ঈদ ভ্রমণ নির্বিঘ্ন করার পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার : প্রধানমন্ত্রী

1369

ঢাকা, ২২ আগস্ট, ২০১৮ (বাসস) : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জনগণ যেনো নির্বিঘ্নে নিজেদের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে পবিত্র ঈদুল আযহা উদযাপন করতে পারে সে জন্য তাঁর সরকার সব রকমের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ সকালে তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবনে পবিত্র ঈদুল আযহা উপলক্ষে তাঁকে শুভেচ্ছা জানাতে আসা অতিথিদের উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়ন ঘটিয়েছি যাতে করে যারা গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছেন তারা যেন ভালভাবে নিজ নিজ এলাকায় পৌঁছতে পারেন এবং পরিবার পরিজনের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করে আবার সহি সালামতে ফেরত আসতে পারেন।’
সার্বিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পুলিশ, র‌্যাব থেকে শুরু করে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রত্যেকেই অক্লান্ত পরিশ্রম করছে, যাতে আপনারা নির্বিঘেœ ঈদ উদযাপন করতে পারেন।’
প্রধানমন্ত্রী এ সময় মহৎ কিছু অর্জনের জন্য দলের নেতা-কর্মীদের ত্যাগ শিকারে প্রস্তুত থাকার আহবান জানিয়ে বলেন, পবিত্র ঈদুল আযহা আমাদের সেই ত্যাগেরই শিক্ষা দেয়।
‘মহৎ কিছু অর্জনের জন্য মহান ত্যাগের প্রয়োজন’ বঙ্গবন্ধুর এই উদ্ধৃতি উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমি সবসময়ই বঙ্গবন্ধুর এই দর্শনকে সঠিক বলে মনে করি।
শেখ হাসিনা বলেন, এ বছর শোকের মাস আগস্টেই পবিত্র ঈদুল আযহা এসেছে। এ মাসেই বঙ্গবন্ধুর আত্মত্যাগসহ অনেক মহান আত্মত্যাগের স্মৃতি আমাদের রয়েছে।
তিনি বলেন, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ভয়াবহ গ্রেনেড হামলায় আইভি রহমানসহ আমাদের অনেক নেতা-কর্মীকে আমরা হারিয়েছি।
বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, ’৭৫-এর ১৫ আগস্টের ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞ থেকে কেবল আমরা দুই বোন বেঁচে গেছি। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়ন করাই আমার একমাত্র লক্ষ্য। কাজেই আমাদের জন্য আমাদের ছেলে-মেয়েদের জন্য সৃষ্টিকর্তার কাছে আপনারা দোয়া করবেন।
শেখ হাসিনা বলেন, দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য আমরা নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছি। যাতে তারা একটু উন্নত এবং সুন্দর জীবন পেতে পারে, সকলে খাদ্য পায়, আশ্রয় পায়, শিক্ষালাভের এবং স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ পায়।
তিনি বলেন, ‘গভীর শোক বুকে ধারণ করে আমরা সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছি, যেখানে জনগণ শান্তি এবং উন্নত জীবন লাভ করতে পারে।’
জাতির পিতা যে সুখী ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখতেন তেমন বাংলাদেশ গড়ে তোলাই আমাদের কর্তব্য উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী জনগণকে অনুরোধ করেন, তারা যেন জাতির পিতা এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের জন্য এই পবিত্র দিনে দোয়া করেন।
এ সময় সামনে জাতীয় নির্বাচনের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী দলের নেতা-কর্মীদের নিজ নিজ এলাকায় প্রত্যেকের ঘরে ঘরে গিয়ে সরকারের উন্নয়নের তথ্য প্রচার করারও আহবান জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জনগণ খুশি থাকলে, তারা ভোট দিলে, আবারও ক্ষমতায় আসবো। ভোট না দিলে আফসোস নেই। দেশের মানুষের জন্য কাজ করছি।’
ঈদের জামাত শেষ করেই সকাল সাড়ে ৯টা থেকে গণভবনে প্রধানমন্ত্রীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানাতে একের পর এক বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের আগমন শুরু হয়। প্রধানমন্ত্রী আগত অতিথিদের সঙ্গে শুভেচ্ছা এবং কুশলাদি বিনিময় করেন। এ সময় গণভবনের বিশাল লনটি চমৎকার সাজে সজ্জিত করা হয়।
শুরুতে আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতৃবৃন্দ এবং মন্ত্রিপরিষদ সদস্যবৃন্দ প্রধানমন্ত্রীকে ফুলের তোড়া দিয়ে ঈদের শুভেচ্ছা জানান।
বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, সংসদ সদস্যবৃন্দ, মুক্তিযোদ্ধাগণ, আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার এবং ব্যবসায়িক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এবং ভিক্ষুক ও হতদরিদ্র মানুষসহ সাধারণ জনগণকে এদিন প্রধানমন্ত্রী ঈদের শুভেচ্ছা জানান।
অন্যান্য বছরের মতো শুভেচ্ছা জানানোর এই দিনটিতে রাষ্ট্রের সর্ব্বোচ্চ নির্বাহীর নিকট নিজের দুঃখ-কষ্ট তুলে ধরার সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করে অনেকেই তাদের সমস্যার কথা তুলে ধরেন এবং সমস্যার সমাধানে তাঁর হস্তক্ষেপ ও সহযোগিতা কামনা করেন।
জনসাধারণের অভাব-অভিযোগ গ্রহণ করার জন্য এদিন গণভবন চত্বরে একটি ডেস্কও খোলা হয়। অভাব-অভিযোগ পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণেরও আশ্বাস দেন প্রধানমন্ত্রী।
পরে প্রধানমন্ত্রী সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন, পদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তাবৃন্দ এবং বিভিন্ন বন্ধুভাবাপন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতগণও এদিন পৃথক অনুষ্ঠানে গণভবনে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর ছোট বোন শেখ রেহানা এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্য, বিভিন্ন সংস্থার প্রধানগণ, দলের জ্যেষ্ঠ নেতৃবৃন্দ এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তাবৃন্দ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।