জাটকা ইলিশ সংরক্ষণে সমন্বিত উদ্যোগ কার্যকরভাবে বাস্তবায়নে সরকার বদ্ধপরিকর : প্রধানমন্ত্রী

339

ঢাকা, ৩ এপ্রিল, ২০২১ (বাসস) : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জাটকা ইলিশ সংরক্ষণে সমন্বিত উদ্যোগ কার্যকরভাবে বাস্তবায়নে সরকার বদ্ধপরিকর।
তিনি আগামীকাল রোববার থেকে শুরু হওয়া ‘জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ-২০২১’ উপলক্ষে আজ দেয়া এক বাণীতে বলেন, ‘আজকের জাটকাই আগামী দিনের পরিণত ইলিশ। তাই জাটকা ইলিশ সংরক্ষণে সমন্বিত উদ্যোগ কার্যকরভাবে বাস্তবায়নে আমরা বদ্ধপরিকর।’ সে লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও সর্বস্তরের জনগণকে সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
ইলিশ আমাদের জাতীয় মাছ। ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য হিসেবে স্বীকৃত ইলিশের স্বাদ, রূপ ও ঘ্রাণ এদেশের কৃষ্টি ও ঐতিহ্যের সাথে মিশে আছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাটকা সংরক্ষণে গণসচেনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ‘মুজিববর্ষে শপথ নেবো, জাটকা নয় ইলিশ খাবো’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে দেশব্যাপী ৪-১০ এপ্রিল ‘জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ-২০২১’ উদযাপিত হচ্ছে জেনে আমি আনন্দিত।’
শেখ হাসিনা বলেন, দেশের মোট মৎস্য উৎপাদনে ইলিশের অবদান প্রায় ১২.১৫ শতাংশ। ইলিশের টেকসই উৎপাদন নিশ্চিত করতে সরকার বিজ্ঞানসম্মত কৌশল গ্রহণ করেছে। ইলিশ সম্পদ সংরক্ষণ এবং উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য যথাযথ প্রযুক্তি উদ্ভাবনের লক্ষ্যে ‘চাঁদপুরস্থ নদী কেন্দ্রে ইলিশ গবেষণা জোরদারকরণ’ শীর্ষক প্রকল্প বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে।
প্রতিবছর ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুমে ২২ দিন মা ইলিশ আহরণ, পরিবহন, মজুদ ও বিপণন নিষিদ্ধকরণ, ইলিশের পরিভ্রমণ পথকে সুরক্ষার জন্য সংশ্লিষ্ট ৩,১৮৮ বর্গ কিলোমিটার জলসীমাকে সামুদ্রিক সংরক্ষিত এলাকা ঘোষণা, সমুদ্রে ৬৫ দিন ইলিশসহ সকল প্রকার মৎস্য আহরণ নিষিদ্ধ কার্যক্রম, জাটকা সংরক্ষণ কার্যক্রম, সম্মিলিত বিশেষ অভিযান পরিচালনা, জেলেদের বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টি ইত্যাদি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ আমরা সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় পূর্বের ধারাবাহিকতায় জাটকা আহরণ নিষিদ্ধ সময়ে ২০২০-২১ অর্থবছরে ৩ লাখ ২৮ হাজার ৮১৫ টি জেলে পরিবারকে এবং মা ইলিশ আহরণ নিষিদ্ধ সময়ে ২০২০-২১ অর্থবছরে ৫ লাখ ২৮ হাজার ৩৪২টি জেলে পরিবারকে ভিজিএফ কার্ডের মাধ্যমে খাদ্য সহায়তা প্রদান করেছি। ’
তিনি বলেন, আমাদের সরকার ইলিশ জেলেদের জন্য বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও ইলিশের টেকসই উৎপাদন বৃদ্ধিকল্পে ২৪৬.২৭ কোটি টাকার ‘ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা’ শীর্ষক প্রকল্প গ্রহণ করেছে। জাটকা সংরক্ষণ ও উন্নয়নে আমাদের সময়োপযোগী ও সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে দেশব্যাপী ইলিশের সহজলভ্যতা ও আকার বৃদ্ধি পেয়েছে। ইলিশ আজ সাধারণ মানুষের ক্রয়সীমায় এসেছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়ে ৫ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টনে উন্নীত হয়েছে, যেখানে ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ইলিশের উৎপাদন ছিল ২ লাখ ৯৯ হাজার মেট্রিক টন। বর্তমানে বিশ্বে আমরা ইলিশ উৎপাদনে প্রথম স্থান অর্জন করেছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে দেশের মানুষকে অনুপ্রাণিত করতে ১৯৭৩ সালে গণভবনের লেকে আনুষ্ঠানিকভাবে পোনা মাছ ছেড়ে মৎস্যসম্পদ উন্নয়ন অভিযানের সূচনা করেন। জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে আমরা গত বারো বছরে সামুদ্রিক মৎস্য আইন-২০২০, মৎস্য ও মৎস্য পণ্য (পরিদর্শন ও মান নিয়ন্ত্রণ) আইন-২০২০, মৎস্যখাদ্য ও পশুখাদ্য উৎপাদন এবং বিপণন ব্যবস্থাপনা নির্দেশিকা-২০২০, বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট আইন-২০১৮, মৎস্য সঙ্গনিরোধ আইন-২০১৮, মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশন আইন-২০১২, মৎস্য খাদ্য ও পশুখাদ্য আইন-২০১০, মৎস্য হ্যাচারি আইন-২০১০ প্রণয়ন করেছি।
তিনি বলেন, তাঁর সরকারের গৃহীত নানামুখী পদক্ষেপের ফলে ২০১৯-২০ অর্থবছরে মোট মাছের উৎপাদন ৪৫.০৩ লাখ মেট্রিক টনে উন্নীত হয়েছে, যেখানে ২০০৮-২০০৯ অর্থবছরে মোট মৎস্য উৎপাদন ছিল মাত্র ২৭.০১ লাখ মেট্রিক টন। বিশ্বে অভ্যন্তরীণ জলাশয়ে মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশ আজ তৃতীয়, বদ্ধ জলাশয়ে মাছ উৎপাদনে পঞ্চম স্থান অর্জন করেছে।
প্রধানমন্ত্রী মুজিববর্ষে ‘জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ -২০২১’ উপলক্ষ্যে গৃহীত সব আয়োজনের সার্বিক সাফল্য কামনা করেন।