বাসস দেশ-২৬ : ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিষয়ে সাংবাদিকদের উৎকণ্ঠা সরকার আমলে নিয়েছে : তথ্যমন্ত্রী

495

বাসস দেশ-২৬
ডিজিটাল-আইন-মন্ত্রী
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিষয়ে সাংবাদিকদের উৎকণ্ঠা সরকার আমলে নিয়েছে : তথ্যমন্ত্রী
ঢাকা, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ (বাসস) : ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিষয়ে সম্পাদক পরিষদের উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা ও কতিপয় ধারা সম্পর্কে আপত্তি সরকার আমলে নিয়েছে বলে জানিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু।
সচিবালয়ে আজ তথ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু’র সভাপতিত্বে এই আইনটির বিষয়ে সম্পাদক পরিষদের সঙ্গে এক বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি একথা জানান।
আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক এবং ডাক, টেলিযোগাযোগ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তফা জব্বার এবং প্রধানমন্ত্রীর তথ্য বিষয়ক উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, সম্পাদক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মাহফুজ আনাম, সদস্য রিয়াজউদ্দিন আহমেদ, মতিউর রহমান, মতিউর রহমান চৌধুরী, নুরুল কবীর, ইমদাদুল হক মিলন, নঈম নিজাম, এ এম এম বাহাউদ্দিন, এম সামসুর রহমান, সাইফুল আলম, দেওয়ান হানিফ মাহমুদ, জাফর সোবহান ও মুস্তাফিজ শফি বৈঠকে মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন।
সভাশেষে তথ্যমন্ত্রী সম্পাদক পরিষদকে আলোচনার আহ্বানে সাড়া দেবার জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, “শেখ হাসিনার সরকার সংবিধান সমুন্নত রাখা, গণতন্ত্রের প্রসার ও গণমাধ্যমের স্বাধীন বিকাশের প্রতি অঙ্গীকারাবদ্ধ। সম্প্রতি সংসদে পাশ হওয়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটি এখন রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরের অপেক্ষায় রয়েছে। এ অবস্থায় আইনটির বিষয়ে সম্পাদক পরিষদের উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা ও কতিপয় ধারা সম্পর্কে আপত্তি সরকার আমলে নিয়েছে। সেজন্যই এ আলোচনার সূত্রপাত।”
তিনি জানান, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে আরো আলোচনার বিষয়ে সম্পাদক পরিষদের সাথে তিন মন্ত্রীর বৈঠকে ঐকমত্য হয়েছে। পাশাপাশি শীর্ষ সাংবাদিক সংগঠন বিএফইউজে, ডিইউজে এবং ডিআরইউ নেতৃবৃন্দের সঙ্গেও আইনটির বিষয়ে মতবিনিময়ে মন্ত্রীবর্গ অনুরূপ মতৈক্যে পৌঁছেছেন।
২০০৯ সালে শেখ হাসিনার সরকারই তথ্য অধিকার আইন প্রণয়ন ও তথ্য কমিশন গঠন করেছে উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, “ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পথে ডিজিটাল আপদ-বিপদ-উৎপাত থেকে জনগণ ও দেশকে রক্ষার জন্য ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিকল্প নেই। কারো বিরুদ্ধে ইচ্ছেমতো মিথ্যা অপবাদ ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেবার মতো জঘন্য অপরাধ বা ব্যক্তি, সমাজ বা রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বিঘিœত করে এমন কিছু ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেবার মতো ঘৃণ্য কাজের শাস্তির বিধান থাকতেই হবে। এজন্যই এ আইন, গণমাধ্যম বা সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে কোন আইন নয়।”
“তারপরও এ বিষয়ে ভিন্নমত বা আপত্তি-উদ্বেগ থাকলে আলোচনার মাধ্যমেই তা নিষ্পত্তির জন্য সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে” জানান হাসানুল হক ইনু।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, “এ আইনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে বলে আমরা সবাই একমত। কিন্তু এ আইন যেন গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ক্ষুণœ না করে সেটিও দেখতে হবে। আইনের ৮, ২১ এর অংশ বিশেষ, ২৫, ২৮, ২৯, ৩১, ৩২, ৪৩ ও ৫৩ ধারার বিষয়ে সম্পাদক পরিষদ যে উদ্বেগ জানিয়েছেন তা আগামীতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে উত্থাপন করা হবে।’
সম্পাদক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মাহফুজ আনাম এসময় তথ্যমন্ত্রীসহ মন্ত্রীবর্গ ও তথ্য উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, “আমরা এ আইনের বিষয়ে আমাদের উদ্বেগ লিখিতভাবে জানিয়েছি। সবাইকে আইনটি পড়ে দেখার অনুরোধ রইল। তথ্যমন্ত্রীর আহ্বানে আমরা আমাদের মানববন্ধন কর্মসূচি প্রত্যাহার করেছি। ডিজিটাল নিরাপত্তার বিষয়ে সচেতনতার প্রয়োজনের বিষয়েও আমরা একমত। কিন্তু সংসদীয় কমিটির সাথে সম্পাদক পরিষদের তৃতীয় বৈঠকটি না হওয়া দুঃখজনক। আইনটি সংশোধনের অনুরোধ জানাচ্ছি।”
এদিন বিকেলে বিএফইউজে-বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে) ও ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) নেতৃবৃন্দের সঙ্গেও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বিষয়ে মতবিনিময় করেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু।
সচিবালয়ে তথ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে তথ্যমন্ত্রীর সাথে ডাক, টেলিযোগাযোগ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তফা জব্বার এবং প্রধানমন্ত্রীর তথ্য বিষয়ক উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী যোগ দেন।
বিএফইউজে সভাপতি মোল্লা জালাল, ডিইউজে সভাপতি আবু জাফর সূর্য, বিএফইউজে মহাসচিব শাবান মাহমুদ, ডিইউজে সহ-সভাপতি খন্দকার মোজাম্মেল হক ও সাধারণ সম্পাদক সোহেল হায়দার চৌধুরী এবং ডিআরইউ সভাপতি সাইফুল ইসলাম ও সহ-সভাপতি গ্যালমান শফি এসময় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিষয়ে তাদের খোলামেলা মতামত তুলে ধরেন।
নেতৃবৃন্দ পেশাগত দায়িত্বপালনের ক্ষেত্রে সাংবাদিকদের ওপর এর অপপ্রয়োগ যাতে না হয়, সে বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান।
তথ্য মন্ত্রণালয়ের সচিবের দায়িত্বে নিয়োজিত অতিরিক্ত সচিব মো. আবুয়াল হোসেন, অতিরিক্ত সচিব মিজান উল আলমসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
১৯ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটি পাশ হয়।
বাসস/সবি/এমএসএইচ/২০৩৭/-কেএমকে