২৫ মার্চের কালরাতে ওয়্যারলেসে আড়িপেতে শোনা হানাদারদের কথোপকথন

314

ঢাকা, ২৫ মার্চ, ২০২১ (বাসস) : ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালরাতে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী ট্যাংকসহ মারাত্মক অস্ত্র-শস্ত্রে সজ্জিত হয়ে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ঘুমন্ত নিরস্ত্র বেসামরিক মানুষের ওপর অকস্মাৎ নির্মম আক্রমণ শুরু করে।
হামলাকারী ও তাদের কমান্ডাররা স্মৃতিচারণ করে যে-জেনারেল ও তাদের অধীনস্ত কর্মকর্তারা সবাই ওই দমন-অভিযানকালে মানসিক বিকারগ্রস্থদের মতো ক্রোধে উন্মত্ত ছিল।
দুই কমান্ডার-মেজর জেনারেল খাদিম হুসেইন রাজা ও মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী এই নির্মূল অভিযান শুরুর প্রাক্কালে ক্যান্টনমেন্টের গ্যারিসন হলে হালকা মেজাজে ছিলেন। এমনকি তারা সিনেমা দেখছিলেন। মেজর জেনারেল খাদিম হুসেইন রাজা উপর ঢাকা ও মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলীর উপর পূর্ব পাকিস্তানের অন্যান্য স্থানে অপারেশন সার্চলাইট পরিচালনা করার দায়িত্ব ছিল।
রেকর্ড ও সাক্ষ্য এটাই জানায়- কর্মকর্তারা ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের ভেতরে নিরাপত্তা বলয়ে ইজি চেয়ার ও সোফায় শুয়ে বসে আরাম করছিলেন এবং চা-কফি খাচ্ছিল। এদিকে তাদের অধস্তন কর্মকর্তারা ঢাকা ও অন্যান্য প্রধান শহরগুলোতে হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছিল।
তৎকালীন আণবিক শক্তি কমিশনে কর্মরত একজন বাঙালি বিজ্ঞানী তাদের ওয়্যাললেস বার্তায় আড়ি পাততে সক্ষম হন। ওই বার্তা থেকে জানা যায়, সৈন্যরা ওই রাত ও পরের দিন যত বেশি সংখ্যক মানুষকে হত্যা করা সম্ভব সেটাই করতে চাচ্ছিল।
দমন অভিযানকালে শীর্ষ কমান্ডার জেনারেল টিক্কা খানকে বারংবার সেনা ওয়্যারলেসে কর্মকর্তাদের এই নিধন অভিযানে যত বেশি সংখ্যক বাঙালিকে সম্ভব, হত্যা করতে নির্দেশ দিচ্ছিল।
বিভিন্ন সময় আড়ি পাতা বার্তায় এক পাকিস্তানি কমান্ডারকে বলতে শোনা যায়- ‘আমি শুধু একটি ব্যাপারেই বিশ্বাস করি। আর তা হচ্ছে- বাঙালিদের যত সহজে হত্যা করা সম্ভব, অন্য কিছুই তেমন সহজ হবে না। আমি বলছি, তোমাদের নিহতের সংখ্যার ব্যাপারে কোন জবাবদিহী করতে হবে না। সাবাস! খুব ভাল করেছ।’
আণবিক শক্তি কমিশনের বাঙালি বিজ্ঞানী প্রফেসর ড. এমএম হুসেইন এই বেতার বার্তা আড়ি পেতে একটি ‘গার্ডিং অডিও টেপে’ রেকর্ড করেন।
কয়েক বছর পর তার ছোট বোন মনিরা হোসেইনের সহায়তায় তিনি এর আংশিক অনুলিপি প্রস্তুত করেন। যা ‘টিক্কা খান ফ্রম কন্ট্রোল রুম’ নামে একটি বুকলেটে প্রকাশিত হয়।
জাতির পিতা জন্মÑশত বার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণ-জয়ন্তী উদযাপনের বছরেই বাসস এই অনুলিপির প্রায় সম্পূর্ণই প্রস্তুত করেছে। নীচে তা তুলে ধরা হলো-
