প্রচন্ড খরার কবলে ইরাকের দক্ষিণাঞ্চল

359

সাঈদ দাখিল (ইরাক), ২৫ এপ্রিল, ২০১৮ (বাসস ডেস্ক) : ইরাকের দক্ষিণাঞ্চলের বাসিন্দা আবু আলী খুব সতর্কতার সঙ্গে একটি কূপ থেকে পাম্পের সাহায্যে তার রোদের খড়তাপে ফেটে যাওয়া শুষ্ক জমিতে পানি দেয়ার জন্য জেনারেটর চালু করছেন।
এই গ্রামে কারোরই কূপ থেকে পানি তোলার প্রয়োজন ছিল না। কিন্তু চলমান তীব্র খরা গ্রামবাসীদের কৃষি ও জীবিকার ওপর হুমকি হিসেবে দেখা দিয়েছে।
খবর এএফপি’র।
৭৩ বছর বয়সী কৃষক আবু আলী বলেন, ‘গত বছর থেকে নদীটি শুকাতে শুরু করে। আজ আমাদের পানির একমাত্র উৎস কুয়া।’
ছোটবেলা থেকে আবু আলি ও তার পরিবার সাঈদ দাখিলের এই গ্রামে বাস করছে।
গ্রামটি বাগদাদ থেকে প্রায় ৩শ কিলোমিটার দক্ষিণে ও নাসারিয়া নগরীর পূর্বে অবস্থিত।
একটি কূপ খনন করতে আবু আলির ১ হাজার ৬শ’ মার্কিন ডলার খরচ হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘কূপ থেকে তোলা পানি আমরা আমাদের গরু ও ভেড়াকে খাওয়াই। বিস্বাদ হওয়া সত্ত্বেও এই পানি দিয়েই আমরা রান্না করি। এমনকি বাধ্য হয়ে এই পানিই পান করি।’
তার পরনে ইরাকের ঐতিহ্যবাহী পোশাক।
তার পরিবারের প্রধান খাবার পানির উৎস ছোট ছয়টি জলাধার। সপ্তাহে অন্তত একবার প্রায় ২০ হাজার দিনারের বিনিময়ে এগুলো পূর্ণ করা হয়।
আবু আলি এই গ্রামেই থেকে যাবেন বলে বদ্ধপরিকর। কিন্তু এই খরার কারণে ওই এলাকার ২০টির বেশি গ্রামের বেশ কয়েকটি পরিবার অন্যত্র চলে গেছে।
ইরাকের পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের এক প্রকৌশলী বলেন, এই সংকটের জন্য বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন বহুলাংশে দায়ী।
মেহেদি রশিদ নামের ওই প্রকৌশলী বলেন, ‘টানা দুই মৌসুম বৃষ্টিপাতের পরিমাণ একেবারেই কম এবং উষ্ণতাও বেড়ে গেছে।’
তিনি জানান, ইরাকের জনগোষ্ঠীর ৩০ শতাংশ বৃষ্টির পানির ওপর নির্ভরশীল। বাকী ৭০ শতাংশ মানুষ নদী ও অন্যান্য জলাশয়ের ওপর নির্ভর করে। ইরাকের এই জলাশয়গুলোর পানি ইরান, তুরস্ক ও সিরিয়ার বাসিন্দারাও ব্যবহার করে।
এই জলাশয়গুলোর গতিপথ পরিবর্তনই ইরাকে খরার অন্যতম প্রধান কারণ।
তিনি বলেন, ‘ইরান কারুন নদীর গতিপথ সম্পূর্ণ পরিবর্তন করে দিয়েছে।’
এক সময় এই নদীটি দুই দেশেই প্রবাহিত হতো এবং এটি ছিল ইরাকীদের পানির অন্যতম প্রধান উৎস।
রশিদ আরো বলেন, ইরান ‘কারাজ নদীতে তিনটি বড় বাধ নির্মাণ করেছে।’
এই কারণে দুই দেশে প্রবাহিত হওয়া নদীটির ইরাকের অংশের পানি বেশ কমে গেছে।
তিনি আরো বলেন, আগে যেখানে ইরাক ও ইরানের মধ্যে ৪৫টি জলাধার প্রবাহিত হতো, এখন দুদেশের মধ্যে মাত্র তিন থেকে চারটি জলাধার প্রবাহিত হয়।
জমা আল-দারাজি বলেন, এই অঞ্চলের সবচেয়ে বড় জলাধার মেসোপটমিয়া ‘ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ’ খরার কবলে পড়েছে।
তিনি ইউনেস্কো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্য স্থান রক্ষাকারী একটি সংগঠনে কাজ করেন।