দেশজুড়ে বাড়ছে সূর্যমুখীর আবাদ : চলতি মৌসুমে জয়পুরহাটে ৫০০ বিঘা জমিতে সূর্যমুখীর চাষ

332

ঢাকা, ২৪ মার্চ, ২০২১ (বাসস) : হলুদ রঙের নান্দনিক একটি ফুল সূর্যমুখী। দেখতে সূর্যের মত এবং সূর্যের দিকে মুখ করে থাকে, তাই ফুলকে সূর্যমুখী বলে। সূর্যমুখী থেকে তৈরি তেলও পুষ্টিগুণ সম্পূর্ণ। বিশ্বেজুড়েই সূর্যমুখী তেলের চাহিদা এখন ব্যাপক। আমাদের দেশেও ক্রমশ চাহিদা বৃদ্ধির কারণে বিভিন্ন জেলায় বাণিজ্যিকভাবে সূর্যমুখীর চাষ শুরু হয়েছে। পুষ্টিবিদদের মতে, সূর্যমুখীর তেলে কোলেস্টেরলের মাত্রা খুবই কম এবং হৃদরোগীদের জন্য বেশ কার্যকর। এতে রয়েছে ভিটামিন এ, ডি এবং ই। এই তেল শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে।
বাসস জেলা প্রতিনিধিদের সহযোগিতায় দেশের বিভিন্ন স্থানে সূর্যমুখী চাষের চিত্রটুকু তুলে ধরার প্রয়াসে ‘দেশজুড়ে বাড়ছে সূর্যমুখীর আবাদ’ শীর্ষক ধারাবাহিক প্রতিবেদন তুলে ধরা হচ্ছে। আজ থাকছে জয়পুরহাট জেলায় সূর্যমুখী চাষের চিত্র-
সূর্যমুখী চাষের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে উত্তরাঞ্চলের কৃষি উৎপাদনে উদ্বৃত্ত জেলা জয়পুরহাটে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র বাসস’কে জানায়, কৃষি প্রণোদনার আওতায় জেলায় চলতি ২০২০-২১ ফসল চাষ মৌসুমে ৫০০ বিঘা জমিতে সূর্যমুখী চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে জয়পুরহাট সদর উপজেলায় ১৫০ বিঘা, আক্কেলপুর উপজেলায় ১০০ বিঘা, পাঁচবিবি উপজেলায় ১৫০ বিঘা, ক্ষেতলালে ৫০ বিঘা ও কালাই উপজেলায় ৫০ বিঘা।
সূর্যমুখী চাষের জন্য কৃষি প্রণোদনার আওতায় ৫০০ জন কৃষককে প্রতি বিঘা জমিতে সূর্যমুখী চাষে প্রদান করা হয়েছে বীজ ও আনুসঙ্গিক খরচ বাবদ ১ হাজার ৪০০ টাকা করে মোট ৭ লাখ টাকা। দেশের বিভিন্ন জেলায় সূর্যমূখীর চাষ হলেও মাটির গুণাগুণ ও আবহাওয়া উপযোগি বিবেচনায় জয়পুরহাটেও সূর্যমুখী চাষের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। সূর্যমুখীর বীজে শতকরা ৪০-৪৫ ভাগ উপকারী লিনোলিক এসিড রয়েছে এবং ক্ষতিকর কোন ইরোসিক এসিড থাকে না। হৃদরোগীদের জন্য সূর্যমুখী তেল খুবই উপকারী বলে জানান, জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ স ম মেফতাহুল বারি।
কৃষি বিভাগ জানায়, ১৯৭৪ সাল থেকে বাংলাদেশে সূর্যমুখীর চাষ শুরু হয়। সারাবছর সূর্যমুখীর চাষ করা গেলেও অগ্রহায়ণ মাসে অর্থাৎ নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে চাষ করলে ভাল ফলন পাওয়া যায়। সূর্যমুখীর জন্য জমি গভীর ভাবে চাষ দিতে হয়। ৪/৫ বার আড়াআড়ি চাষ ও মই দিয়ে মাটি ঝরঝরে করে নিতে হয়।
বর্তমানে দেশে দু’টি জাতের সূর্যমুখী চাষ করা হয়েছে থাকে। এরমধ্যে রয়েছে কিরণী (ডিএস-১) ও বারি সূর্যমুখী-২। ১৯৯২ সালে অনুমোদন পাওয়া কিরণী (ডিএস-১) জাতটির কান্ডের ব্যাস ১ দশমিক ৫ থেকে ২ দশমিক ০০ সেন্টিমিটার। পরিপক্ক পুষ্পমঞ্জুরী বা শাখার ব্যাস ১২-১৫ সেন্টিমিটার। প্রতি মাথায় বীজের সংখ্যা ৪০০-৬০০। বীজে তেলের পরিমাণ রয়েছে শতকরা ৪২-৪৪ ভাগ। জাতটি অলটারনারিয়া ব্রাইট রোগ সহনীয়। ৯০ থেকে ১১০ দিনের মধ্যে ফসল ঘরে তোলা যায়। হেক্টর প্রতি ফলন ১ দশমিক ৬ থেকে ১ দশমিক ৮ টন পর্যন্ত হয়ে থাকে।
অপরদিকে, বারি সূর্যমুখী-২ জাতটির কান্ডের ব্যাস ২ থেকে ২.৪ সেন্টিমিটার। পরিপক্ক পুষ্পমঞ্জুরী বা শাখার ব্যাস ১৫-১৮ সেন্টিমিটার। প্রতি মাথায় বীজের সংখ্যা ৪৫০-৬৫০। তেলের পরিমাণ রয়েছে শতকরা ৪০-৪৫ ভাগ। ৯৫ থেকে ১০০ দিনের মধ্যে বারি সূর্যমুখী-২ ফসল ঘরে তোলা যায়। হেক্টর প্রতি ফলন হয়ে থাকে ২ থেকে ২ দশমিক ৩ টন পর্যন্ত । খরিপ-১ মৌসুমেও বারি সূর্যমুখী-২ চাষ করা যায়। তবে এতে ফলন একটু কম হয়। সূর্যমুখীর বীজ সারিতে বুনতে হয়। সারি থেকে সারির দূরত্ব ৫০ সেন্টিমিটার এবং সারিতে গাছ থেকে গাছের দূরত্ব ২৫ সেন্টিমিটার।
জয়পুরহাট সদর উপজেলার ধলাহার ইউনিয়নের দোগড় রামকৃষ্ণপুর গ্রামের কৃষক আবু নাসিম রনক এবার কৃষি প্রণোদনার আওতায় এক বিঘা জমিতে সূর্যমুখীর চাষ করেছেন। বীজ বপণ করে ৩৭ দিনের মাথায় সূর্যমুখীর চারা গুলো ঝলমলে হয়ে উঠেছে এবং চারার মাথায় ফুল আসতে শুরু করেছে। ভাল ফলন পাবেন এমন আশায় বুক বাধছেন বলে জানান তিনি।
সূর্যমুখী চাষে কৃষকদের সব রকম প্রযুক্তিগত পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে বলে জানান, সদর উপজেলার উপ সহকারি কৃষি কর্মকর্তা অমল চন্দ্র মন্ডল।