কন্ট্রোল রুম : হ্যালো ৯৯, হ্যালো। তুমি বেতার চালু রাখো। তা না হলে ‘ইউনিট ২৬’ এবং অন্যান্যদের কথা দুবার করে বলতে হবে। তাই বলছি, বেতার বন্ধ করবে না। এখন বিশেষ কোন নতুন খবর নেই। রিজার্ভ লাইন দখল করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় লড়াই চলছে।
{বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় হত্যা ও ধ্বংসের ভার ছিল ইউনিট ৮৮-এর উপর।} ইউনিট ৭৭ কন্ট্রোলকে বলে, ৮৮ জানাচ্ছে-তার কাজ ভালোভাবেই এগোচ্ছে। কিন্তু ঐ এলাকায় এতো বেশি বাড়ি যে তার প্রত্যেকটিকে আলাদা আলাদা করে শেষ করতে হচ্ছে। এখনও পর্যন্ত তাদের কোন ক্ষয়-ক্ষতি হয়নি। তবে, তাদের দিকে গুলি ছোঁড়া হচ্ছে। তাদের হাতে যা অস্ত্র শস্ত্র আছে সবই কাজে লাগাচ্ছে।
কন্ট্রোল : ৭৭ শুনছো? ৮৮ কে বলো তার ‘বড়োভাই’ এখনই যাচ্ছে। আশা করি তাদের দিয়েই বাড়িগুলো ধসিয়ে দিতে পারবে। কিন্তু আমার ধারণা ‘লিয়াকৎ’ ও ‘ইকবাল’ এখন শান্ত। আমার ধারণা কি ঠিক?
৭৭ : চূড়ান্ত খবর পাইনি। তবে ঐ দুটি সম্পর্কে ৮৮ বেশি খুশী।
কন্ট্রোল : বা-বা-বা। এখন ছোকরাদের রাস্তায় রাস্তায় কারফিউর কথা জানাতে বলো। এটা পয়লা নম্বর। দোসরা নম্বর-তারা আরও বললে, সব জয়বাংলা পতাকা, নামাতে হবে। যদি কোন বাড়িতে ঐ পতাকা উড়তে দেখা যায়, বাড়ির মালিককে তার ফল ভুগতে হবে। কোন কালো পতাকা চলবে না। শহরের কোথাও কোন কালো পতাকা দেখা গেলে তার ফল হবে খুবই খারাপ। সকলকে একথা পরিষ্কার বুঝিয়ে দাও।
৭৭ : তোমার কথা শুনলাম।
কন্ট্রোল : পথের বাধা সম্পর্কেও বলার আছে। কাউকে বেরিকেড তৈরি করতে দেখা গেলে সেখানেই গুলি করা হবে। যে এলাকায় বেরিকেড তৈরি করা হবে সেখানকার বাসিন্দাদের ধরা হবে, ঐ কাজের তাদেরই দায়ী করা হবে এবং রাস্তার দু’পাশে, আবার বলছি রাস্তার দু’পাশে যত বাড়ি আছে সব গুড়ো করা হবে। সকলকে এ কথা ভালো করে বুঝিয়ে দাও। সারা রাত সারা দিন ঘোষণা প্রচার করো।
{৮৮ ইউনিটকে সাহায্য করার জন্য ইকবাল (বর্তমান জহুরুল হক হল) হলের পশ্চিমে রেল লাইনের (বর্তমানে উঠিয়ে ফেলা হয়েছে) কাছে ছিল ইউনিট-৪১। ইউনিট ৪১ কে কন্ট্রোল বললো- পথে বাধা সৃষ্টি করা সাংঘাতিক অপরাধ। যেখানে বাধা সৃষ্টি করা হবে তার দু’পাশের সব বাড়ির মালিকদের গুলি করা হবে। এ কথা সকলকে পরিষ্কারভাবে বুঝিয়ে দাও।}
৮৮ : ইমাম বলছি। আপনার নির্দেশ দিন।
কন্ট্রোল : এখনই সকলকে জয় বাংলা পতাকা ও কালো পতাকা নামাতে হুকুম দাও। না হলে তাদের গুলি করো।
ইমাম : জো হুকুম।
কন্ট্রোল : কোন সাহায্য দরকার হলে চাইবে। ‘বক্সার’রা জায়গা মতো যাচ্ছে। সকাল হতেই তারা পথের সব বাধা ভাঙতে শুরু করে দেবে।
৮৮ : ধন্যবাদ। আর কিছু নেই। সব ঠিকমতো চলছে।
কন্ট্রোল : বেশ, তুমি এবার কেটে পড়ো। হ্যালো ৪১, হ্যালো। শুনতে পাচ্ছে?
