বঙ্গবন্ধু আগেই জিয়াউর রহমানকে চিনতে পেরেছিলেন : সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী

5901

॥ আতাউর রহমান ॥
ঢাকা, ১৪ আগস্ট, ২০১৮ (বাসস): বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর নৃশংস হত্যাকান্ডের আগেই জিয়াউর রহমানকে চিনতে এবং তার উচ্চাভিলাসী মনোভাব সম্পর্কে জানতে পেরেছিলেন। আর এ কারণেই, জেনারেল সফিউল্লাহকে দ্বিতীয় দফায় সেনা বাহিনীর প্রধান করায় ক্ষিপ্ত হয়ে জিয়া পদত্যাগ করতে চাইলে বঙ্গবন্ধু তৎকালীন প্রতিরক্ষা প্রতিমন্ত্রী নুরুল ইসলাম চৌধুরীকে তার পদত্যাগপত্র গ্রহন করতে বলেছিলেন।
প্রয়াত নুরুল ইসলাম চৌধুরী ১৯৯৪ সালের ২৬ মার্চ দৈনিক আজাদী পত্রিকার ‘নৃশংস পনেরই আগস্টের পূর্বাপর’ শীর্ষক এক নিবন্ধে এই তথ্য প্রকাশ করেন।
নুরুল ইসলাম চৌধুরী লেখেন ’৭৫-এর ১৫ আগস্টের নৃশংস ঘটনার কয়েকদিন আগে জেনারেল সফিউল্লাহকে দ্বিতীয় দফায় সেনা বাহিনীর প্রধান করায় ক্ষিপ্ত হয়ে জিয়াউর রহমান তার সঙ্গে দেখা করে সেনাবাহিনী থেকে পদত্যাগ করার কথা জানান। নুরুল ইসলাম এই ঘটনা বঙ্গবন্ধুর কাছে জানালে তিনি জিয়াকে একজন উচ্চাভিলাষী ও ধৈর্যহীন ব্যক্তি বলে উল্লেখ করেন এবং জিয়ার পদত্যাগ পত্র গ্রহণ করতে বলেন। বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে ১৯৭৫ সালের পহেলা সেপ্টেম্বর থেকে তার পদত্যাগ পত্র গৃহীত হত।
জিয়াউর রহমানের ক্ষিপ্ততা সম্পর্কে নিবন্ধে আরো বলা হয়, বাকশালের সদস্যপদ না পেয়ে এবং জেনারেল সফিউল্লাহকে সেনা বাহিনীর প্রধান করায় জিয়া ক্রমেই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন এবং প্রতিরক্ষা প্রতিমন্ত্রীর কাছে নানা অসন্তোষের কথা জানান। নুরুল ইসলাম চৌধুরী তার নিবন্ধে বলেন, ‘স্বাধীনতা লাভের পরে খসড়া সংবিধান প্রণয়ন কমিটির সদস্য হিসাবে নাখালপাড়া সংসদ হোষ্টেলে ১৯৭২ সালে আমাকে প্রায় ৭/৮ মাস থাকতে হয়। তখন জেনারেল জিয়া আমার হেষ্টেলে চা পানের মাধ্যমে অনেক আলোচনাই করতেন। জিয়া দুঃখ করতেন তার কার্যকলাপোর সঠিক মূল্যায়ন হয়নি। জিয়া নাকি জনাব সফিউল্লাহর ব্যাচমেট হিসেবে উপরের দিকে ছিলেন এবং এই আইনত সেনাবাহিনী প্রধানের বাহিনীর পদটি তার পাওয়া উচিত ছিল।’
