সব খাতে দক্ষ নেতৃত্ব গড়ে তোলার আহ্বান রাষ্ট্রপতির

670

ঢাকা, ২৬ মার্চ, ২০২১ (বাসস) : রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ জাতীয় প্যারেড স্কয়ারের অনুষ্ঠানে ভাষণদানকালে দেশ ও জনগণের স্বার্থে সকল ক্ষেত্রে একযোগে নীতি, নৈতিকতা ও আদর্শ প্রতিষ্ঠা ও যোগ্য নেতৃত্ব গড়ে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন।
‘রাষ্ট্রপতি আজ বিকেলে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রামানের জন্মশতবার্ষিকী এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর দশ দিনের অনুষ্ঠানমালার সমাপনী দিনের অধিবেশনে বলেন, ‘আমাদের সকল ক্ষেত্রে নীতি, নৈতিকতা এবং আদর্শ প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি দক্ষ নেতৃত্বও গড়ে তুলতে হবে।’
দেশ ও জনগণের উন্নয়ন রাজনৈতিক নেতৃত্বের একক দায়িত্ব নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘একটি স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে, এটি আমাদের সকলের দায়িত্ব ও কর্তব্য।’
প্রবীণ এই রাজনীতিক দেশের স্বাধীনতাকে অর্থবহ করতে ও স্বাধীনতার সুফল জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে সকলকে সততা, নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সাথে নিজ নিজ অবস্থান থেকে দায়িত্ব পালন করতে হবে বলে উল্লেখ করেন।
তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক নিজ নিজ দায়িত্ব পালনে অত্যন্ত দায়িত্বশীল আচরণ প্রদর্শন করা প্রয়োজন।’
রাষ্ট্রপতি বলেন, স্বাধীনতা মানুষের অধিকার। অধিকারকে অর্জনের মধ্যে সীমাবন্ধ না রেখে তা সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারলেই স্বাধীনতা অর্থবহ হয়ে উঠে।
তিনি বলেন, আবার অধিকারের অপপ্রয়োগ স্বাধীনতাকে খর্ব করে। স্বাধীনতা ও স্বেচ্ছাচারিতাকে এক করে দেখলে চলবে না।
বাংলাদেশের জন্মের পেছনে বঙ্গবন্ধুর ক্যারিশম্যাটিক নেতৃত্বের কথা উল্লেখ করে আবদুল হামিদ বলেন, বঙ্গবন্ধু শুধু বঙ্গের বন্ধু হয়েই থাকেননি, হয়ে উঠেছেন বিশ্ববন্ধু। সারা বিশ্বের নিপীড়িত নির্যাতিত মানুষের আপনজন। দদুটি উদযাপনের আনুষ্ঠানিকতায় সীমাবদ্ধ না রেখে তিনি দেশের নতুন ও ভবিষ্যত প্রজন্মকে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী বঙ্গবন্ধুর জীবন-কর্ম এবং তাঁর নীতি ও আদর্শ সম্পর্কে জানতে পারে সে ব্যপারে গুরুত্বারোপ করেন।
বঙ্গবন্ধুকে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে যথাযথভাবে তুলে ধরার উদ্যোগ নিতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এক্ষেত্রে গবেষক, ইতিহাসবিদ ও রাজনীতিবিদদের অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হবে।
জাতির পিতার খুব ঘনিষ্ঠ সহচর রাষ্ট্রপতি হামিদ বলেন, আজকের দিনটি আমাদের জন্য অত্যন্ত আনন্দের, গর্বের ও সম্মানের। কারণ, ১৯৭১ সালে মার্চের এই দিনের প্রথম প্রহরেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু এই স্বাধীনতা একদিনে বা হঠাৎ করে আসেনি।
রাষ্ট্রপতি আরো বলেন, এর পেছনে ছিল, শোষণ, নিপীড়ন ও বঞ্চনার দীর্ঘ ইতিহাস। লক্ষ লক্ষ জীবনের আত্মত্যাগ রয়েছে। বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতির অধিকার রক্ষার আন্দোলন শুরু করেছিলেন অনেক ত্যাগ আর রক্তের বিনিময়ে। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দীর্ঘ নয়মাস রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি।
‘১৯৫২ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত প্রতিটি পর্যায়ে বঙ্গবন্ধু পুরো দেশকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, বঙ্গবন্ধুকে বছরের পর বছর নির্যাতন, নিপীড়ন ও কারাভোগ সহ্য করতে হয়েছিল, কিন্তু কখনও তিনি তাঁর লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হননি।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু একাডেমিক অনুশীলনের মাধ্যমে তাঁর বিশাল রাজনৈতিক বিচক্ষণতা অর্জন করেননি তিনি রাজনীতির পাঠ নিয়েছেন গণমানুষের কাছ থেকে। তিনি জনগণের ভাষা বুঝতেন, তাদের দাবি-দাওয়া ও প্রয়োজনের কথা জানতেন এবং সব সময় তাদের পাশে দাঁড়াতেন।
রাষ্ট্রপতি জাতির পিতার আদর্শে অনুপ্রাণিত একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ ‘সোনার বাংলা’ গড়ার জন্য সকলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান এবং মুজিব জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর শুভক্ষণে এটাই হোক সকলের চাওয়া-পাওয়া।
বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সম্মানিত অতিথি হিসেবে অনুষ্ঠানে যোগদান করেন।
বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে শেখ রেহানা, রাষ্ট্রপতির সহধর্মিনী রাশিদা খানম, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ. ক. ম. মোজাম্মেল হক এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী প্রমুখ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
ঐতিহাসিক এই অনুষ্ঠানে যোগদান করায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে স্বাগত জানিয়ে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘ভারত বাংলাদেশের নিকটতম প্রতবেশী এবং বিশ্বস্ত বন্ধু। একাত্তরের ভারতীয় রাজনৈতিক নেতা ও জনগণের অবিচ্ছিন্ন নৈতিক ও বৈষয়িক সমর্থনকে গভীর প্রশংসা নিয়ে স্মরণ করছি।’
রাষ্ট্রপতি অহিংস ও অন্যান্য গান্ধীবাদি নীতি অনুসরণ করে সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক রূপান্তরে বিশেষ অবদানের জন্য বঙ্গবন্ধুকে মরণোত্তর ‘গান্ধী শান্তি পুরষ্কার ২০২০’ প্রদানের জন্য ভারত সরকারকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।
স্থল ও সমুদ্রসীমা সংক্রান্ত অনেকগুলো বিরোধ নিষ্পত্তি হয়েছে উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, কিছু অমীমাংসিত ইস্যু সমাধানের জন্য দ্বিপাক্ষিক আলোচনা এখনও অব্যাহত রয়েছে এবং শিগগিরই মৈত্রী ও মর্যাদাপূর্ণভাবে সেগুলির সমাধান আসবে।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ইস্যু নিয়ে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত ১০ লাখেরও বেশি মিয়ানমারের রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে বিশ্ব মানবতার ইতিহাসে এক অনন্য নজির স্থাপন করেছেন। কারণ, বাংলাদেশ জাতি, ধর্ম ও বর্ণ নির্বিশেষে সকলের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে বিশ্বাসী। ভারতসহ বিশ্বস¤প্রদায় রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে কার্যকর ভূমিকা নেবে বলে রাষ্ট্রপতি আশা প্রকাশ করেন।