৪১ : শুনছি।
কন্ট্রোল : রেললাইনের পশ্চিমে ফাঁকা পথের উপর পাহারা বসিয়েছো তো? ইউনিট ২৬ ও ৮৮ কে যারা বাধা দিচ্ছে তারা যেন ও পথ দিয়ে সরে পড়তে না পারে।
৪১ : ওখানে আমরা ঘন ঘন টহলদারী করছি। প্রায় প্রতি তিন মিনিটে। কড়া নজর রাখছি।
কন্ট্রোল : বেশ! আমি নিশ্চিত যে তুমি সবটা সামলাতে পারবে। ২৬-এর লোকেরা ‘ডেইলী পিপল’-এর বন্ধুদের খোঁজ কর। এবার সরে পড়।
৯৯-৮৮ : এর কাছে জানতে চায়-হাইয়েস্ট কন্ট্রোল জানতে চাইছে জগন্নাথ, লিয়াকৎ ও ইকবালে কি রকম বাধা পেয়েছো।
৮৮ : প্রথমে জগন্নাথ ও ইকবাল থেকে প্রচুর গোলা ছোড়া হয়েছে।
৯৯ : তারপর?
৮৮ : আমি ‘রোমিও রোমিও’ চালু করতেই সব ঠান্ডা। এখন ইকবালে চললাম। সেখান থেকে পাকা খবর দেবো।
৮৮ : প্রতিপক্ষ অটোমেটিক অথবা গ্রেনেড ব্যবহার করছে কিনা জানিও।
৮৮ : প্রচুর ‘থ্রি নট থ্রি’ চালিয়েছে। অটোমেট্রিক বা অন্য কোন শব্দ শুনিনি।
{প্রেসিডেন্টের প্রাসাদে মোতায়েন ইউনিট ২৬ এর কাজ ছিল পুলিশ লাইনে হত্যাযজ্ঞ চালানো। ইংরেজি দৈনিক ‘দি পিপলস’ ধ্বংস করা এবং টেলিফোন এক্সচেঞ্জ দখল করা।}
৯৯ : ২৬-কে জিজ্ঞেস করো- তোমার খবর কি? সব কাজ শেষ না কি?
২৬ : দু’হাজার দখল করা হয়েছে। রমনা থানা, কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন দখল করা হয়েছে। টেলিভিশন ও বেতার কেন্দ্র আমাদের হাতে-টেলিফোন এক্সচেঞ্জ আমাদের আয়ত্বে।
৯৯ : এখান থেকে পুরানা পল্টন এলাকার আগুন দেখতে পাচ্ছি- হু হু করে জ্বলছে। ‘হেড অফিস’ জ্বলছে না অন্য কিছু?
২৬ : এলাকা দু’হাজার জ্বলছে। আবার বলছি, এলাকা দু’হাজার।
৯৯ : ‘পিপলস ডেইলীর অবস্থা কি?
২৬ : গুড়ো। আবার বলছি- গুড়ো। আমারদ দু’জন গুরুতর জখম। তাদের হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। আরও দু’জন আঘাত পেয়েছে, তবে কম।
৯৯ : প্রতিপক্ষের ক্ষয় ক্ষতি কেমন? কোন আন্দাজ করা যায়?
২৬ : না এখনই এ সম্পর্কে কিছু বলা শক্ত। এখনও কোথাও কোথাও আগুন জ্বলছে। বাকি সব ধ্বংস্তূপ। সেই জন্যই এখন এ ব্যাপারে কিছু বলা যায় না।
৯৯ : পুলিশ লাইনও ধ্বংস করেছো?
২৬ : এইমাত্র তো বললাম, সেখানে আগুন জ্বলছে।
৯৯ : বেশ বেশ। সরে পড়।
{এরপর সিগন্যাল এলা ইউনিট ৫৫-এর কাছ থেকে। এই ইউনিটেরও কাজ ছিল ভাঙ্গা, তছনছ করা।}
৫৫ : পথের ওপর কিছু বাধা রয়েছে, অন্যদের সাহায্য তা সরাচ্ছি।
৯৯ : বেশ ভালো। ২৬ তোমাদের চায়। ৮৮-এর কিছু অসুবিধা হচ্ছে। তুমি এখন কোথায়?
