগীদের কি হবে, তাদের কিভাবে কনপেনসেট করবেন?
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটি করার আগে পৃথিবীর বিভিন্ন আইনগুলো পর্যালোচনা করে দেখেছে, এটা অনলাইনে দিয়ে সবার সঙ্গে আলোচনাও করা হয়েছে, এরপরেও এত উদ্বেগ কিসের, জানতে চান তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘কারো যদি অপরাধী মন না থাকে বা ভবিষ্যতে অপরাধ করবে এরকম পরিকল্পনা না থাকে তবে, তার উদ্বিগ্ন হওয়ার কোন কারণ নেই।’
প্রধানমন্ত্রী আইনের ধারা বিস্তারিত তুলে ধরে বলেন, আগে এই আইনেও ছিল সরাসরি গ্রেফতারের বিধান, কোন সমনজারির বিধান ছিলনা। তিনি নিজেই সাংবাদিকদের স্বার্থে সেটি পরিবর্তন করে দিয়েছেন বলেও উল্লেখ করেন।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় বিএনপি আমলের নির্যাতিত সাংবাদিকদের কল্যাণে তাঁরা কি ভূমিকা রাখতে পেরেছেন সে প্রশ্ন তুলে বলেন, অন্তত আমি যতক্ষণ আছি ততক্ষণ আপনাদের উদ্বেগের কোন কারণ নেই।
সংবাদ সম্মেলনে, সাইবার নিরাপত্তা, রোঙ্গিা প্রত্যাবাসন, আসন্ন নির্বাচন, নির্বাচন কেন্দ্রিক বিরোধী জোট গঠন প্রভৃতি বিষয় সাংবাদিকদের প্রশ্নে ঘুরে ফিরে আসে এবং প্রধানমন্ত্রী তা অনুপুঙ্খ জবাব দেন।
চলবে-বাসস/এএসজি-এফএন/একেএইচ/২১৩৩/কেএমকে