নিবন্ধে নুরুল ইসলাম চৌধুরী আরো বলেন, জেনারেল শফিউল্লাহকে তিন বৎসর মেয়াদান্তে আরও তিন বৎসরের জন্য সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান নিযুক্ত করায় জিয়া অত্যন্ত দুঃখিত ও বিপর্যস্ত হয়ে আমাকে তার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করতে বলেন ও প্রতিরক্ষা সচিবকেও তা জানান। আমি তাকে ২/১ দিন অপেক্ষা করতে বলেছিলাম। পরে আমি বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করে জিয়ার পদত্যাগের ইচ্ছা ব্যক্ত করলাম।
বঙ্গবন্ধু অত্যন্ত রাগান্বিত হয়ে আমাকে বললেন ‘তুমি এখনই তার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করে আমার কাছে পাঠিয়ে দাও। তুমি জানো না জিয়া অত্যন্ত উচ্চাভিলাসী। ও আরও অনেককে দিয়ে বাকশালের সদস্য হবার জন্য আমার কাছে সুপারিশ করেছে। সে ধৈর্য ধরতে জানে না। আমি বর্তমানে সশস্ত্র বাহিনীর প্রধানদেরই সদস্য করেছি। পরে তাকেও হয়তো করবো।
এই কথা বলার পর আমি বঙ্গবন্ধুকে অনুরোধ করেছিলাম জিয়াকে পদাতিক বাহিনীর কাঠামো বিন্যাস করার জন্য আমার আরো কিছুদিন দরকার এবং ১লা সেপ্টেম্বর ‘৭৫-এ তার পদত্যাগ গ্রহণ করে আপনার আদেশের জন্য পাঠিয়ে দেব। বঙ্গবন্ধু আমাকে ছোট ভাইয়ের মতো ¯েœহ করতেন। তিনি বললেন, তুমি যা ভালো বুঝো তাই করো। এটি ছিল আগষ্টের প্রথম দিকের ঘটনা।’
নূরুল ইসলাম বলেন ‘বঙ্গবন্ধুর সাথে কথা বলে জিয়াকে আমি আমাদের কথোপকথনের সব কথা না বলে তাকে বললাম, রাষ্ট্রপতি শফিউল্লাহর নিযুক্তির ব্যাপারে বর্তমানে কিছু করতে চান না। আমি জিয়াকে জানালাম -তার পদত্যাগপত্র ১ সেপ্টেম্বর গ্রহণ করা হবে এবং পদত্যাগের পূর্বে পদাতিক বাহিনীর কাঠামো বিন্যাস চূড়ান্ত করার জন্য সহযোগিতা কামনা করি। জিয়া সাহেব আমাকে বললেন যে তার কোন জমানো টাকা নেই। সামরিক বাহিনী থেকে অবসর গ্রহণ করার পর যে টাকা পাবেন তা দিয়ে ছোটখাটো ব্যবসা করতে চান।’
তিনি বলেন, জিয়ার বাংলাদেশের রাজনীতিকে কলুষিত করার পরিকল্পনা ছিল। তিনি বলেতেন, ‘আমি রাজনীতিবিদদের জন্য রাজনীতি অত্যন্ত কঠিন করে দিবো’ এবং পরবর্তীতে তিনি তাই করেছিলেন।
নূরুল ইসলাম তার নিবন্ধে বলেন, ‘জিয়া উচ্চাভিলাসী ছিলেন এবং ব্যক্তিগতভাবে সৎ বলেও তার গর্বও ছিল। কিন্তু আমার মনে হয়- তিনি মনের দিকে থেকে সম্পূর্ণ বিবেকবান ছিলেন না। আমাদের দল আওয়ামী লীগের প্রতি জেনারেল জিয়ার বিদ্বেষ ছিল। আমাদের সংগঠনের নেতৃবৃন্দের উপর জেল-জুলুম চলে এবং আমরা যারা মন্ত্রী বা সংসদ সদস্য ছিলাম তাদের সম্পত্তির হিসাব দাখিল করতে হয়। রাজনীতি ও ছাত্ররাজনীতি সম্পূর্ণ কলুষিত করার জন্য তিনি দায়ী।’