৫৫ : খামারবাড়ি দরজার সামনে। ডিনামাইট বা অন্য কিছু ব্যবহার বেরিকেড ভাঙ্গছি।
৯৯ : আশা করি তোমাদের ঠেকাবার মতো বুকের পাটা কারো হয়নি?
৫৫ : আমরা চারিদিকে ‘চিতা’ ছেড়ে দিয়েছি। এখন পর্যন্ত কেউ সে সাহস দেখায়নি।
৯৯ : সঙ্গে বুলডোজার এবং যন্ত্র আছে তো?
৫৫ : হ্যা।
৯৯ : চমৎকার।
{এবার ৯৯, ২৬-কে ধরে -ডেইলী পিপলস থেকে জবরদস্ত কাউকে পাকড়াতে পেরেছ?
২৬ : না, আমার সেপাইরা আরো কয়েকজন দামী লোকের বাড়ি গেছে। দেখি তারা কি খবর আনে।
৯৯ : ‘আলফা লিমা’ অফিস দখল করা হয়েছে?
২৬ : না, সে কাজ ভোরের জন্য রাখা হয়েছে।
৯৯ : বেশ মতলবমতো এগিয়ে যাও। ছোটখাটো যা ঘটবে, সঙ্গে সঙ্গে জানাবে।
এবার ৭৭, ২৬-কে ডেকে বলে : ‘মারখোর’কে জানিয়ে দাও যে, সূর্যোদয়ের পূর্বেই যেন সব মৃতদেহ গুম করে ফেলা হয়। এটা ইমামের আদেশ। সকলকে জানিয়ে দাও।
কন্ট্রোল ৮৮-কে প্রায় একই নির্দেশ দেয় : সব লাশ হাওয়া করে দেবার ব্যবস্থা করবে। কারো চোখে যেন না পড়ে।
এবার কথা হয় কন্ট্রোল ও ৯৯-এর মধ্যে : রাত একটার পর প্রায় আধা ঘন্টা তোমার সঙ্গে যোগাযোগ ছিল না। টেলিফোন ঘর আর এই ঘরের মধ্যে মাকু মারতে হয়েছে? তখন যা ঘটেছিল জানাও।
৯৯ : আরম্ভ করেছি। ‘বেলালের ছোকরারা’ ধাড়ি পাখিকে’ খাঁচায় ভরেছে। তারপর একে একে দখল করা হয়েছে রমনা থানা, কমলাপুর রেলস্টেশন, টেলিফোন এক্সচেঞ্জ, ডেইলী পিপল। এখন কাজ করছে বিশ্ববিদ্যালয় এবং ধানমন্ডি এলাকায়। সেখানে কয়েকজনকে পাওয়া যাচ্ছে না।
কন্ট্রোলের উদ্বিগ্ন জিজ্ঞাসা : কাদের পাওয়া যাচ্ছে না?
৯৯ : তাউজুদ্দীন এবং ভূ’য়া বাড়িতে নেই। ফিজিক্যাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউটেও মাল (অস্ত্রশস্ত্র) নেই। অন্যদের খবর কি?
কন্ট্রোল : ৪১ কযেকজনকে পাকড়েছে বটে, তবে আসল মালেরা আগেই ভেগেছে, বোধ হয় কালকেই। ৪১ তখন অবশ্য সারা এলাকাটা বেড়াজালে ঘিরেছে, যাতে আর কেউ পালাতে না পারে। আশা করি তুমি তোমার অতিথিদের (বন্দী) নিয়ে আনন্দেই আছো?
