উৎসবের আমেজ বাড়াতে গোল্ডকোস্টে উসাইন বোল্ট

672

গোল্ড কোস্ট (অস্ট্রেলিয়া), ১২ এপ্রিল, ২০১৮ (বাসস) : তিনি আসবেন। সেই অপেক্ষায় যেন অধীর হয়ে উঠেছিল পুরো গোল্ড কোস্ট। অবশেষে বুধবার রাতে এই শহরে পা রেখেছেন বিশে^র দ্রুততম মানব উসাইন বোল্ট। তার আসার পর থেকেই তাকে ঘিরে চলছে নানা আয়োজন। কমনওয়েল গেমসে উৎসবের আমেজ রাতারাতি অনেকটাই বাড়িয়ে দিয়েছেন এই জ্যামাইকান। বোল্ট বরাবরই দারুণ প্রাণবন্ত অ্যাথলেট। দৌঁড় শেষে তার উদযাপনের স্টাইল তো রীতিমতো জগদ্বিখ্যাত। গোল্ড কোস্টও এখন দারুণ মেতে রয়েছে তাকে নিয়ে।
জ্যামাইকান বোল্ট অন্যদের চেয়ে একটু যেন আলাদা। ব্যক্তি হিসেবে তিনি অনেকটাই দুরন্ত প্রকৃতির। যেখানেই যান সবাইকে মাতিয়ে রাখেন। বুধবার রাতে গোল্ড কোস্ট বিমানবন্দরেই তাকে জেকে ধরেন মিডিয়ার লোকজন। অবলীলায় তিনি সবাইকে পাশ কাটিয়ে বেরিয়ে যান। আর বলে যান, সমুদ্রে নামার জন্য তিনি অধীর হয়ে আছেন। কথাবার্তা পরে হবে।
২০০৯ সালে বার্লিনে বিশ^ চ্যাম্পিয়নশিপে ৯.৫৮ সেকেন্ড সময় নিয়ে ১০০ মিটার স্প্রিন্টে বিশ^ রেকর্ড গড়েন বোল্ট। এখনও সেই রেকর্ড ভাঙতে পারেননি কেউ। গত বছর অবসর নিয়েছেন বোল্ট। তারপর তিনি অবসরের সঙ্গী হিসেবে বেছে নিয়েছেন ফুটবলকে।
অবসরের পর বোল্ট এই প্রথম কোনো কোনো আন্তর্জাতিক ক্রীড়া আসরে প্রতিযোগী না হয়েও অংশ নিচ্ছেন। দর্শকের সারিতে বসে গেমস উপভোগের আনন্দ কেমন সেটা জানাতে গিয়ে বোল্ট বললেন, দুর্দান্ত। গোল্ড কোস্টে নানা অনুষ্ঠানে যোগ দিতে হচ্ছে বোল্টকে। তবে সবার আগে ছবি তুলেছেন গেমসের মাসকট বরোবির সঙ্গে।
বোল্টকে অনায়াসে বলা যায় রেকর্ডের বরপুত্র। ১৯.১৯ সেকেন্ড নিয়ে ২০০ মিটার স্প্রিন্টে এবং ৩৭.০৪ সেকেন্ড নিয়ে ৪ গুণিতক ১০০ মিটারেও বিশ^ রেকর্ডের অধিকারী তিনি।
গোল্ড কোস্টের অপটাস কনফারেন্স সেন্টারে আজ সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নের জবাব দেন বোল্ট। কথা বলেন, নিজের জীবনের অতীত, বতর্মান ও ভবিষ্যত নিয়ে। অনেক অনেক স্মৃতিচারণ আর নানা অভিজ্ঞতার কথাও ভাগাভাগি করেন সাংবাদিকদের সঙ্গে। জানান, এই মুহূর্তে তার প্রাণের খেলা ফুটবল। বিশ^কাপ দেখতে রাশিয়া যাচ্ছেন কিনা সে বিষয়ে অবশ্য নিশ্চিত করেননি।
সংবাদ সম্মেলনে অনেক কথার ভিড়ে তিনি এটাও বলেন, ‘জ্যামাইকার এক প্রত্যন্ত গ্রামে আমার জন্ম। রাস্তায়-রাস্তায় ফুটবল খেলেছি। সব সময় তো আসল ফুটবল পেতাম না। হাতের কাছে যা পেতাম সেটাই বল বানিয়ে নিয়ে খেলতাম। প্লাস্টিকের বোতল, কাপড়ের বান্ডিল কিছুই বাদ ছিলো না। তখন কল্পনাতেও ছিলো না একদিন এতটা পথ পাড়ি দিয়ে এত দূর অবধি আসতে পারবো।
ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ডে গতির লড়াইয়ে তার রেকর্ড কখনও ভাঙবে কিনা- এমন প্রশ্নে বোল্ট হাসতে হাসতে বলেন, রেকর্ড তো ভাঙার জন্যই গড়া হয়। আর আমার তো মনে হয়, কেউ না কেউ অচিরেই আমার রেকর্ডগুলো ঠিক ভেঙে ফেলবে।

বোল্ট এ সময় বলেন, শুধু অ্যাথলেট নয়, তিনি সবাইকে সবসময় কেবল এই কথাটাই বলতে চেয়েছেন যে, তারা যেন তাকে দেখে অনুপ্রাণিত হয়। কঠোর পরিশ্রম করে এবং নিজেকে কাক্সিক্ষত গন্তব্যে নিয়ে যেতে কোনো অবস্থাতে পিছ পা না হয়।
ক্রীড়াবিদদের ডোপ গ্রহণে নিরুৎসাহিত করে জ্যামাইকান তারকা বলেন, ডোপ কখনো কোন ক্রীড়াবিদকে সাহায্য করে না, বরং সর্বনাশ ডেকে আনে। অবসর গ্রহণের পর কেমন কাটছে দিনকাল? কোনো হতাশা কি ঘিরে ধরেছিল? বোল্ট এসব প্রশ্নের জবাবে বলেন, অবসরের পর আমার তো ব্যস্ততা বেড়ে গেছে। আমি প্রচুর ভ্রমণ করি। ঘরে বসে থাকার সময়ই পাই না। সত্যি বলতে গেলে অবসরের পর থেকে এখনো পর্যন্ত ভালই আছি।
অবসরের সময় আমি জনতাম এই লড়াই, এই দর্শক উপস্থিতি আর দেখতে পাবো না। তবে এক জীবনে যা কিছু পেয়েছি তাতেই আমি সন্তুষ্ট। বোল্ট ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগের অন্যতম সেরা ক্লাব ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে যোগ দিচ্ছেন এমন একটা গুজব শোনা যায়। সেটাকে উড়িয়ে দিয়ে তিনি বলেন, ওরকম কিছু এখনো ঘটেনি। তবে ফুটবলের বিষয়ে আমি খুবই সিরিয়াস। ম্যান ইউর সঙ্গে তার ভবিষ্যতে একটা সম্পর্ক গড়ে উঠলে উঠতেও পারে বলে মন্তব্য করেন বোল্ট।