মুশফিকের ৯৯ রানে ভর করে বাংলাদেশের সংগ্রহ ২৩৯ রান

693

আবু ধাবি, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮ (বাসস) : এশিয়া কাপের ১৪তম আসরের সুপার ফোরের শেষ ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষে টস জিতে প্রথমে ব্যাটিং করে ২৩৯ রানে অলআউট হয়েছে বাংলাদেশ। সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবু ধাবির এ ম্যাচে বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ ৯৯ রান করেন মুশফিক। এছাড়া মোহাম্মদ মিথুন ৬০ ও মাহমুুদুল্লাহ ২৫ রান করেন।
জিতলেই ফাইনালে। কিন্তু ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে নামার আগেই বড় ধরনের ধাক্কা খায় বাংলাদেশ। বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানকে ছাড়া একাদশ সাজাতে হয় টাইগারদের। আঙ্গুলের ইনজুরির কারনে এ ম্যাচ থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন সাকিব। পাশাপাশি আরও দু’টি পরিবর্তন নিয়ে খেলতে নামে বাংলাদেশ। বাঁ-হাতি স্পিনার নাজমুল ইসলাম অপু ও নাজমুল হোসেন শান্ত’কে একাদশে রাখেনি বাংলাদেশ। তাই তাদের পরিবর্তে একাদশে জায়গা পান দুই বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যান মোমিনুল হক-সৌম্য সরকার ও ডান-হাতি পেসার রুবেল হোসেনের।
সাকিবকে হারানোর ধাক্কা সাথে নিয়ে টস লড়াইয়ে নামেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। এই লড়াইয়ে জয় পান মাশরাফি। দলের ব্যাটসম্যানদের নির্ভার হয়ে খেলার সুযোগ করে দিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্বান্ত নেন ম্যাশ। কিন্তু অধিনায়কের আস্থার প্রতিদান দিতে পারেনি বাংলাদেশের টপ-অর্ডার।
লিটন দাসের সাথে ইনিংস উদ্বোধন করতে নামেন এশিয়া কাপের মাঝপথে দলে সুযোগ পাওয়া সৌম্য সরকার। ইনিংসের তৃতীয় ওভারের পঞ্চম বলে প্যাভিলিয়নে ফিরেন তিনি। পাকিস্তানের বাঁ-হাতি পেসার জুনায়েদের শিকার হয়ে শুন্য রানে ফিরতে হয় সৌম্যকে।
এরপর প্যাভিলিয়নে সৌম্যর সঙ্গী হন আরেক ওপেনার লিটন ও তিন নম্বরে ব্যাট হাতে নামা মোমিনুল হক। পাকিস্তানের আরেক বাঁ-হাতি পেসার শাহিন শাহ আফ্রিদির স্টাম্পের ডেলিভারিতে বলের লাইনে পা নিতে না পেরে বোল্ড হন মোমিনুল। ১টি বাউন্ডারিতে ৪ বলে ৫ রান করেন তিনি।
মোমিনুলের মত একইভাবে আউট হন লিটনও। তবে লিটনকে শিকার করেন জুনায়েদ। ১৬ বল মোকাবেলা করে ৬ রান করেন লিটন। এ সময় ৪ দশমিক ২ ওভারে ১২ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে ব্যাকফুটে চলে যায় বাংলাদেশ।
এই অবস্থায় দলকে খেলায় ফেরানোর দায়িত্ব নেন সাবেক অধিনায়ক মুশফিক ও মিথুন। প্রতিপক্ষ বোলারদের দেখে শুনে খেলে স্কোর বোর্ডকে শক্তপোক্ত করতে থাকেন তারা। ফলে ২৫তম ওভারে শতরানে পৌঁছায় বাংলাদেশের স্কোর। সেটি পরবর্তীতে আরও বড় হয়েছে। ৩৩তম ওভারে দেড়শ রানের কোটা স্পর্শ করে টাইগাররা। এ সময় মুশফিক ও মিথুন, দু’জনই হাফ-সেঞ্চুরির স্বাদ নেন।