৯৯ : ভাবছি ওদের কিছু খেতে দেওয়া যায় কি করে।
কন্ট্রোল : ভেবনা। ভেবনা। এখন ওসব ভাবার দরকার নেই।
{ঢাকা শহরে তখন রক্তিম রাত্রির অবসানে সূচনা হচ্ছে একটি দুঃস্বপ্নের দিনের।}
কন্ট্রোল ; তখন সব ইউনিটকে বললো-এখন যদি কোথাও জয় বাংলা পতাকা বা কালো পতাকা নিশান চোখে পড়ে, সে এলাকার লোকদের ভালোমতো ওষুধ দাও। ধানমন্ডির প্রতি বাড়ির প্রতিটি ইট পর্যন্ত তল্লাশি চালাও। যাকে খুশী বন্দী করো-মারো। চালিয়ে যাও। চালিয়ে যাও।
কন্ট্রোল : ৮৮ তোমার কাজ মিটবে?
৮৮ : এখন পৌনে সাতটা। আটটার মধ্যেই এখান থেকে বেড়িয়ে পড়বো। লাশগুলো জড়ো করে পাচার করার জন্য ঘণ্টাখানেক লাগবে।
কন্ট্রোল : তুমি শুধু লাশগুলো জড়ো করো। সেই ফাঁকে ২৬-কে বলে দাও বাকি ব্যবস্থা করতে। যতো তাড়াতাড়ি পারো তোমার পরবর্তী জায়গা জিঞ্জিরার দিকে চলে যাও। ক্যাম্পাস এলাকার মধ্যে থেকে আর কেউ গুলি ছুঁড়েছে?
৮৮ : না।
কন্ট্রোল : হ্যালো ১৬, হ্যালো, তোমার খবর কি?
১৬ : গুণতি চলছে। আশেপাশে কাউকে ঘেঁষতে দিচ্ছি না।
কন্ট্রোল : ঠিক আছে। যা ভালো বোঝ করো।
কন্ট্রোল : ৮৮ তোমার আরও দায়িত্ব ছিল সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন দখল করা। তার কি হলো?
৮৮ : দখল করা হয়েছে।
কন্ট্রোল : তবে তো ভালই। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় শিকার হলো কতো? চোখে যা দেখছো তাতে কত আন্দাজ হয়? কত খতম, জখম বা বন্দী?
৮৮ : মনে হয় শ’তিনেক।
কন্ট্রোল : অপূর্ব, তিনশ খতম? না বন্দী? জখম?
৮৮ : আরে না না। একেবারে সাফ। খতম্
কন্ট্রোল : খাসা, খাসা। সেটাই সবচেয়ে সহজ কাজ। চালিয়ে যাও, বেপরোয়া চালিয়ে যাও। তোমার কাছে কেউ কোন কৈফিয়ৎ চাইবার নেই। আবার বলছি, যা দেখাচ্ছো- জবাব নেই। আবার বরছি, সাবাশ। বড় খোশ খবর দিলে।
এ বার্তা বিনিময় থেকে সহজেই অনুমতি হয় যে, পাকিস্তানী সামরিক জান্তার দল সুপরিকল্পিত উপায়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলো বাঙালিদের উপর এবং সুদীর্ঘ ন’মাস তারা চালিয়েছিলো এ হত্যাযজ্ঞ সারা বাংলার বুকে।
গোপন বার্তা বিনিময়ে যে ‘কোড’ নাম ব্যবহার করা হয়েছিলো সেগুলো ছিলো নি¤œরূপ :
কোড নাম আসল পরিচয়
হাইয়েস্ট কন্ট্রোল – টিক্কা খানের অফিস
পালের গোদা – ঢাকার সাবেক গভর্নর ভবন, বর্তমানে বঙ্গভবন
চিতা – ট্যাঙ্ক
বড় ভাই – গোলন্দাজ বাহিনী
লিয়াকৎ – বর্তমানে সূর্যসেন হল
একবাল – ইকবাল হল। বর্তমান জহুরুল হক হল
জগন্নাথ – জগন্নাথ হল
ইমাম – কমান্ডিং অফিসার
বক্সার – কারিগর । বুলডোজারসহ
ডেইলী পিপল – দি পিপল
বন্ধু – সন্দেহভাজন ব্যক্তি
রোমিও – রিকয়েললেস রাইফেল
দু’হাজার – পুলিশ লাইন
হেড অফিস – আওয়ামী লীগ দপ্তর
আলফা লিমা – আওয়ামী লীগ
মারখোর – এডজুট্যান্টন
বেলালের ছোকরা – কমান্ডো বাহিনী
ধারি পাখি – শেখ মুজিবুর রহমান