তামাকজাত পণ্য নিয়ন্ত্রণে মূল্যবৃদ্ধি ও সুনির্দিষ্ট করারোপের সুপারিশ

827

ঢাকা, ৩ মে, ২০২১ (বাসস) : যথাযথ পদ্ধতিতে তামাক-কর বৃদ্ধি করা গেলে তামাকের ব্যবহার কমাতে তা কার্যকরী ভূমিকা রাখবে। সোমবার তামাকের ট্যাক্স বৃদ্ধি বিষয়ে ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের উদ্যোগে আয়োজিত ইকোনমিক রিপোর্টাস ফোরামের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যদের সঙ্গে ভার্চুয়াল এক মতবিনিময় সভায় এ অভিমত দেন বক্তারা।
বক্তারা এ সময় বলেন, বাংলাদেশ পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি তামাক ব্যবহারকারী দেশগুলোর অন্যতম। এ দেশে সিগারেটের মূল্য অত্যন্ত কম, বিড়ি আরও সস্তা। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য মতে, ২০১৫-১৬ সালের তুলনায় ২০১৭-১৮ সালে মাথাপিছু জাতীয় আয় (নমিন্যাল) বেড়েছে ২৫ দশমিক ৪ শতাংশ। অথচ এ সময়ে বেশীরভাগ সিগারেটের দাম হয় প্রায় অপরিবর্তিত থেকেছে অথবা সামান্য বেড়েছে। ফলে বর্তমানে সিগারেট অধিক সহজলভ্য হয়ে পড়ছে। এজন্য যথাযথ উপায়ে অর্থাৎ সুনির্দিষ্ট কর বৃদ্ধির মাধ্যমে সিগারেটের মূল্য বৃদ্ধি করা জরুরী।
‘তামাকমুক্ত বাংলাদেশ ২০৪০ গঠনে করণীয়: প্রসঙ্গ তামাক কর’ শীর্ষক এই মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের স্বাস্থ্য ও ওয়াশ সেক্টরের পরিচালক ইকবাল মাসুদ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ন্যাশনাল প্রফেশনাল অফিসার ডা. সৈয়দ মাহফুজুল হক, ক্যাম্পেইন ফর টোবাকো ফ্রি কিডস বাংলাদেশের গ্র্যান্টস ম্যানেজার আবদুস সালাম মিয়া, বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রি কর্পোরেশনের (বিসিআইসি) সাবেক চেয়ারম্যান ও ক্যাম্পেইন ফর টোবাকো ফ্রি কিডস বাংলাদেশের লিড পলিসি এডভাইজার মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান, ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি শারমীন রিনভী ও সাধারণ সম্পাদক এসএম রাশিদুল ইসলাম।
ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের তামাক নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পের মিডিয়া ম্যানেজার রেজাউর রহমান রিজভীর সঞ্চালনায় সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের তামাক নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পের প্রকল্প সমন্বয়কারী মোঃ শরিফুল ইসলাম।
মূল প্রবন্ধে ২০২১-২০২২ অর্থ বছরে সিগারেটের ক্ষেত্রে প্রস্তাব হিসেবে বলা হয়, সকল সিগারেট ব্রান্ডে অভিন্ন করহারসহ মূল্যস্তর ভিত্তিক সুনির্দিষ্ট এক্সাইজ শুল্ক প্রচলন করা। নি¤œ স্তরে প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ৫০ টাকা নির্ধারণ করে ৩২ দশমিক ৫০ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা। মধ্যম স্তরে প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ৭০ টাকা নির্ধারণ করে ৪৫ দশমিক ৫০ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা। উচ্চ স্তরে প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ১১০ টাকা নির্ধারণ করে ৭১ দশমিক ৫০ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক করা এবং প্রিমিয়াম স্তরে প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ১৪০ টাকা খুচরা মূল্য নির্ধারণ করে ৯১ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা। এছাড়া মধ্যমেয়াদে (২০২১-২২ থেকে ২০২৫-২৬) সিগারেটের ব্রান্ডসমূহের মধ্যে দাম ও করহারের ব্যবধান কমিয়ে মূল্যস্তরের সংখ্যা ৪টি থেকে ২টিতে নামিয়ে আনা।
সভায় তামাক নিয়ন্ত্রণে কিছু সুপারিশ করা হয়। সেগুলো হলো- তামাকপণ্যের সহজলভ্যতা হ্রাস করতে মূল্যস্ফীতি এবং আয় বৃদ্ধির সাথে সঙ্গতি রেখে সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক নিয়মিতভাবে বৃদ্ধি করতে হবে। করারোপ প্রক্রিয়া সহজ করতে তামাকপণ্যের মধ্যে বিদ্যমান বিভাজন তুলে দিতে হবে। সকল ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্য উৎপাদনকারীকে করজালের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। একটি সহজ এবং কার্যকর তামাক কর নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন (৫ বছর মেয়াদি) করা, যা তামাকের ব্যবহার হ্রাস এবং রাজস্ব বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখবে এবং তামাকপণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ রপ্তানি শুল্ক পুনর্বহাল করতে হবে।