মুশফিক ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৩০তম ও মিথুন দ্বিতীয় হাফ-সেঞ্চুরির দেখা পান। চলমান টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচে ক্যারিয়ারের প্রথম হাফ-সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছিলেন মিথুন। অর্ধশতকের পর নিজের ইনিংসটাকে ৬০ রানে বেশি বড় করতে পারেননি। পাকিস্তানের ডান-হাতি পেসার হাসান আলীর বলে আউট হন তিনি। মিথুনকে ফিরিয়ে মুশফিক-মিথুন জুটি ভাঙ্গেন হাসান। ততক্ষণে চতুর্থ উইকেটে জুটি বেঁেধ ১৭৬ বলে ১৪৪ রান যোগ করেন তারা। ফলে ১৯৯৭ সালে কলম্বোতে পাকিস্তানের বিপক্ষে চতুর্থ উইকেটে আকরাম খান ও আতাহার আলী খানের করা ১১০ রানের জুটির রেকর্ডটি ভেঙ্গে যায়।
মিথুনের বিদায়ে ক্রিজে আসেন গেল ম্যাচে অপরাজিত ৭২ রানের নান্দনিক ইনিংস খেলা ইমরুল। এবার আর নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি তিনি। ১০ বলে ৯ রান করেন ইমরুল।
এরপর মাহমুদুল্লাহকে নিয়ে আবারো বড় জুটির চেষ্টা করেন মুশফিক। বলের সাথে পাল্লা দিয়ে রানের গতি ধরে রেখেছিলেন তারা। ফলে ক্যারিয়ারের সপ্তম ও এবারের আসরে দ্বিতীয় সেঞ্চুরির দিকেই এগোচ্ছিলেন মুশফিক। কিন্তু সেঞ্চুরি থেকে ১ রান দূরে থাকতে আউট হন মুশি। ক্যারিয়ারে এই তৃতীয়বারের মত নাভার্স-নাইন্টিতে ফিরলেন মুশফিক। আগের দু’টি ইনিংস ছিলো- ৯৮ ও ৯০। ৯টি চারে ১১৬ বলে ৯৯ রান করেন মুশফিকুর।
দলীয় ১৯৭ রানে মুশফিকুরের বিদায়ের পর মেহেদি হাসান মিরাজকে নিয়ে দলের চাকা ঘুড়াচ্ছিলেন মাহমুদুল্লাহ। ফলে লড়াকু স্কোরের দিকেই এগোচ্ছিলো বাংলাদেশ। কিন্তু ২৩০ রানের মধ্যে মাহমুদুল্লাহ ও মিরাজকে বিদায় দিয়ে বাংলাদেশের রান তোলার পথ কঠিন করে তুলেন পাকিস্তানের জুনায়েদ খান। তারপরও শেষদিকে দলকে আড়াইশ রানের কাছাকাছি নিয়ে যাবার চেষ্টা করেছিলেন অধিনায়ক মাশরাফি। ১টি ছক্কাও মারেন তিনি। কিন্তু ৪৯তম ওভারের পঞ্চম বলে থেমে যেতে হয় ম্যাশকে। ফলে ২৩৯ রানে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশও। ১৩ বলে ১৩ রান করেন মাশরাফি। মাহমুদুল্লাহ ২৫ ও মিরাজ ১২ রান করেন। পাকিস্তানের জুনায়েদ ১৯ রানে ৪ উইকেট নেন।
স্কোর কার্ড :
বাংলাদেশ ইনিংস :
লিটন দাস বোল্ড ব জুনায়েদ ৬
সৌম্য সরকার ক জামান ব জুনায়েদ ০
মোমিনুল হক বোল্ড ব শাহিন ৫
মুশফিকুর রহিম ক সরফরাজ ব শাহিন ৯৯
মোহাম্মদ মিথুন ক এন্ড ব হাসান ৬০
ইমরুল এলবিডব্লু ব শাদাব ৯
মাহমুদুল্লাহ বোল্ড ব জুনায়েদ ২৫
মেহেদি হাসান মিরাজ ক শান ব জুনায়েদ ১২
মাশরাফি বিন মর্তুজা ক জামান ব হাসান ১৩
রুবেল হোসেন রান আউট (হাসান) ১
মুস্তাফিজুর অপরাজিত ০
অতিরিক্ত (লে বা-৮, ও-১) ৯
মোট : (অলআউট, ৪৮.৫ ওভার) ২৩৯
উইকেট পতন : ১/৫ (সৌম্য), ২/১২ (মোমিনুল), ৩/১২ (লিটন), ৪/১৫৬ (মিথুন), ৫/১৬৭ (ইমরুল), ৬/১৯৭ (মুশফিকুর), ৭/২২১ (মিরাজ), ৮/২৩০ (মাহমুদুল্লাহ), ৯/২৩৯ (রুবেল), ১০/২৩৯ (মাশরাফি)।
পাকিস্তান বোলিং :
জুনায়েদ : ৯-১-১৯-৪ (ও-১),
শাহিন : ১০-১-৪৭-২,
হাসান : ৯.৫-০-৬০-২,
নওয়াজ : ৮-০-৩৯-০,
মালিক : ২-০-১৪-০,
শাদাব : ১০-০-৫২-১।